বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গতি বাড়ছে অর্থনীতির

প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৭ পিএম, ১৩ নভেম্বর, ২০১৬

তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির গতি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সরকার যা আশা করছে তার চেয়েও বেশি সাফল্য আসছে প্রতিটি খাত থেকে। বর্তমান অর্থনীতির গতি বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের পথেই রয়েছে। যে গতিতে অর্থনীতির উন্নতি ঘটছে তাতে দেশকে মধ্যম আয়ের সারিতে নিতে ’২১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। ২০১৯ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।
দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একমাত্র রেমিটেন্স ছাড়া সব খাতেই ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসাবে, দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ বর্তমানে পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে ভালো। যে কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশের সূচেক এক ধাপ এগিয়েছেও বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি প্রসঙ্গে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ইনকিলাবকে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। বর্তমান উন্নয়নের যে ধারা তাতে আগামী দশ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ এশিয়ার দ্বিতীয় মালয়েশিয়ায় পরিণত হবে। আর আগামী দুই বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। এজন্য ’২১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। বিপুল উন্নয়ন কার্যক্রমের ফল ইতোমধ্যেই দেশের মানুষ ভোগ করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যেসব পরিকল্পনা আছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে ৩০-এর দশকেই বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা ২০টি অর্থনীতির মধ্যে জায়গা করে নিতে পারবে।
একটি দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচক হলো বিনিয়োগ। দেশে বিনিয়োগ যে বাড়ছে তার প্রমাণ হলো, কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বৃদ্ধির কারণে বড় অংকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সামগ্রিক আমদানি বাণিজ্যে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আমদানি বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৭ শতাংশ। এই তিন মাসে সব মিলিয়ে ১০ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এই আমদানি বাণিজ্যের একটি বাড় অংশই ব্যয় হয়েছে শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতির পেছনে।
দেশের সামগ্রিক রপ্তানি বাণিজ্যও বেড়ে চলেছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক এত প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে রপ্তানি খাতে। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এই খাতে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
তবে রেমিটেন্স যে কমে গেছে তা নয়। বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স আসার পরিমাণ বেড়েছে। যে কারণে খাতা-কলমে রেমিটেন্স কমে গেছে। কারণ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে যে প্রবাসী আয় আসে তা হিসাবে থাকে না।
দেশে আমদানি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, দেশে পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলায় সে সব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বাড়ছে। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও বাড়ছে। এক সঙ্গে বাড়ছে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি। কারণ বর্তমানে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক ভালো। বর্তমানে যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে এমন পরিবেশের অপেক্ষায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তারা এখন সেই পরিবেশ পাওয়ায় নতুন উদ্যমে বিনিয়োগে নেমে পড়েছেন। নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হওয়ায় মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়ে গেছে।
এই গবেষক বলেন, শিল্পের জন্য কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বৃদ্ধি মানে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে; দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে।
শুধু যে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগই বেড়েছে তা নয়। দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বেড়েছে বিদেশিদের আস্থা। যে কারণে বিদেশি বিনিয়োগও বেড়েছে আশাব্যঞ্জক হারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৬৪ কোটি ২০ লাখ ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৫৯ কোটি ২০ লাখ ডলার।
দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাওয়া লেগেছে পুঁজিবাজারেও। এতদিনের ঝিমিয়ে পড়া বাজারটি হঠাৎ আড়মোড়া ভেঙে উঠছে। যে বাজারে ৪শ’ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়না গত কয়েক বছরে, সেখানে এখন ৬শ’ কোটি টাকার ওপরেও দৈনিক লেনদেন হচ্ছে।
পুঁজিবাজারে নিট বিদেশি বিনিয়োগও বেড়েছে (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট)। এই তিন মাসে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার যা আশা করছে তার চেয়েও বেশি উন্নয়ন হচ্ছে। যেমন, গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ শতাংশ। অথচ প্রবৃদ্ধি হয়েছে এর চেয়ে অনেক বেশি, ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বেড়ে দেশ হাজার ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সরকার যে হারে দেশে বিনিয়োগ করছে, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাবে। উন্নয়ন কর্মকা-ের সুফল পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। আশাতীত হারে জনগণ দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে আসছে যা দেখে জাতিসংঘও অভিভূত। দেশে এখন মাত্র ১২ দশমিক ৯ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। দেশে উন্নয়নের যে ধারা তাতে ২০২০ সালের আগেই এই হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ৮ শতাংশের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না বাংলাদেশকে। ২০১৮ সালেই আমরা ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবো।
এদিকে বিশ্ব অর্থনৈতিক সূচকেও বাংলাদেশ ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতা নেয় তখন বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬৮তম। আর বর্তমানে বাংলাদেশ ৪৩তম বড় অর্থনীতির দেশ। ক্রয় ক্ষমতার সক্ষমতার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩ তম।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সেরা বিশে জায়গা করে নেবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Rabbi ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৪৩ পিএম says : 0
thanks for this news
Total Reply(0)
Wadud ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৪৫ পিএম says : 0
এত উন্নয়ন !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
Total Reply(0)
Jahid ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৪৭ পিএম says : 0
ata e to amra chai
Total Reply(0)
ইউসুফ ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:৫০ পিএম says : 0
গার্মেন্ট, প্রবাসীদের আয়, রপ্তানী নাকি কমছে, আর আমদানি বাড়ছে। তাহলে কেমনে কি?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন