সারাদেশে অধিভুক্ত কলেজগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, আমরা ছাত্র সংসদে, ছাত্র নেতৃত্বে বিশ্বাসী। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব বের হয়ে আসুক সেটি আমরা চাই। কলেজ শিক্ষার মানোন্নয়নে তারা শিক্ষকদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবে সে ব্যাপারে আমরা আগ্রহী। কিন্তু কোনো সংগঠনের নামে কেউ যদি শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করে, পরীক্ষার হলে আধিপত্য বিস্তার করে, অর্থনৈতিক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হয়; সেটি আমরা কোনোমতেই বরদাস্ত করবো না। এসব বিষয়ে অবহিত করলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল শুক্রবার ঝালকাঠি সরকারি কলেজ আয়োজিত সিইডিপি-এর অধীন বাস্তবায়িত সাব-প্রজেক্ট অফিস কার্যক্রম পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়ে ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ছাত্র নেত্বত্ব বা ছাত্র সংসদ- যেটাই হোক। তারা যদি সৃজনশীল কিছু করে, শিক্ষার মানোন্নয়নে কোনো পরিকল্পনা দেয় তাহলে সেটিকে গ্রহণ করতে যেন আমরা অভ্যস্ত থাকি। কিন্তু অর্থনৈতিক, পেশিশক্তি, নিয়মশৃঙ্খলা পরিপন্থী কোন বিষয় যদি তাদের কোনো অবস্থান থাকে তাহলে সে বিষয়ে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অবস্থান অত্যন্ত শক্ত এবং দৃঢ়।
ভিসি বলেন, একজন শিক্ষক ক্লাসরুমে পড়ান। তাকে একসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রণালয়, বোর্ড এবং জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়- এই তিনটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হয়। আমরা একেক সময় একেক নিয়ম করি। এরমধ্যে ব্যাপকভাবে সমন্বয়হীনতা কাজ করে। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে অভিন্ন নীতিমালা করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। এটি করতে পারলে যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে তা কেটে যাবে। মন্ত্রণালয়, বোর্ড এবং জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় মিলে একটা অভিন্ন নিয়ম করবে সেটা শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সব জায়গায় মানা হবে।
শিক্ষা ক্যাডারদের প্রশাসনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনের সক্ষমতার কথা উল্লেখ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি বলেন, ক্যাডার সার্ভিসেও বৈষম্য রয়েছে। বিপিএটিসিতে সব ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ থাকলেও শিক্ষা ক্যাডারের তেমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এটি বৈষম্যমূলক বিষয়। অথচ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণটা আমাদের অপরিহার্য ছিল। তবে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় সিইডিপির আওতায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এটির পরিসর সামনে আরো বাড়বে। এটি খুবই ফলপ্রসূ একটি প্রজেক্ট।
জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষা গ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সংসারটি অনেক বড়। আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে লেখা-পড়া করা হয়তো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা তাদেরকে সেদিকে ঠেলে দিতে চাই না। তাদেরকে আমাদের মধ্যে রেখে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করি। এসব কার্মযজ্ঞ পরিচালনায় আপনাদের কষ্ট হয় এটা সহজে অনুমেয়। তবে এটি একদিকে আমাদের গৌরব। প্রফেসর মশিউর রহমান বলেন, আমরা যদি ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ১২ঘণ্টা কাজ করি, কিংবা যদি ছুটির দিন না পাই, তাহলে কী এমন ক্ষতি হবে! আমি আপনাদেরকে জাতিরাষ্ট্রের স্বার্থে, প্রজন্মের স্বার্থে অনুরোধ করবো এটি আপনারা মেনে নেবেন। কারণ আমাদের এতো বেশি শিক্ষার্থী, যদি সময়মতো পরীক্ষা না নেই তাহলে আবার তারা সেশনজটে পড়বে। আপনাদের ত্যাগের কারণে যদি একজন নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান সময় মতো পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পায়, সেটির যে তৃপ্তি তা অপরিমেয়।
ঝালকাঠি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক ড. অলক কুমার সাহা প্রমুখ।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন