বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের গত ৭ এপ্রিল পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হয়েছে ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলার। এর ফলে ওই দিন বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নেমেছে ৪ হাজার ৪২৪ কোটি মার্কিন ডলারে। বর্তমান মজুদ দিয়ে সর্বোচ্চ ৪৬ শতাংশ বিদেশী ঋণ পরিশোধ করা যাবে।
এ দিকে কাক্সিক্ষত হারে রফতানি আয়ও বাড়ছে না। এর ফলে রফতানি আয়ের বিপরীতে বৈদেশিক ঋণের অনুপাত বেড়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের জুন মাসে রফতানি আয়ের বিপরীতে বিদেশী ঋণ যেখানে ছিল ১২২ শতাংশ ছিল, গত জুনে এসে বিদেশী ঋণের অনুপাত আরো বেড়ে হয়েছে ২১৩ শতাংশ। সামনে রফতানি আয় না বাড়লে এবং বিদেশি ঋণের লাগাম না টানলে রফতানি আয়ের সাথে বিদেশি ঋণের অনুপাত আরো বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত শুধু বিদেশি ঋণ ছিল জিডিপির সাড়ে ১৫ শতাংশ, গত জুনে এসে তা বেড়ে হয়েছে ১৯.৬ শতাংশ। গত ৬ মাসে ৯২২ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ বেড়ে গেছে। এর ফলে শুধু বিদেশি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে জিডিপির প্রায় ২৬ শতাংশ।
গত সাড়ে পাঁচ বছরে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। অব্যাহতভাবে অন্য দেশ থেকে ঋণ গ্রহণের ফলে টাকার অংকটা বেড়ে গেছে। ২০১৬ সালের জুন শেষে মাথাপিছু বিদেশী ঋণ যেখানে ছিল ২৫৭ মার্কিন ডলার, সেখানে গত ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৫৪১ ডলার। মাথাপিছু এ বিদেশি ঋণ স্থানীয় মুদ্রায় ৪৮ হাজার ৭৪০ টাকা (প্রতি ডলার ৯০ টাকা হিসাবে)।
শুধু মাথাপিছু বিদেশি ঋণই বাড়েনি, একই সাথে বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও কমে গেছে। সাড়ে পাঁচ বছর আগে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দিয়ে যেখানে ৭৩ শতাংশ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা যেত, সেখানে বিদেশি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ডিসেম্বরে তা ৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬ সালের জুন শেষে দেশি-বিদেশি ঋণ ছিল চার হাজার ১১৭ কোটি ডলার। আর পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২১ সালের জুনে এসে তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার ১৫৭ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু গত ৬ মাসে তা ৯২২ কোটি মার্কিন ডলার বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৭০ কোটি মার্কিন ডলার।
এ অস্বাভাবিক হারে দেশের সামগ্রিক বিদেশি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় মাথাপিছু বিদেশি ঋণের অঙ্কও বেড়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের জুন শেষে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ ছিল যেখানে ২৫৭ ডলার, ৫ বছরের ব্যবধানে গত জুন এসে তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয় ৪৮২ মার্কিন ডলার। জুনে এ ঋণ স্থানীয় মুদ্রায় ছিল ৪৩ হাজার ৪৫০ টাকা। জুনের পর ডিসেম্বর শেষে ৬ মাসের ব্যবধানে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৫৪১ মার্কিন ডলার। যেখানে ডিসেম্বর শেষে দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার। স্থানীয় মুদ্রায় ৬ মাসে বিদেশী ঋণ মাথাপিছু ৫ হাজার টাকার বেশি বেড়ে হয়েছে ৪৮ হাজার ৭৪০ টাকা।
মাথাপিছু বিদেশী ঋণই শুধু বাড়ছে না, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দিয়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬ সালের জুন মাসে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থেকে ৭৩ শতাংশ বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা যেত, জুন শেষে তা কমে হয়েছে ৫৬ শতাংশ। জুনে যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল চার হাজার ৬৩৯ কোটি ডলার। ডিসেম্বর শেষে সেখানে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ৯২২ কোটি মার্কিন ডলার, কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ না বেড়ে বরং ৬ মাসে ২৪ কোটি ডলার কমে হয়েছে চার হাজার ৬১৫ কোটি মার্কিন ডলার। দেখা যাচ্ছে, বিদেশী ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে, বিপরীতে কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। এর ফলে আলোচ্য সময়ে মোট রিজার্ভ দিয়ে বিদেশী ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমে ৫১ শতাংশে নেমে গেছে, যেখানে জুনে ছিল ৫৭ শতাংশ।
এখন বিদেশি মুদ্রার মজুদ আরো কমে যাচ্ছে। রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে গেছে। বিপরীত দিকে বেড়েছে পণ্য আমদানিতে ব্যয়। কিন্তু কাক্সিক্ষত হারে রফতানি আয় বাড়েনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি শেষে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৬ শতাংশ, বিপরীতে রফতানি আয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ। কিন্তু রেমিট্যান্স কমে গেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এর ফলে বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রার এ ঘাটতি মেটানোর জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন