বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হাওরে ডুবছে ফল-ফসল

ভারতের উজান থেকে আসছে ঢল : নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত : ৪টি পয়েন্টে বিপদসীমায় কৃষক দিশেহারা, আধাপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে ভারী বর্ষণের কারণে উজান থেকে আসছে পাহাড়ি ঢল। অসময়ের ঢলে দেশের উত্তর-পূর্বের হাওর-বাওর অঞ্চলের নদ-নদীসমূহ ও খাল-বিল-ছরার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুরমা ও সারিগোয়াইন নদী চারটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধনু-বাউলাই নদী নেত্রকোণা জেলায় বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। হাওর অঞ্চলে নদ-নদীগুলোর ২৬টি পয়েন্টে গতকাল শনিবার পানি বৃদ্ধি পায়।

এতে করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ জেলা অর্থাৎ হাওর এলাকার জমিতে ইরি-বোরো আধাপাকা ধান, শাক-সবজি, বাদাম, তিল-তিসি, কাউন, তরমুজসহ মৌসুমী ফল প্রভৃতি ফল-ফসল ক্রমেই ঢল-বানের পানিতে ডুবে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দিশেহারা হাওরের কৃষক। অনেকেই উপায় না দেখে কাঁচা-পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল জানায়, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ জেলায় তথা হাওর অঞ্চলে আকস্মিক বন্যার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। এসব জেলায় আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। পাউবোর কেন্দ্র জানায়, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ জেলায় প্রধান নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য ও পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশের কতিপয় স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার প্রধান নদ-নদীসমূহের পানির সমতল কতিপয় স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রেক্ষিতে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। যার ফলে সুরমা নদী সুনামগঞ্জ জেলায় বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। ধনু-বাউলাই নদী নেত্রকোণা জেলায় কতিপয় পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

গতকাল হাওর অঞ্চলে নদ-নদী প্রবাহের অবস্থা সম্পর্কে জানা গেছে, পাউবোর পর্যবেক্ষণাধীন ৩৯টি স্টেশনের মধ্যে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ২৬টি পয়েন্টে, হ্রাস পায় ১২টিতে এবং পানি অপরিবর্তিত আছে একটি স্থানে। এরমধ্যে গতকাল বিকাল পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে কানাইঘাটে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ও সিলেটে ১৯ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুনামগঞ্জেও সুরমা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৩৮ সে.মি. নিচে এসে গেছে। সারিগোয়াইন নদীর পানি আরও বেড়ে গিয়ে সারিঘাটে ৮৫ সে.মি. ও গোয়াইনঘাটে ৬৯ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, ভানু-বাউলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নেত্রকোণার খালিয়াজুড়িতে বিপদসীমার মাত্র এক সে.মি. নিচে এসেছে। গত শুক্রবার হাওর জেলাসমূহের নদ-নদীর ৩৩টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৬টিতে হ্রাস পায়।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট অঞ্চলের লালাখালে ৫০ মি.মি., লরেরগড়ে ৩৫ মি.মি. এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় প্রদেশের চেরাপুঞ্জিতে ১৩১ মি.মি., দিব্রুগড়ে ৩৯ মি.মি., পাসিঘাটে ৩৪ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এদিকে আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে, যশোর, কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রবল বিজলী চমকানোসহ বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর অঞ্চলসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্র প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন