যাকাত ইসলামের পঞ্চ ভিত্তির অন্যতম। যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ পবিত্র ও বৃদ্ধি। ইসলামী পরিভাষায় যাকাত বলা হয়: আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য ধনাঢ্য ব্যক্তির সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেয়া। হিজরি দ্বিতীয় সনে মতান্তরে ৪র্থ সনে যাকাত ফরজ হয়। এর আগেও যাকাতের বিধান ছিল। তবে যাকাতের অংশ নির্ধারিত ছিল না। অপর দিকে সাদকাতুল ফিতর পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনার ত্রুটি বিচ্যুতির পরিপূরক ও মহান সত্তার কাছে সিয়াম কবুলের অনন্য মাধ্যম। নিম্নে যাকাত ও সাদকাতুল ফিতর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
যাকাত- বছরের সব খরচাদি নির্বাহ করার পর যদি কোনো ব্যক্তির কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা তার মূল্য অবশিষ্ট থাকে তাহলে ওই ব্যক্তির ওপর যাকাত দেওয়া ফরজ। যাকাত দারিদ্র বিমোচনের শ^াশত বিধান- ইসলাম যাকাত অনুমোদন করে সারাবিশ্বের মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সুস্পষ্ট স্বাক্ষর রেখেছে। যাকাত সুষ্ঠু আর্থিক নীতির বুনিয়াদ, সমাজ কল্যাণের চাবিকাঠি, রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের পৃষ্ঠপোষক। পৃথিবীর যেখানে অর্থ বন্টনে বৈষম্য দেখা দিয়েছে এবং যাকাতের বিধান চালু করা হয়নি, সেখানেই স্বল্পসংখ্যক লোকের হাতে পুঞ্জিভূত হয়েছে বিপুল অর্থসম্পদ আর উত্তরোত্তর সিংহভাগ লোক দারিদ্রের বোঝা মাথায় নিয়ে রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছে।
১৯৮২ সালের ৭ জুন বাংলাদেশ সরকার যাকাত তহবিল অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় যাকাত তহবিল গঠন করে, সেই ফান্ডে ইচ্ছাকৃতভাবে যে কেউ তার যাকাতের টাকা দিতে পারে; এখানে বাধ্যবাধকতা নেই। যদি বাধ্যতামূলকভাবে আদায় করা যেত তাহলে বিত্তবানদের নিকট থেকে প্রতি বছর পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি যাকাত আদায় করা যেত, যা দ্বারা পৌণে দুই কোটি মানুষের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব হতো। আর তাহলে সম্ভবত ছোট এই দেশে ৬ লাখ ভিক্ষুক ও ২ কোটি ৫২ লাখ মানুষ হত দারিদ্র থাকতো না। আল্লাহপাক সূরা আল জারিয়াতের ১৯নং আয়াতে বলেন, ‘এবং তাদের ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্থ এবং বঞ্চিতদের হক।’ বর্তমানে বিশে^ সম্পদের অভাব নেই, ওই সম্পদের ওপর জনগণের অধিকারহীনতাই দারিদ্র সমস্যার প্রধান কারণ। যাকাত প্রধানের মাধমে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি অর্জিত হয়। যাকাত প্রদানের খাতসমূহ- মিসকিন- যার কিছুই নেই, ফকির- যার একদিন চলে এমন কিছু নেই, ঋণগ্রস্ত, মুজাহিদ, সম্বলহীন পথিক।
দূররে মুখতার কিতাবে বর্ণিত আছে সম্বলহীন তা’লিবে ইলমকে এবং যারা দ্বীন ইলম শিক্ষার কাজে মশগুল থাকার কারণে নিজেদের উপার্জন করার সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারেন তাহলে তাদের দিলেও যাকাত আদায় হবে। সুতরাং দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসা এবং দেশের দারিদ্র বিমোচন করা সব বিবেকবান ব্যক্তির একান্ত অপরিহার্য কর্তব্য।
সাদকাতুল ফিতর- যার সদকাহ অর্থ দান করা বা বিলিয়ে দেয়া। আর ফিতর অর্থ ভেঙ্গে ফেলা বা ভঙ্গ করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়- পবিত্র রমযান মাসের রোযা ভঙ্গ করে শাওয়াল মাসের শুরুতে রোযার সাদকাস্বরূপ গরিব-মিসকিনকে ওয়াজিব হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ দান করাকে সাদকাতুল ফিতর বলে। আনন্দ বন্টণের মাধ্যম সাদকাতুল ফিতর- দীর্ঘ এক মাস রোযা পালনের পর খুশির পশরা বয়ে আনে ঈদ। ইসলাম ঈদের এ আনন্দকে সমাজের ধনী ও দরিদ্রের মাঝে সমানভাবে বন্টনের এক উত্তম বিধান দিয়েছে সাদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে।
রমযান মাসে রোযাদারগণ তার সাধ্যানুযায়ী রমযানের মর্যদা রক্ষা করার চেষ্টা করেন, তদুপরি জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে মানুষ অনেক ত্রুটি- বিত্রুটি করে ফেলে, আর সাদকাতুল ফিতর এগুলো ক্ষতি পূরণ হিসাবে ভূমিকা পালন করে। নিজের জন্য, নিজের দরিদ্র ছোট শিশুর পক্ষ থেকে, নিজের অধীনস্থ গোলামের পক্ষ থেকে, সাদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। গোলাম মোদাব্বার অথবা উম্মে ওয়ালাদ অথবা কাফির হলেও সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন