শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পাল্টে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ৮ লেন মহাসড়কের চেহারা

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উচ্ছেদ অভিযান

প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : ঢাকা-চট্টগ্রাম আট লেনের মহাসড়ক হয়েছিল চার লেনের। দখলদাররা মহাসড়কের উপরেই গড়ে তুলেছিল দোকান, মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। গতকাল রোববার সেইসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলো সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে চলে এ উচ্ছেদ অভিযান। উচ্ছেদের পর পাল্টে গেছে মহাসড়কের চেহারা।
সরেজমিনে যাত্রাবাড়ী থেকে মহাসড়ক ধরে কাঁচপুর পর্যন্ত গিয়ে দেখা গেছে এখনও মহাসড়কের উপরে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। কোনো কোনো স্থানে মহাসড়কের উপরেই অস্থায়ী মোটর গ্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, একে একে সবই উচ্ছেদ করা হবে।
গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম ৮ লেন মহাসড়কে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। মহাসড়কে সাদা দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা লেনের ভিতরের সমস্ত অবৈধ স্থাপনাসহ আশপাশে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জমিতে গড়ে ওঠা সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সকালে শনিরআখড়া বাস স্ট্যান্ডের পূর্ব দিকের বাজারের অভিযান চলে। সেখানে সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে স্থায়ী বাজার নির্মাণ করেছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। বাজারের দক্ষিণে থানা যুবলীগের অফিস।
দখলদাররাই এই অফিস নির্মাণ করেছে বলে জানায় স্থানীয়রা। অভিযানে বাজারের দোকানগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হলেও সেই অফিস রয়েছে অক্ষত। বাজারের কয়েকজন দোকানদার জানান, দুই বছর আগে সড়ক ও জনপথের জায়গায় স্থায়ী বাজার নির্মাণ করে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়। সে সময় বলা হয়েছিল, বাজারের জন্য জায়গাটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কাছে থেকে এমপির লোকজন লীজ এনেছেন। সরল বিশ্বাসে তাই অনেকেই মোটা অংকের টাকা এডভান্স দিয়ে দোকান ভাড়া নিয়েছেন। উচ্ছেদে তাদের মাথায় বাজ পড়েছে। লোকমান নামে একজন কাঁচামাল ব্যবসায়ী বলেন, দুই সপ্তাহ আগেও উচ্ছেদ অভিযানে আমাদের দোকানপাট গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। নেতারা তখনও বলেছিলেন, এমপির সাথে কথা হয়েছে, আর অভিযান হবে না। নেতাদের কথায় বিশ্বাস করে আবার টাকা খরচ করে দোকান তুলি। আজ আবার সব ভেঙ্গে দিয়ে গেল।
শনিরআখড়া ছাড়াও রায়েরবাগ বাস্ট্যান্ড সংলগ্ন বেশ কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর উত্তরে মাতুয়াইল মুরগী ফার্ম রোডের মাথায় মহাসড়কের পাশে সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা বেশ কিছু পাকা, সেমিপাকা ঘর উচ্ছেদ করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মিজানুর রহমান জানান, ৮ লেনের মহাসড়ক দিন দিন দখল হয়ে যাচ্ছিলো। এ কারণেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি জানান, শুধুমাত্র মহাসড়ক নয়, সড়ক ও জনপথের জমিতে গড়ে ওঠা সব ধরনের স্থাপনাই উচ্ছেদ করা হবে।
এদিকে, গতকালের এই উচ্ছেদ অভিযানের পর পাল্টে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ৮ লেন মহাসড়কের চেহারা। দখল হয়ে যাওয়া লেন আবারও ফুটে উঠেছে। যানবাহনগুলো নির্বিঘেœ চলতে পারছে। আলাপকালে কয়েকজন গাড়ি চালক উচ্ছেদ অভিযানের প্রশংসা করে বলেছেন, রাস্তা দখল করতে না দিলে কোনো দিনও এই মহাসড়কে যানজট হবে না। মাঝে মধ্যেই যানজটে আটকে থাকে যানবাহন। তখন যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
গত আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ লেনের এই মহাসড়কটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর দখলদারদের কবলে পড়ে মহাসড়কটি। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা মহাসড়কসহ সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে দোকান-পাট, বাজার ও মার্কেট নির্মাণ করে ভাড়া দেয়। এতে করে ক্রমেই মহাসড়কটি তার স্বকীয়তা হারাতে বসেছিল। ৮ লেনের মধ্যে মহাসড়কের দুই দিকে দুই লেন করে চার লেন প্রায় দখল হয়ে যায়। গতকাল উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর মহাসড়কটি আবার নতুন চেহারায় ফিরে এসেছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন থেকে আট লেনে উন্নীতকরণে একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর ৭ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরত্বের আট লেনের এই মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩২ কোটি টাকা। এটি একদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন এবং অন্যদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে। মহাসড়কটি রাজধানীর সাথে দেশের ১৮টি জেলার যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে আট লেনের মহাসড়ক এই প্রথম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন