রহমত, মাগফেরাত ও নরকের জীবন থেকে মুক্তি লাভের অপার সম্ভাবনা নিয়ে প্রতি বছর মুমিনের কাছে হাজির হয় মাহে রমজান। রমজান আসে মুমিন বান্দার তাকওয়ার উত্তাপ বাড়াতে যাতে করে ব্যক্তি সকল প্রকার অন্ধকার,অকল্যাণ থেকে নিজের আত্মা ও বাহ্যিকতাকে বিমুক্ত রেখে নিজেকে আত্মশুদ্ধিতা দিয়ে ঢেলে সাজাতে পারে। ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে সিয়াম পালনের মাধ্যমে নিজেকে আখেরাতের সফল মানুষদের তালিকায় একধাপ এগিয়ে নিতে পারে।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা/সাওম হচ্ছে তৃতীয় স্তম্ভ।রমজানের রোজা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরি (৬২৪ খি.) শাবান মাসে রোজা শব্দটি ফারসি। এর আরবি পরিভাষা হচ্ছে সওম, বহুবচনে বলা হয় সিয়াম। সওম অর্থ বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা। পরিভাষায় সওম হলো আল্লাহর সন্তুটি কামনায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তসহকারে পানাহার থেকে বিরত থাকা।সাওম শব্দটি বাংলা, ফারসি, উর্দু, হিন্দি ভাষায় রোজা হিসেবে ব্যবহার হয়।
সাওমকে অনেকে রোজাও বলে থাকে। রোজা শব্দটি ফারসি। সাধারণত আমাদের বাংলাদেশে ‘রমজানের রোজা’ বলা হয়ে থাকে। রমজান আরবি শব্দ যা ‘রমদুন’ থেকে এসেছে। পুড়িয়ে ফেলা, শেষ করে দেওয়া। পিপাসার কঠিন অবস্থায় পেটের জ্বালাকে রমজান বলে। রমজানের রোজজ যেহেতু একজন ব্যক্তির গুনাহ জ্বালিয়ে শেষ করে দেয় তাই তাকে রমজান হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। আরবি বারোটি মাসগুলোর মধ্যে আল্লাহ তায়ালা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন । তবে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ঘটনা ও আলাদা নিয়ামত ভিন্ন ভিন্ন মাসে দান করে বিশেষ কিছু মাসের মর্যাদাকে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছেন।তারমধ্যে রমজান মাস অন্যতম। রমজানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসে আমাদের জীবন বিধান,পৃথিবীর একমাত্র নির্ভুল কিতাব পবিৎ কুরআন আল্লাহ তায়ালা এই রমজান মাসেই নাযিল করেছন।শুধু তাই নয় আল্লাহ্ তাআলা পূর্ববর্তী অধিকাংশ কিতাব এই রমজান মাসেই নাজিল করেছেন।
রামাযান মাস, যে মাসে বিশ্বমানবের জন্য পথ প্রদর্শন এবং সু-পথের উজ্জ্বল নিদর্শন এবং হক ও বাতিলের প্রভেদকারী কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। (বাকারা-১৮৫)। হাদিসের বর্ণনা হলো মুসলমান জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর সহিফা রমজানের ১ তারিখে, তাওরাত রমজানের ৬ তারিখে,জাবুর রমজানের ১২ তারিখে, ইঞ্জিল রমজানের ১৮ তারিখে এবং পবিত্র কোরআন কদরের রাত্রিতে নাজিল হয়েছে। যখন রমজান মাসের আসতো তখন আল্লাহর রাসূল সাঃ অনেক বেশি খুশি হতেন এবং সাহাবাদেরকে ডেকে বলতেন তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমজান এসেছে। এ মাসে আকাশের দরজা সমূহ খুলে দেওয়া হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো,অভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করে রাখা হয়,এ মাসে রয়েছে একটি মাস যা হাজার রাতের চেয়েও উত্তম। (নাসায়ি-২১০৫)।
রমজানের মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সিয়াম বা রোজা পালন করা। হজ্জ যেমন জিলহজ মাসের সাথে থাকার কারণে জিলহজ মাসের মর্যাদা বেড়ে গেছে ঠিক তেমনি সিয়াম রমজান মাসে হওয়ার কারণে রমজান মাসের দাম অনেক বেশি বেড়ে গেছে। রমজানের মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সিয়াম বা রোজা পালন করা।আল্লাহ তায়ালা বলেন,
হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমাদের পূর্ববতী লোকদের ন্যায় তোমাদের উপরও সিয়ামকে অপরিহার্য কর্তব্য রূপে নির্ধারণ করা হল যেন তোমরা সংযমশীল হতে পারো। (বাকারা-১৮৩)। রমজান মাসের মূল কাজের মধ্যে আরেকটি কাজ হলো অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করা কারণ এ মাসেই পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে। কুরআন নাজিলের মাসে বেশি পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করাই সর্বোত্তম কাজ।শুধু তেলাওয়াত না,তেলাওয়াতের পাশাপাশি কুরআনের অর্থ,তাফসির বুঝা ও নিজের জীবনে আমলের মাধ্যমে নিজেকে একজন প্রকৃত মুত্তাকি হিসিবে গড়ে তোলা।
রোজা ই একমাত্র ইবাদাত যা রিয়া মুক্ত এইজন্যই আল্লাহ তায়ালা নিজেই এর প্রতিদান দিবেন। রোজাদারদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিদান গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রোজদারেরা আলাদা একটা দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে একটি দরজার নাম ‘রাইয়ান’। এ দরজা দিয়ে শুধু রোজাদারগণ প্রবেশ করবে। অন্যরাও এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে চাইবে। কিন্তু রোজাদার ব্যতীত অন্য কাউকে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। (বুখারি ও মুসলিম)।
রমজান মাসে শুধু সিয়াম/রোজা পালন করাই শেষ নয়; বরং রমজান মাসের সাথে উৎপ্রোতভাবে জড়িত আছে আরো অনেক গুলো বিষয়। যেম, রমজান মাসে অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করা কারণ এ মাসেই পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে। কুরআন নাজিলের মাসে বেশি পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করাই সর্বোত্তম কাজ।শুধু তেলাওয়াত না,তেলাওয়াতের পাশাপাশি কুরআনের অর্থ,তাফসির বুঝা ও নিজের জীবনে আমলের মাধ্যমে নিজেকে একজন প্রকৃত মুত্তাকি হিসিবে গড়ে তোলা। এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল ক্বদর, যা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিতে (২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখ) শবে কদর তালাশ করার কথা হাদিসে বলা হয়েছে।
রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ আদায় করা সুন্নাত,রমজান মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ইতিকাফ করা। শরিয়তের পরিভাষায় ইতিকাফ হলো, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় শর্ত সাপেক্ষে নিয়তসহকারে পুরুষেরা মসজিদে ও নারীরা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা। রমজানের শেষ দশক (২০ রমজান থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা পর্যন্ত) ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। বিনা প্রয়োজনে অর্থাৎ গোসল, খাবার, প্রস্রাব–পায়খানা ব্যতীত অন্য কোনো অজুহাতে ইতিকাফের স্থান ত্যাগ করতে পারবে না। ইতিকাফ অবস্থায় কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, নফল নামাজ ইত্যাদিতে মশগুল থাকবে। সুতরাং রমজানের মূল উদ্দেশ্য ই হলো মানুষকে গুনাহ বর্জন,আত্মশুদ্ধি ও ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষকে পরিপূর্ণ তাকওয়াবান হিসাবে গড়ে তুলে জান্নাতি মানুষ বানানো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন