বেনাপোল অফিস : খুচরো ১০০ টাকার নোটের জোগানে হিমশিম খাওয়ায় বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিযেছে। পণ্য রফতানিতে চরম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে সে দেশের ব্যবসায়ীদের। তার জেরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ঘাটতিও দেখা দিয়েছে।
রপ্তানিকারকদের দাবি, এই সমস্যার জন্য অনেকে বাংলাদেশে মালামাল পাঠাতে পারছে না। বাজারে নতুন ৫০০ ও ২ হাজার টাকার নোট পর্যাপ্ত না পাওয়া পর্যন্ত এই সংকট চলবে। রপ্তানিকারকদের দাবি, এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৪০০- ৫০০ ট্রাক মালামাল রফতানি হচ্ছে ভারতে। ৫০০ এবং হাজার টাকার নোট বাতিল হওয়ায় রপ্তানি এবং আমদানি দু’টি ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি হয়েছে।
কোথায় সমস্যা? ব্যবসায়ীদের কথায়, রপ্তানি করতে গেলে নগদ টাকার প্রয়োজন। যেমন, বন্দরের পার্কিং ফি দেয়া, বন্দর মাসুল দেওয়া, ট্রাক চালককে টাকা মেটানো, কাউকে অগ্রিম টাকা দেওয়া, মালাপত্র ওঠানো-নামানোর জন্য লেবারদের টাকা মেটানোসহ একাধিক জায়গায় নগদ অর্থের দরকার হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৫০০ এবং হাজার টাকার নোটই প্রচলিত ছিল। কিন্তু, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১০০ টাকার খুচরো নোটের আকাল দেখা দিয়েছে।
বুধবার সকালেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রাপোল বন্দরে নোটিস জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, ৫০০ এবং হাজার টাকা গ্রহণ করা হবে না। ফলে, বন্দর কর্তৃপক্ষকেও ১০০ টাকার খুচরো দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের দাবি, রপ্তানির জন্য যে মাল কেনা হয় ৫০০ এবং হাজার টাকার নোট বাতিল হলেও অনেকে অনলাইনে মাল কিনছেন। কিন্তু, সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে যে সকল জিনিস কিনে রপ্তানি করা হয় সেই ক্ষেত্রে তাদের নগদ দিতে হয়। কারণ, চাষীদের অনেকেরই অ্যাকাউন্ট নেই। ফলে চেক দেওয়া যায় না এবং অনলাইনেও পেমেন্টও করা যায় না। সেখানেও সমস্যা হচ্ছে। মাল কম কিনতে হচ্ছে।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিায়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং স্টাফ ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোশিয়েশেনর সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ৫০০ এবং হাজার টাকার নোট বাতিল হওয়ায় সাময়িক সময়ের জন্য আমাদের রপ্তানি ও আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে। বহু ব্যবসায়ী পর্যাপ্ত মাল কিনতে পারছেন না। অনেকে কাঁচামাল রপ্তানি বন্ধ রেখেছেন। বৃহস্পতিবার ব্যাংক খুললেও অনেকেই প্রয়োজন মতো টাকা তুলতে পারেননি। অল্প কিছু পেয়েছেন। যা দিয়ে রপ্তানি-আমদানির মতো বড় ব্যবসা করা মুশকিল। সব মিলিয়ে একটা সমস্যা চলছে।
নতুন ৫০০ এবং দু’হাজার টাকার নোট পর্যাপ্ত বাজারে আসার পরই এই সমস্যা মিটবে।
অন্যদিকে, এদিন বিভিন্ন ব্যাংকে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন গ্রাহকেরা। বাতিল হওয়ায় ৫০০ এবং হাজার টাকার নোট বদলে চার হাজার টাকা পাওয়ার কথা বলা হলেও পশ্চিমবঙ্গের কাঁকিনাড়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গ্রাহকদের দু’হাজার টাকা করে দিয়েছে। তা নিয়ে ক্ষোভ আছড়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গের খড়দহের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেও একই ঘটনা
ঘটে। এমন কী, দু’এক জায়গায় নিজেদের মধ্যে হুড়োহুড়িতে ব্যাংকের ভিতর গ্রাহকদের মধ্যে হাতাহাতিও বেধে যায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। অনেক বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রী নগদ টাকার অভাবে বাংলাদেশে দ্রুত ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশী আমদানিকারকরা ভারতে গিয়ে টাকার অভাবে মালামাল না কিনে ফিরে আসছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তীতে আবার ভারতে গিয়ে মালামাল আমদানি করবে বলে আমদানিকারক মুসলিম উদ্দিন জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন