নারীদেরকে তিনি সর্বাঙ্গীণ সম্মান ও মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। নারীদেরকে তিনি পুরুষদের সঙ্গে কেবল সমঅধিকার নয়, বরং মান-মর্যাদার দিক থেকে তাদেরকে পুরুষদের উপরে স্থান দেন। নারীদেরকে তিনি সকল অধিকার প্রদান করেন যার মধ্যে মোহরের অধিকার, ভরণ-পোষণের অধিকার, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অধিকার সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
অধিকার শুধু প্রদান করলেই হয় না; বরং তা বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। অধিকার প্রদান করে তার বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক। অধিকার প্রদান করে তার বাস্তবায়ন না করা মারাত্মক প্রতারণার শামিল। নবী করীম (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব জাতিকে সকল প্রয়োজনীয় অধিকার শুধু প্রদান করেননি, বরং সবকটি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বাস্তবায়ন করেন। উপরন্তু, পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে যে, যদি কোন ব্যক্তি অপরের সঙ্গে প্রতারণা করে এবং অন্যের অধিকার হরণ করে তাহলে পরকালে তাকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ইসলামে যে সকল মানবাধিকারের কথা বলা হয়েছে এগুলো পূর্ণাঙ্গ, সার্বজনীন, শাশ্বত ও চিরন্তন। সুতরাং ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকারের ধারণার আন্তর্জাতিকীকরণ করেছে এ বক্তব্য সত্যে অপলাপ বৈ কিছু নয়। তাছাড়া ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রণীত সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র মানবাধিকারকে সার্বজনীন করেছে এ ধরনের বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা। মানবাধিকারের পরিপূর্ণ রূপ দিয়েছে ইসলাম, মানবাধিকারের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেছে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।
মানবাধিকারকে সার্বজনীনতা, শাশ্বত আর চিরন্তন রূপ দিয়েছে আল-কুরআন এবং আল-কুরআনের পথ ধরে মদীনা সনদ, বিদায় হজ্জের ভাষণ, নবীজীর সুন্নাহ ও হাদীস। সুতরাং মানবাধিকার আইনের প্রথম এবং একমাত্র পূর্ণাঙ্গ রূপদাতা মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষে তাঁর পেয়ারা নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।
বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে আমরা দেখেছি পাশ্চাত্য জগত মানবাধিকার সম্পর্কে টুকটাক বুঝতে শিখেছে ত্রয়োদশ শতক থেকে এবং তাদের স্বীকৃতি মতেই মানবাধিকারের ধারণা তাদের মধ্যে ‘সার্বজনীন’ হিসেবে এসেছে এই তো মাত্র সেদিন বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে। আবার তাদের মানবাধিকার আইনের ক্রমবিকাশ আলোচনা প্রসঙ্গে আমরা দেখেছি, তাদের এ ধারণা সকল মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসাবোধ থেকে আসেনি। তাদের মানবাধিকারের ধারণার স্বরূপ যতটা না মানবিক, তার চেয়ে বহুলাংশে রাজনৈতিক। অথচ আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সকল মানুষের প্রতি কেবল শ্রদ্ধা ও ভালবাসাবোধ থেকে সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য পূর্ণাঙ্গ মানবাধিকারের পুরোপুরি নিশ্চয়তা প্রদান করেন এবং তিনি এ মহতী কাজের আঞ্জাম দেন আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে। পাশ্চাত্য সভ্যতার ধারক (খড়ঁরং ঐবহশরহ) মানবাধিকারের ধারণাকে বর্তমান সময়ের ধারণা বলে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে সত্যের বিন্দুমাত্র লেশটুকুও নেই। সার্বজনীন এবং পরিপূর্ণ মানবাধিকারের গোড়াপত্তন করেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তা করা হয় নবীজীর পবিত্র জীবদ্দশায়। মদীনা রাষ্ট্রে তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমস্ত অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করেন। শুধু মদীনা নয়, বরং মদিনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সমস্ত মুসলিম বিশ্বের কোথাও কোন মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না। প্রিয়নবী (সা.) সকল মানুষের সকল অধিকার ও চমৎকারভাবে প্রতিষ্ঠা করেন যার তুল্য দৃষ্টান্ত আর নেই। আজ জাতিসংঘ সনদ বা সার্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র মানুষের অধিকার সম্বলিত যে সকল নীতি প্রবর্তন করেছে তা মানব মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রদত্ত শিক্ষা ও আদর্শের ছিটেফোঁটা মাত্র। তবে ছিটেফোঁটা নয়, বরং নবীজীর আদর্শের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের মাধ্যমেই গোটা বিশ্বের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল সম্ভব। কিন্তু পাশ্চাত্য জগৎ মানবাধিকার আইনে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অবদানকে অস্বীকার করে উপরন্তু যদি এই বলে প্রচারণা চালায় যে, (ঐঁসধহ ৎরমযঃং রং ঃযব রফবধ ড়ভ ড়ঁৎ ঃরসব) অর্থাৎ মানবাধিকার হল আমাদের সময়ের ধারণা’’- তাহলে তা কত বড় মিথ্যাচার এবং কত দুঃখজনক এবং এ মিথ্যাচার যদি গোটা মুসলিম জাতিকে আহত না করে। নবী প্রেমিকরা যদি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয়, তাহলে তা হবে আরও দুঃখজনক, অধিকতর লজ্জাকর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন