সমাবেশের অনুমতি নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার : ৬ দিন আগে ঘোষিত সমাবেশের অনুমতি প্রদানে পুলিশ টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহম্মেদ বলেছেন, দেশের বিদ্যমান বিকৃত শাসনের প্রতিফলন ঘটছে। অবিলম্বে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার জন্য মহানগর পুলিশের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
রিজভী আহম্মেদ বলেন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির ঘোষিত শান্তি সমাবেশকে নিয়ে পুলিশ টালবাহানা করছে। এই কর্মসূচি অনুষ্ঠানের অনুমতি প্রদানে তাদের (পুলিশ) গড়িমসি করা দেশের বিদ্যমান বিকৃত শাসনের প্রতিফলন বলে বিএনপি মনে করে। এতে রাষ্ট্রের অমানবিক চেহারাটাই ফুটে উঠে।
আমরা আবারো পুলিশ প্রশাসনকে বলতে চাই, ১৩ নভেম্বর (রোববার) বিএনপির সমাবেশের অনুমতি প্রদানে কোনো প্রকার টালবাহানা-গড়িমসি না করে আজকেই অনুমতি প্রদান করুন। আপনারা আওয়ামী লীগের নয়, জনগণের সেবক হিসেবে আইনানুগ আচরণ করুন। আমরা নিশ্চিত আপনারা আজকেই বিএনপিকে সমাবেশ সফল করতে আমাদেরকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবেন।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে প্রথমে বিএনপি ৭ অথবা ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চেয়ে মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠি দেয়। পরে ডিএমপির কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অন্যান্য রাজনৈতিক দল একই দিন সমাবেশের অনুমতি চাওয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় কোনো দলকে সেখানে সমাবেশ করতে দেবে না বলে ঘোষণা দেন।
এরপর বিকল্প স্থান হিসেবে বিএনপি ৮ নভেম্বর নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ফের চিঠি দেয় ডিএমপিকে। কিন্তু সেই চিঠি তারা পায়নি বলে সেখানে সমাবেশ করতে না দিলে ৮ নভেম্বর সকালে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফের ১৩ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তবে মহাসচিবের সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুর দেড়টায় ২৭টি শর্ত সাপেক্ষে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভার অনুমতি দেয় পুলিশ যা, বিএনপি প্রত্যাখ্যান করে।
রুহুল কবির রিজভী ক্ষোভের সাথে বলেন, আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ও তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভয় ও শঙ্কার রোগে ভুগছে। মানুষের জমায়েতের কথা শুনলেই তারা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে, শঙ্কিত হয়ে উঠে। কারণ বিরোধী দল আয়োজিত এই ধরণের গণজমায়েতে সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ফুটে উঠে। এই আশঙ্কায় সরকার পুলিশকে দিয়ে বিরোধী দলের সংবিধান স্বীকৃত কর্মসূচিকে নস্যাৎ করে চলেছে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রশ্ন হচ্ছেÑ পুলিশ কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছে? ক্ষমতাবিলাসীদের স্বার্থপরতা রক্ষায় পুলিশ কেন ভূমিকা রাখছ? দেশকে কেনে সর্বনাশশের ধাক্কায় অতল গহবরের দিকে তারা ঠেলে দিচ্ছে? পুলিশ যদি এ ধরণের অগণতান্ত্রিক, অনিয়মতান্ত্রিক, বেআইনি ও সংবিধান বিরোধী ভূমিকা অব্যাহত রাখে তবে জনগণের কাছে তাদের একদিন জবাবদিহি করতেই হবে।
ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায় ও গাইবান্ধায় সাঁওতাল আদিবাসীকে হত্যাসহ সংখ্যালঘুদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের হামলার নানা ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে সরকারের আবারো পদত্যাগের দাবিও জানান রিজভী।
বিভেদ-বিভাজনের সর্বনাশা নীতি গ্রহণ করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সার্জিক্যাল অপরারেশন চালাচ্ছে। নাসিরনগরের ঘটনা যে স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীর কোন্দলের বর্হিপ্রকাশ তা আর কারো জানতে বাকী নাই। কয়েকদিন আগে গাইবান্ধায় সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের গুলিতে নির্মমভাবে ৪ জন সাঁওতাল আদিবাসী হত্যা হয়। ক্ষমতাসীনদের এসব ঘটনা ও কুকীর্তি একাত্তরের হানাদার বাহিনীর বর্বতার সাথেই শুধু তুলনা করা যায়। আমরা এহেন ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, আব্দুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, আমিরুল ইসলাম আলিম, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মহিলা সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন