শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

রিকশার দখলে রাজধানী

চৈত্রের দাবদাহে যানজটের ফাঁদে কোটি রোজাদার গণপরিবহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সড়কে চলছে প্যাডেল-ব্যাটারিচালিত লাখ লাখ রিকশা ষ দেশে অনেক উন্নতি হওয়ায় যানবাহন-যানজট বেড়েছে : তাজুল ইসলাম ষ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া/ একটি ধানের শিষের ওপরে একটি শিশিরবিন্দু’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। বিশ্ব কবির এই কবিতার পঙক্তিতে নিজ দেশের প্রকৃতিকে খুঁজে পাওয়ার চিত্র এঁকেছেন। কবি যদি এখন ঢাকা শহরের কোনো পাড়া-মহল্লার বসাবাস করতেন, তাহলে লিখতেন ‘ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া/ সড়ক-মহাসড়কে রিকশা রিকশা রিকশা আর যানজট’। পবিত্র রমজান মাসে রাজধানী ঢাকার মানুষকে ঘর থেকে বের হয়েই যানজটে পরতে হয়। হাজার হাজার বৈধ-অবৈধ রিকশা অলিগলিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কাউকে দেখলেই হাঁক ছাড়েন ‘স্যার যাবেন’। হঠাৎ করে রমজানে লাখ লাখ রিকশা ঢাকায় নামায় সড়কে যানজট লেগেই রয়েছে। ফলে পবিত্র রমজান মাসে কর্মজীবী রোজাদারদের দিন শুরু হয় যানজট দিয়ে; শেষও হয় যানজটেই মধ্যেই। ইঞ্জিনচালিত গণপরিবহনের পাশাপাশি পেডেল চালিত রিকশা-ব্যাটারি চালিত রিকশা, ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ও মধ্যম গতির সিএনজি চালিত অটো রিকশা চলাচল করায় এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। শহর কার্যত রিকশার দখলে চলে গেছে। সড়কে দাঁড়িয়ে যেদিকে চোখ যায় চোখে পড়ে শুধু রিকশা আর রিকশা। এ ছাড়াও সড়কে ট্রাফিক পুলিশের অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি পাড়া মহল্লার রাস্তার ফুটপাথে দোকান বাসিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চাঁদা আদায় করায় যানজট লেগেই আছে।

মেট্রোরেল, ফ্লাইওভারের উন্নয়নের জোয়ারে রাজধানী ঢাকা শহর এগিয়ে যাচ্ছে না পিছিয়ে পড়ছে তা গবেষণার বিষয় হয়ে গেছে। মহানগরের যে পাড়ায় থাকুন ঘর থেকে বেরিয়েই রাজধানীবাসীকে পড়তে হচ্ছে যানজটে। এমনিতেই যানজট তারপর হঠাৎ করে প্যাডেলচালিত ও ব্যাটারিচালিত এতো বিপুলসংখ্যক রিকশা রাস্তায় নামতে দেয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গণপরিবহন চালকদের অরাজকতা আর অবৈধ রিকশার কারণে সকাল-বিকেল রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো যেমন যানজটে স্থবির; পাড়া-মহল্লা, গলিঅলিতেও একই চিত্র। ২০ মিনিটের পথ এখন ঘণ্টায় অতিক্রম করা কঠিন। রোজা আর চৈত্রের দাবদাহে যানজটে অতিষ্ঠ জনজীবন। মানুষের প্রশ্নÑ এই ভোগান্তির শেষ কোথায়? কবে মুক্তি মিলবে? রাজধানীতে এতো রিকশা কারা নামালেন?

জানতে চাইলে ডিএমপির মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার তারেক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, অন্যান্য রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। কিন্তু এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে। এতে রাস্তায় রিকশা ও গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও গত ২ বছর করোনা মহামারিতে লকডাউন ছিল। তাই যানজটও ছিল না। এবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কাজও চলছে। এতে করে যানজটের পরিমাণও বেড়েছে। তবে রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করে ব্যবসার ব্যাপারে তিনি বলেন, এবার হকারের তৎপরতা অন্য বছর থেকে অনেক কম রয়েছে। রাজধানীর যানজট নিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন গতকাল বলেছেন, যানজট নিরসনে দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না। আমাদের সরকারি সংস্থাগুলো রাস্তায় গাড়ি রাখে। সরকারের দায়িত্বটা কে নেবে এটা আমি বুঝতে পারলাম না। মন্ত্রী সাহেবরাও তো রাস্তার ওপর গাড়ি পার্কিং করে রাখেন।

গতকাল রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ঢাকা ইউলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘অসহনীয় যানজট : সমাধান কী?’ শীর্ষক সংলাপে অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশে অনেক উন্নতি হওয়ায় যানবাহন বেড়েছে, যানজটও বেড়েছে। বর্তমান সরকার টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। এ ১৩ বছরে অনেকগুলো উন্নতির কারণেই ট্রাফিক সিস্টেম টা, ট্রাফিক সমস্যাটা আমাদের কাছে একটা হেডেক হয়ে গেছে।

স্পট এক. রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া বাসস্ট্র্যান্ড থেকে গোয়ালবাড়ি মোড় তিন থেকে চারশ গজ রাস্তা। জিয়া স্মরণি থেকে বর্ণমালা স্কুল দুশ থেকে আড়াইশ গজ। দুই রাস্তায় প্রতিদিন সকালে যানজট শুরু হলে তা রাত ১১টা পর্যন্ত থাকে। এতটুকু রাস্তায় রাস্তার দুই ধারে শতাধিক ভাসমান খাবারের দোকান। সবজিসহ অন্যান্য দোকান অর্থশত। ব্যাটারি চালিত রিকশা আর ব্যাটারি চালিত শত শত অটোরিকশা চলছে। আশপাশে বর্ণমালা স্কুল, একে স্কুলের দুটি ক্যাম্পাস, আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়, ব্রাইট স্কুল, ধনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, কয়েকটি মাদরাসাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ মহল্লার এ সড়কে সকালে যানজটের শুরু হয় সারাদিন সে যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা দেয়। এখন রমজানে পাশের খাবারের হোটেলগুলো সামনের রাস্তা দখল করে ইফতার নিয়ে বসে। এতে দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাস্তার ওপর এসব দোকান বাসিয়েছে স্থানীয় থানার পুলিশ। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে তারা মাসে কয়েক লাখ টাকা নেন শুধু শনির আখড়ার এই রাস্তার ফুটপাথের দোকান থেকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজান মাসে পুলিশকে আরো বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই অঞ্চলের ফুটপাথের দোকান নিয়ে যাত্রাবাড়ি ও কদমতলী থানা পুলিশের মধ্যে মাঝেমধ্যে চাঁদা উঠানো নিয়ে বিরোধ বেঁধে যায়। একই চিত্র দেখা গেছে যাত্রাবাড়ী, দয়াগঞ্চ সড়কে। সায়েদাবাদের অবস্থা আরো ভয়াবহ। বাসস্ট্রাণ্ড থাকার পরও মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নীচে মূল রাস্তায় কুমিল্লা-চাঁদপুর-নোয়াখালীসহ কয়েকটি জেলা শহরের রুটের বাসস্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। দেখার যেন কেউ নেই।

স্পট দুই. পবিত্র রমজানে প্রতিদিনই ভয়াবহ যানজটের ভোগান্তি পোহাচ্ছে রাজধানীর উত্তরার লাখো মানুষ। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলির সড়কও যানজটে নাকাল হচ্ছে প্রতিদিন। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় রাত দিন সব সময় এয়াপোর্ট থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকছে। মূল সড়কের যানজট বৃদ্ধি পেয়ে উত্তরার সেক্টরের রাস্তায়ও যানজটের সৃষ্টি হয় প্রতিনিয়ত। সেক্টরের মধ্যে রাজলক্ষী থেকে ৫ নম্বর সেক্টরে যাওয়ার রাস্তা, আজমপুর থেকে ১২ নম্বর সেক্টর যেতে লা-বাম্বা থেকে লুবানা হাসপাতাল পর্যন্ত, বাংলাদেশ মেডিকেল থেকে জমজম টাওয়ারের রাস্তায় ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয় প্রতিদিন। এই সড়কে হাউজবিল্ডিং, এয়ারপোর্ট মোড়, জমজট টাওয়ারের মোড়ে শুধুমাত্র ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে। ট্রাফিক পুলিশ কম থাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। আবার উত্তরার সংযোগস্থল দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ রেলগেট, আজমপুর রেলগেট, কসাইবাড়ি রেলগেট, হজ্বক্যাম্প রেলগেট এলাকায় রাতদিন সবসময়ই যানজট লেগে থাকে। এছাড়া তুরাগের কামারপাড়া মোড়ে একই চিত্র দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাগুলো রেললাইন পার হয়ে উত্তরায় ঢুকতে দেয়া হয় না। অটোরিকশাগুলো তাই রেললাইনের ওইপাশে স্ট্যান্ড বানিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে। সরু রাস্তায় অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকা ও মোড় ঘোরানোর ফলে রাতদিন সবসময়ই যানজট লেগে থাকে। রাতের বেলা ওই এলাকাগুলোতে ট্রাক এবং শেরপুর, জামালপুরগামী কিছু যাত্রীবাহি বাস চলাচল করার কারণে যানজটের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এছাড়া রাস্তার পাশে ভ্যানগাড়িতে করে দাড়িয়ে সবজি বিক্রি করে হকাররা। এর ফলে রাস্তা যান চলাচলের জন্য আরও সরু হয়ে থাকে। এসব এলাকায় কোন ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় যানবাহনের কোন শৃংখলা নেই। যে যার মতো রাস্তায় দাড়িয়ে থেকে এমনকি রাস্তা আটকে রেখে যাত্রী তুলে থাকে। ভুক্তোভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যারা রেলগেটের কাছাকাছি এলাকায় থাকেন তারা বেশিরভাগ সময় হেটে বাসায় ফিরেন। কারণ রাস্তায় এতো বেশি যানজট থাকে যে হেটে বাসায় যেতে সময় কম লাগে। বাসা থেকে বের হয়েও রেললাইন পার হয়ে রিকশা নিয়ে উত্তরার মূল সড়কে এসে বাস বা অন্য যানবাহনে গন্তব্যে যান।

শুধু উত্তরা আর যাত্রাবাড়ী নয়, গতকাল রমজানের নবম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ছিল ভয়াবহ যানজট। প্রতিটি রাস্তায় দীর্ঘসময় যানবাহনকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। নিউ মার্কেটে দেখা গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস দাঁড়িয়ে। আজিমপুর থেকে সাইন্স ল্যাবরেটতি ৫ মিনিটের দূরত্ব অতিক্রম করতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। ফার্মগেইট, তেজগাঁও, শান্তিনগর এলাকায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যাত্রাবাড়ী মোড়ে দেখা গেলে শত শত বাসের সঙ্গে হাজার হাজার রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজি ঘোট পাকিয়ে রয়েছে। রমজান মাসে প্রচণ্ড গরমে রোজাদার যাত্রীরা যানজটে আটকে ঘাম মুছছেন। ঢাকা নগর পরিবহন বাসে মোহাম্মদ আকাশ নামের এক যাত্রী বললেন, এ মোড়ে ৪০ মিনিট থেকে বাস আটকে আছে। রমজান মাসে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে রোজাদাররা যাতায়াত করবেন কেমন করে? সাড়ে তিনটার পর অফিস বন্ধ হয়ে গেলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যাবে। শরিফ হোসেন নামের এক যাত্রী জানান, চিটাগাং রোজ থেকে যাত্রাবাড়ী আসতে তার সময় লেগেছে ১৫ মিনিট। আর যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ রেলগেইট পাড় হতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট। ক্ষুব্ধ শরিফ বলেন, অন্যান্য বছর যানজটের কারণে রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। করোনার ক্ষতি পোষাতে এবার তা খোলা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রাস্তায় রিকশায় ভরে গেছে। একদিনে চলার পথে দোকান বসানো হয়েছে; অন্যদিকে বৈধ-অবৈধ হাজার হাজার রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। এবার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় যানজট বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে রাজধানীতে গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ২০১৫ সালে তা কমে হয় ৭ কিলোমিটার। ২০১৭ সালে এ গতি হয়েছে ৫ কিলোমিটার। এখন তা আরও কম। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৭ সালে ঢাকায় গাড়ির গতি শূন্যের কাছাকাছি নেমে যেতে পারে এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

রিকশার কবলে রাজধানী : রাজধানী ঢাকা এক সময় মসজিদের শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে যানজটের শহর, পরিবেশ দূষণের শহর এবং শব্দ দূষণের শহর হিসেবে পরিচিতি পায়। এখন রাজধানী ঢাকা কার্যত রিকশার শহরে রূপলাভ করেছে। সাধারণ রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ব্যাটারিচলিত অটো রিকশায় ভরে গেছে ঢাকা শহর। ইঞ্জিনচালিত গণপরিবহনের পাশাপাশি একই সড়কে ধীরগতির বৈধ-অবৈধ রিকশা চলাচল করায় ঢাকা কার্যত পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হওয়ার পথে। পবিত্র রমজান মাসে প্রচন্ড গরমে রিকশার কারণে যানজটে রোজাদারদের নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

গণপরিরবহন বিশেষজ্ঞদের মতে কোনো আদর্শ মহানগরীতে আয়তনের ২৫ শতাংশ সড়ক থাকতে হয়। ঢাকা মহানগরীতে সড়ক রয়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। মহানগরীর ২ হাজার ২৮৯ কিলোমিটার সড়ক আছে। প্রধান প্রধান সড়কের মধ্যে যন্ত্রচালিত গাড়ি চলাচল করতে পারে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সড়কে। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনাকালের ২ বছরে ঢাকার রাস্তায় ২৫ হাজার নতুন প্রাইভেটকার নেমেছে। রাজধানীতে ২০২১ সালে রেকর্ড সংখ্যক ৯৯ হাজার ৮১০টি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে। অথচ দখল, অপ্রশস্থতা, যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী রাখার কারণে ব্যবহার করতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে ৯৬ শতাংশ সড়কেই বড় যানবাহন চলতে পারে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকা নগরীতে রিকশার সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে এখন রিকশার সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে ৮০ হাজারেও বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা। সাথে আরও ৮০ হাজার আছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক।

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রিকশা চলছে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক পরিচয়ে দলটির অঙ্গসংগঠনের নেমপ্লেট লাগিয়ে হাজার হাজার রিকশা নামানো হয়েছে। একেক এলাকায় একেক সংগঠনের ব্যানারে রিকশা চলছে। প্রতিদিনই ঢাকার রাস্তায় শত শত রিকশা নামে। রমজান মাসে এই সংখ্যা কয়েকগুন বেড়ে গেছে। আগে সাধারণ রিকশা নামানো হলেও এখন মোটরচালিত রিকশাই বেশি নামছে। নগরীতে চলাচলের জন্য রিকশার লাইসেন্স বা নম্বরপ্লেট প্রদানের এখতিয়ার একমাত্র ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের। অথচ সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, রমজানে সামনে ঈদুল ফিরতকে সামনে রেখে আরো হাজার হাজার অবৈধ রিকশা ঢাকার রাজপথে নেমেছে। গ্রামের মানুষ ঈদের আগে ঢাকায় বাড়তি রোজগারের লক্ষ্যে এসব রিকশা চালাচ্ছেন।
সরকারের আরএসটিপির সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর প্রধান সড়ক, বাইলেনসহ বিভিন্ন সড়কের ৯৫ শতাংশেই রিকশার আধিক্য দেখা যায়।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, রাজধানীর বেইলি রোডে সচিবদের জন্য আবাসন করা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে প্রতিদিন সকালে একসঙ্গে ১১৪ জন সচিব-অতিরিক্ত সচিব গাড়ি নিয়ে বের হন। তাদের অনেকে এ সময় সড়কের উল্টো দিকে গাড়ি নিয়ে চলেন, এ সময় যানজট তৈরি হয়। ১১৪ জন সচিব-অতিরিক্ত সচিবকে যদি বিশ্বমানের অত্যাধুনিক বাস বা মিনিবাসে করে সচিবালয়ে নিয়ে আসেন তাহলে ১১৪টি গাড়ি রাস্তায় বের হবে না।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ঢাকায় অনেক মেগাপ্রজেক্ট করা হলেও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সেগুলো কোনো কাজে আসেনি। আমি অনেক বিনিয়োগ করতে পারি; কিন্তু রাস্তা ঠিক নেই, ভূমি ব্যবহারের কোনো পথ আমরা রাখিনি। সে কারণে আমরা এসব প্রকল্পের সুফল পাচ্ছি না। সমস্যা সমাধানে গণপরিবহনের অবকাঠামো বানাতে হবে, গণপরিবহনের ওপর জোর দিতে হবে। ফ্রাঞ্চাইজির আওতায় এসব বাস চালাতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
বাশীরুদ্দীন আদনান ১২ এপ্রিল, ২০২২, ৫:৪২ এএম says : 0
ঢাকার জনসংখ্যা কমাতে হবে
Total Reply(0)
মিনহাজ ১২ এপ্রিল, ২০২২, ৫:০৫ এএম says : 0
শুধু রিকশার কথা বললেন, কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়ি মানে প্রাইভেট কারের কথা বললেন না তো!
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:২৯ পিএম says : 0
ঢাকা এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে
Total Reply(0)
পান্নু ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:৩২ পিএম says : 0
সমস্যা সমাধানে গণপরিবহনের অবকাঠামো বানাতে হবে, গণপরিবহনের ওপর জোর দিতে হবে।
Total Reply(0)
উজ্জল ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:৩৩ পিএম says : 0
ইঞ্জিনচালিত গণপরিবহনের পাশাপাশি একই সড়কে ধীরগতির বৈধ-অবৈধ রিকশা চলাচল করায় ঢাকা কার্যত পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হওয়ার পথে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন