দুর্যোগপূর্ণ মৌসুম শুরু হলেও উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদ নৌ চলাচল ব্যবস্থা প্রায় অনুপস্থিত। প্রতিনিয়তই অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাটি মেঘনা মোহনা থেকে উপকূলের প্রতিটি নদ-নদী ও মোহনা পাড়ি দিচ্ছে। এমনকি বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরা থেকে ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একবার ভোলার মূল ভূখন্ডে পারাপারের সুযোগ রয়েছে ইজারা দেয়া সরকারি সী-ট্রাক ‘এসটি শেখ কামাল’এর মাধ্যমে।
বিআইডব্লিউটিসি উপকূলে নিরাপদ নৌ চলাচল নিশ্চিতে ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০০৯ সালে ১২টি নতুন সী-ট্্রাক সংগ্রহ করে। এছাড়াও বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটে বিদ্যমান ৪টি উপকূলীয় নৌযানের দুটির পূণর্বাসনসহ ২০০২ সালে চীনা ঋণে আরো ১টি এবং গত বছর সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আরো দুটি উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ করে সংস্থাটি। উপরন্তু বিশ^ ব্যাংকের সুপারিশে উপকূলে নৌপথে যাত্রী পরিবহনে পরিচালন ব্যায়ের ওপর ভর্র্তুকি হিসেবে সরকার প্রতিবছর বিআইডব্লিউটিসিকে ৫০ লাখ টাকা করে প্রদান করে আসছে।
কিন্তু এরপরেও ২০১১ সালের মধ্যভাগ থেকে বরিশালÑচট্টগ্রাম নৌপথে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। অথচ ২০০৯ সালে সরকারি প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে এ রুটের দুটি নৌযান পূণর্বাসন করা হয়। ইতোমধ্যে চীনের সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট লাইনে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যায়ে ১টি নতুন উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ করা হয়। এরপর দু’দফায় মেরামত ও পূণর্বাসনে আরো প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যায় হয়েছে। অফরদিকে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যায়ে গত বছর আরো দুটি নতুন উপকূলীয় নৌযান সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নৌযানের পেছনে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করা হলেও ২০১১ সালে পরে আর বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটে যাত্রী পরিবহন করেনি সংস্থাটি।
অপরদিকে বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর এবং ভোলা-লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তী মির্জাকালু-চর আলেকজান্ডার রুটের সী-ট্রাক সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। বরগুনার চর দোয়ানীর সাথে পিরোজপুরের বড়মাছুয়া হয়ে বাগেরহাটের সন্যাসী পর্যন্ত সীÑট্রাক সার্ভিসের মাধ্যমে অবহেলিত উপকূলীয় এলাকার সাথে রাজধানীর নিরাপদ নৌ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার দাবিও দীর্ঘদিনের।
তবে সংস্থাটির ১৪টি সী-ট্রাকের ৪টি বিক্রির ব্যবস্থা চূড়ান্ত হয়েছে। অপর ১০টির মধ্যে ‘এসটি খিজির-৫’ ও ‘এসটি-খিজির-৮’ ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাট রুটে ইজারাদারের ব্যবস্থাপনায় চলছে। অভিযোগ রয়েছে খিজির-৮ সীÑট্রাকটি বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের জন্য ইজারা নিয়ে সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে তা বরিশালের পরিবর্তে ভোলার ইলিশা থেকে লক্ষ্মীপুর রুটে চালানো হচ্ছে। এছাড়া ‘এসটি শেখ মণি’ হাতিয়া-বয়ার চর রুটে ইজারাদারের ব্যবস্থাপনায় যাত্রী পরিবহন করছে বলে জানা গেছে।
এর বাইরে ‘এসটি-ভাষা শহিদ জব্বার’ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ডকইয়ার্ডে মেরামতে রয়েছে দীর্ঘদিন। ‘এসটি-খিজির-৭’ ২০২০ সালের ১৪ আগষ্ট থেকে ভোলার একটি বেসরকারী নৌ কারাখানায় মেরামতের নামে পড়ে আছে। ‘এসটি শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত’ পাটুরিয়া ঘাটে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পড়ে থাকার পরে সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ রুটে যাত্রী পরিবহনে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ‘এসটি ভাষা শহিদ সালাম’ ও ‘এসটি সুকান্ত বাবু’ নামের দুটি সী-ট্রাকও ইজারাদারের ব্যবস্থাপনায় এতদিন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলের পরে কক্সবাজার ও টেকনাফে পড়েছিল। এ দুটি সীÑট্রাকও সংস্থার হিসেবে ইলিশা-মজু চৌধুরীর হাট রুটে যাত্রী পরিবহনের কথা রয়েছে।
এসব বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা চেষ্টা করছেন উপকূলীয় নৌযোগাযোগ আরো নিরাপদ করতে। ইচ্ছে থাকলেও নানা কারণে অনেক এলাকাতেই সংস্থার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সী-ট্রাক সার্ভিস পরিচালন সম্ভব নয় বলেও তারা মত প্রকাশ করেন।
এদিকে নৌ পরিবহন অধিদফতরের সুপারিশে সরকার প্রতিবছর ১৬ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের উপকূলকে ‘ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ সময়ে ‘উপকূলে নিবন্ধিত ছাড়া অন্য কোন নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ। ইতোমধ্যে উপকূলে নৌযানের চলাচল সীমিত হয়ে গেছে। তবে অনেক এলকাতেই সরকারী বিধি বিধান উপক্ষো করে অবৈধ নৌযানও চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন