বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

ইফতার : চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ইসলাম

মুফতী মুহাম্মাদ আবিদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৪ এএম

রমজানুল মোবারক একটি মহিমান্বিত মাস। এটি একই সাথে কুরআন নাজিলের মাস ও ইসলামের মৌলিক ইবাদাত সিয়াম পালনের মাস। পবিত্র কুরআনুল কারিম বিষয় দুটির পরিস্কার বিবরণ দেয়া হয়েছে এভাবে রমজান মাস, যাতে কুরআন অবতরণ করা হয়েছে। (কুরআন) মানুষের জন্য হেদায়ত ও সত্য মিথ্যার নির্ণায়ক। অতএব তোমাদের মধ্যে (প্রাপ্ত বয়স্ক) যারা রমজান মাস পাবে সে যেনো রোজা রাখে। সুরা বাকারা আয়াত ১৮৫। একটি মাত্র আয়াতে রমজান মাস ও সিয়াম পালনের বিষয়টি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছ। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে : হে ইমানদারগণ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের (বিশ্বাসী মানুষদের) উপর, যেনো তোমরা পরহেজগার হতে পারো। সুরা বাকারা আয়াত ১৮৩।
কুরআনুল কারীমে রোজাকে মানুষের জন্য পরহেজগার হওয়ার মাধ্যম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সিয়াম মানুষকে সংযমশীল হতে সাহায্য করে। খাওয়া দাওয়া, লেনদেন, থেকে নিয়ে বাতচিত পর্যন্ত জীবনের সর্বক্ষেত্রে রোজাদারকে সংযমশীল হতে গভীরভাবে আহ্বান করে সিয়াম। সিয়াম সাধনা একজন মানুষকে কিভাবে পরহেজগার করে তোলতে পারে এব্যাপারে উলামায়ে কেরাম লিখেন রোজাদার ব্যক্তির মধ্যে একই সাথে ছয়টি বিষয় পরিপূর্ণরূপে পাওয়া গেলে তার রোজা যেমন তাঁকে জাহান্নাম থেকে বেঁচে যাবার ঢাল হয়ে কাজ করবে তেমনি ব্যক্তি জীবনে সে মুত্তাকী বা পরহেজগার হয়ে ওঠবে। বিষয় ছয়টি হলো, (এক) চোখের পরিপূরণ হেফাজত, (দুই) জবানের পরিপূর্ণ হেফাজত, (তিন) জিহ্বার পরিপূর্ণ হেফাজত, (চার) শরীরের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে হরকিসিমের পাপপঙ্কিলতা থেকে পরিপীর্ণ হেফাজত, (পাঁচ) রোজা কবুল হওয়ার ব্যাপারে মজবুত বিশ্বাস আবার কবুল না হবারও ভয় অন্তরে লালন করা এবং (ছয়) ইফতারে হালাল খাবার হলেও অধিক খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
একথা বলা বহুল্য যে রোজাদারের জন্য সাহরী ও ইফতার ইসলামে একটি সুন্নত অথচ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যার পুরোটাই মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরী এবং মুমিনের প্রতি ইসলামের বড় একটি এহসান। জীবনের জন্য জরুরী সাহরী ও ইফতারকে ইসলামে আলাদা ইবাদত হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। হাদিস শরীফে এসেছে তাসহুরু ফাইন্না ফিসসুহুরি বারাকাহ, তোমরা সাহরী খাও কেননা সাহরিতে বরকত নিহিত আছে। ইফতারে তো পরিস্কারভাবে কি খাবে এরও একটি চমৎকার ধারণা দেয়া হয়েছে। হাদিস শরীফে এসেছে হযরত সালমান ইবনে আমির থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি সা. বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা, তাতে বরকত [কল্যাণ] রয়েছে। (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারিমি, মেশকাত: হাদিস নং ১৮৯৩)।
ইফতারে খেজুর খাওয়া একটি মুস্তাহাব আমল। কেউ যদি উদৃত হাদিসের উপর আমল করত: খেজুর দিয়ে ইফতার করে তাহলে ইফতার সোয়াবের পাশাপাশি খেজুর দিয়ে ইফতার করবার জন্যও সে আলাদা সোয়াবের ভাগিদার হয়ে যাবে। এবার আসুন জানা যাক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইফতারে খেজুর খাওয়াকে কিভাবে দেখে। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে একজন মানুষ দীর্ঘ সময় উপোস থাকার পর (রোজার মধ্যে যেটি হয়ে থাকে) খাবার হিসেবে খেজুর গ্রহণ করে তাহলে সে নিচের উপকারগুলো লাভ করতে পারে। (এক) অল্পতেই ক্ষুধা নিবারণ হয়ে যাবে। কেননা খেজুর এমন একটি খাবার যা অল্প হলেও ক্ষুদানিবারণে দ্রুত কাজ করে। (দুই) খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকে বিধায় ক্লান্তির শেষে খেজুর খাওয়া হলে দ্রুত দুর্বলতা কেটে যায়। (তিন) খেজুর হৃদরোগ, জ্বর ও পেটের পীড়ায় উপকারী এবং বলবর্ধক ঔষধ হিসেবে কাজ করে। রোজাদারের ক্ষুধামন্দা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরকরণে খেজুর বিশেষ উপকারী। (পাঁচ) খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারী। ইফতারে খেজুর খেলে গ্যাস সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা যায়। (ছয়) সারাদিন রোজা রাখার পর পেট খালি থাকে বলে শরীরে গ্লুকোজের প্রচুট প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। খেজুর সেটা দ্রুত পূরণে সাহায্য করে।
ইফতারে আরেকটি লক্ষণীয় দিক হলো কম আহার করা। খাদ্য সামগ্রী হালাল হলেও অধিক পরিমাণ না খাওয়া। ইসলাম এমনিতেই মানুষকে অতিরুক্ত খাদ্য গ্রহণে অনুৎসাহিত করে। নবীজি সা.ইরশাদ করেন কাফেরগণ সাত আঁতে আহার করে আর মুমিন আহার করে এক আঁতে। (বুখারী হাদিস নং ৫৩৯৩)। এখানে মূলত মুমিন খাবারে সংযত থাকার কথা বলা হয়েছে। অন্য হাদিসে নবীজি বলেন মানুষের সকল রোগের কেন্দ্র হলো পেট। অতএব তোমরা খাবারে সংযমী হও এতে অধিকাংশ রোগ বালাই থেকো বেঁচে থাকতে পারবে। এছাড়া সারা দিন রোজা রেখে ইফতারে অধিক আহার করা স্বস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষ্য হলো দীর্ঘ সময় ক্ষুদার্ত থাকার পর কেউ যদি সহসা অধিক খাবার গ্রহণ করে তাহলে তার হার্টের সমস্যা হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। শরীর অবস হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যায়ও পড়তে পারে। অন্য দিকে চিকিৎসা বিজ্ঞান আজকের পর্যায়ে উন্নিত হবার শতশত বছর আগে রাসুলুল্লাহ সা. উম্মতকে সারাদিন রোজে রেখে ইফতারে অধিক আহার করা থেকে বারণ করে গেছেন। এতে প্রমাণিত হয় ইসলাম সব সময়েই সমসাময়িক এবং ইসলাম হামেশাই মানুষের কল্যাণের দিকে নজর রাখে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার দ্বীন মজবুতির সাথে পালন করবার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন