শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পশুর নদীর খননকৃত বালিতে উদ্বাস্তু হবে ৫ হাজার পরিবার

আদালেতের আদেশ ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

মোংলা বন্দরকে সচল রাখতে পশুর নদী খননে উত্তোলিত বালি খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বাণীয়াশান্তা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ তিন-ফসলি কৃষিজমিতে ফেলানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে তিনশো একর জমি পতিত হওয়ার পাশাপাশি কৃষির উপর নির্ভরশীল অন্ততঃ ৫ হাজার পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। উচ্চ আদালতের আদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা উপেক্ষা করে গৃহীত ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
গতকাল রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাপার পক্ষ থেকে সরেজমিন প্রতিবেদন তুলে ধরে ওই দাবি জানানো হয়। বাপা সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপা মোংলা শাখার আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ। সরেজমিন প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাপা’র সহ-সভাপতি ড. নজরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তৃতা করেন যুক্তরাষ্ট্রের লক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান, বাপা’র কোষাধ্যক্ষ মহিদুল হক খান, নির্বাহী সদস্য এম এস সিদ্দিকী, দাকোপ থেকে আগত স্থানীয় কৃষিজমির মালিক সত্যজিত গাইন ও হিরন্ময় রায়, নারী নেত্রী সুপর্না রায়, বাণীশান্তা ইউপি সদস্য জয় কুমার মন্ডল মানিক প্রমূখ।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে বলা হয়, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে একনেক সভায় অনুমোদিত পশুর নদী খনন প্রকল্পের আওতায় পশুর নদী থেকে প্রায় ২১৬ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালু উত্তোলন করা হবে। ওই মাটি ও বালু দাকোপ ও মোংলা উপজেলার বিভিন্ন খাস ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ফেলানো হবে। এরমধ্যে দাকোপ উপজেলার বাণীয়াশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর জমিতে খননকৃত মাটি ও বালু ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা এখন পশুর নদী পাড়ের মানুষের ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ ওই অঞ্চলের মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষিকাজ। এতে তাঁদের সেই জীবিকা এখন হুমকির মুখে পড়বে।
আরো বলা হয়, বেপরোয়া শিল্পায়নের কবলে থাকা সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন যে সকল এলাকায় উচ্চ আদালত যেকোনো ভরাট ও শিল্প স্থাপন নিষেধ করেছে, মোংলা ও দাকোপ উপজেলায় জেলা প্রশাসন ও বন্দর কতৃক চিহ্নিত স্থানসমূহও সেই এলাকার অন্তর্ভুক্ত। জেলা প্রশাসন ও বন্দর কতৃপক্ষ ইতিমধ্যে স্থানীয় জনসাধারণের ব্যাপক প্রতিবাদ উপেক্ষা করে পশুর নদীর খননকৃত মাটি ও বালু ফেলার মাধ্যমে মোংলার ৭০০ একর জায়গায় বালির পাহাড় গড়ে অসাধু শিল্পপতি ও ব্যাবসায়িদের ইতিমধ্যে সুবিধা করে দিয়েছে।
সুন্দরবন অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে ড. নজরুল ইসলাম বলেন, পশুর নদীর জলজ বাস্তুতন্ত্র জাতিসংঘ স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের সার্বিক বাস্তুতন্ত্রের টিকে থাকা না থাকার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ায় বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি পশুর নদীতে যেকোনো খননকাজ পরিচালনার পূর্বে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষার ব্যাপারে সরকারকে ইতিমধ্যে পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু যথাযথ সমীক্ষা ছাড়াই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলবে। পরিবেশ ধ্বংস করবে। এমনকি বালু ফেলাকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশংকা রয়েছে।
বাপা সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, সরকারি নথিতে বানিয়াশান্তা এলাকায় বালি ফেলাকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশংকার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বিকল্প প্রস্তাবও রয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীও চান না ফসলি জমি নষ্ট হোক। আর এটা তিন ফসলি জমি। যেখানে ব্যাপক ধান ও তরমুজ উৎপাদন হয়। সেখানে একাধিক বিকল্প থাকা সত্ত্বেও জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে শিল্প মালিকদের স্বার্থরক্ষায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন