ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের শোষণ-লুন্ঠন দেশে দুঃসহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে এবং সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই অবস্থায় দেশ ও মানুষের মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই। আজকে মুক্তির একটাই মাত্র পথ সামনে খোলা চীনের মতো একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলতে হবে। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তারও পূর্বে যাদের অবদান আছে তাদেরকে স্মরণ করে, তাদের পথে গিয়ে আমাদেরকে একটা ঘটনা (বিপ্লব) ঘটাতে হবে।
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর গ্রন্থ ‘মাও সে তুং এর দেশে’র নতুন সংস্করণ প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শোভা প্রকাশনী’র এই গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন কবি আবদুল হাই শিকদার। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, সেটা হয়ত সমস্ত মানুষের মুক্তির পথ হবে না। কিন্তু জাতীয় মুক্তির পথ খুলতে হবে। আসুন সেই লক্ষ্যে আমাদের স্বাধীনতার জন্যে, জনগণের অধিকারকে বাস্তবায়িত করবার জন্য, আমরা সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এমন একটা অভ্যুত্থানের সৃষ্টি করি, যে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের মুক্তি অর্জন করতে পারব, দেশের মানুষের মুক্তি অর্জন করতে পারব।
আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ড. আকবর আলি খান, তিনি কিন্তু বিএনপি করেন না। গতকাল তিনি বলেছেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এটা শুধু উনার কথা নয়, এটা অনেকেরই কথা। আজকে পাকিস্তানে এত টারমোয়েলের পরেও দেখেন ওখানে নির্বাচন হবে। কার অধীনে হবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হবে। এই বিষয়গুলোকে বুঝে আমাদের সামনে এগুতে হবে।
বিএনপির নেতা এখন তারেক রহমান মন্তব্য করে দলটির মহাসচিব বলেন, ২০০২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীন সফরে আমাদের সঙ্গে তারেক রহমান সাহেবও ছিলেন। গ্রেট হলের অনুষ্ঠানে গার্ড অব অনার দেওয়ার পরে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পরিচয় পর্বে চাইনিজ প্রাইম মিনিস্টারকে নিয়ে ম্যাডাম যখন একেক করে এগুচ্ছেন। আমার পাশেই ছিলেন আমান উল্লাহ (আমান) সাহেব; তার পাশেই ছিলেন তারেক রহমান সাহেব, যিনি এখন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ম্যাডাম যখন বললেন, ‘হি ইজ মাই সান’। তখন চীনের প্রধানমন্ত্রী হাত বাড়িয়ে অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে হাত ছাড়তেই বললেন, ‘ক্যারি দ্যা ফ্লাগ অব ইউর ফাদার অ্যান্ড মাদার’। এই কথাটা আমি ভুলতে পারি না। এখন বাংলাদেশের গোটা জাতি বলছে, তারেক রহমানকে বলছে, ক্যারি দ্যা ফ্লাগ অব ইউর ফাদার অ্যান্ড মাদার। জিয়াউর রহমান সাহেব যে আদর্শ দিয়ে গেছেন এবং তার যে দর্শন, সেটাকে বেগম খালেদা জিয়া সেই পতাকাকে বহন করে নিয়ে গেছেন। এটা এখন সেই পতাকা তুলে দেওয়ার দায়িত্ব এসেছে তারেক রহমান সাহেবের ওপরে এবং সেই দায়িত্ব তিনি পালন করছেন। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে তিনি, তা পালন করতে সক্ষম হবেন।
দেশের মেগা প্রকল্পগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।
পাঠ্যবইয়ে একজনরই নাম অভিযোগ করে তিনি বলেন, এখন যে পাঠ্য বই সেখানে একজন ব্যক্তি ছাড়া কারও নাম নেই। অর্থাৎ এদেশের স্বাধীনতা, এদেশের সংগ্রাম, এদেশের মানুষের পরিবর্তনের যে ব্যবস্থা, এর কোনটাতেই কারও কোনো অবদান নেই, শুধু একজনের অবদান ছাড়া। এই সরকার- যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে, তারা মওলানা ভাসানীকেও স্বীকার করতে চায় না।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট কালচারাল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সালেহ মাহমুদ রিয়াদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন প্রফেসর মাহবুবউল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নজমূল হক নান্নু, কবি আবদুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর আবদুল লতিফ মাসুম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইফতিখারুল আলম মাসউদ, সাংবাদিক এলাহী নেওয়াজ খান ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন