ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় সংশোধন এনে ‘নারী ধর্ষণ’র পাশাপাশি বলাৎকারকে ‘পুরুষ ধর্ষণ’র অপরাধ হিসেবে যুক্ত করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- এই মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রিটের শুনানি শেষে গতকাল রোববার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশ প্রধানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত বছর ১৪ জানুয়ারি রিট করেন সমাজকর্মী ড. সৌমেন ভৌমিক, মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট তাসমিয়া নূহাইয়া আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক ড. মাসুম বিল্লাহ বাদী হয়ে এ রিট করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তাপস কান্তি বল। সরকারপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার শুনানিতে অংশ নেন।
রুলের বিষয়ে তাপস কান্তি বল বলেন, দেশে বলাৎকার তথা পুরুষ ধর্ষণের অপরাধ বেড়ে চলেছে। এ ধরনের নির্যাতনকে ‘ধর্ষণ’র অপরাধ হিসেবে বিচার করা যাচ্ছে না। এ কারণে দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় সংশোধন চেয়ে রিট করা হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত বিবাদীদের প্রতি রুল জারি করেছেন।
এই আইনজীবী উল্লেখ করেন, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে এক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি বলছে, গত বছর দেশে শুধু মাদরাসায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে অন্তত ৫২ শিশু। যার মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ‘ধর্ষণের শিকার’ হয়েছে আরো ১০ শিশু। এ ছাড়া প্রায় সময়ই গণমাধ্যমে খবর আসে ছেলে শিশুদের ‘ধর্ষণের’। তবে শাস্তির বিধানে অনেক অপরাধী ছাড় পেয়ে যায়।
১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় বলা হয়েছে, নারী ধর্ষণ: যদি কোনো ব্যক্তি অতঃপর বর্ণিত ক্ষেত্র ব্যতীত নিম্নোক্ত পাঁচ প্রকার বর্ণনাধীন যে কোনো অবস্থায় কোনো নারীর সঙ্গে যৌন-সহবাস করে, সে ব্যক্তি নারী ধর্ষণ করেছে মর্মে পরিগণিত হবে। ‘প্রথমত তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়ত তার বিনা সম্মতিতে। তৃতীয়ত তার সম্মতি অনুযায়ী, যখন পুরুষটি জানে যে সে তাহার স্বামী নয় এবং সে (নারীটি) এ বিশ্বাস সম্মতি দান করে যে, সে (পুরুষটি) এমন কোন লোক, যার সঙ্গে সে আইনত বিবাহিত কিংবা সে নিজেকে তার সঙ্গে আইনত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করে। পঞ্চমত: তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতীত, যখন তার বয়স ১৪ বৎসরের কম হয়।’ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ছেলে শিশুদের ধর্ষণের বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়নি। শিশু আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে সবাই শিশু। তাই ধর্ষণের শিকার শিশু ছেলে হোক বা মেয়ে; উভয়ের ক্ষেত্রে ওই আইনে বিচার করা যাবে। ১৮ বছরের বেশি বয়সী ছেলেদের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা প্রযোজ্য হবে। সেখানে এই অপরাধকে ‘অস্বাভাবিক যৌনাচার’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে যাবজ্জীবন সাজার বিধান রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন