নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের সুপারিশ ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের
স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষমতাসীনরা কখনোই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারে না। দেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই আইনের পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের সুপারিশ করেছে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে বিভিন্ন পর্যায়ের সুশীল নাগরিকরা এই সুপারিশের পক্ষে মতামত দেন।
ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক আব্দুল আলিম একটি এডভোকেসি পেপার (খসড়া) সøাইডের মাধ্যমে তুলে ধরেন। বাংলাদেশের আইনি কাঠামো ও এর সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে সংবিধানের কয়েকটি ধারা পরিবর্তন করে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করার সুপারিশ করে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নিয়োগের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্চ কমিটি গঠন ও তার কিছু টার্মস অব রেফারেন্সের বিষয়েও মতামত দেয়া হয়েছে। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী ড. স্বাধীন মালিক, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন ও তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের নির্বাহী সদস্য আব্দুল আওয়াল।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের বিষয়ে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানাই। এটি একটি ভালো প্রস্তাব। আমাদের একটি সংসদ রয়েছে, সেখানে নির্বাচন কমিশন আইন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে বর্তমানে নির্বাচন প্রকল্প সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যই হচ্ছে জণগণের ভোট ছাড়াই কীভাবে নির্বাচিত হওয়া যায়। সরকারের মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন প্রভাবিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ এই বক্তব্যটি কেবল আমাদের নয়, অনেক সুশিলদেরও। আজ সার্চ কমিটিও প্রশ্নবিদ্ধ। সুতরাং নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করাই যথাযথ হবে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবী ড. স্বাধীন মালিক বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে অবশ্যই সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন জরুরি। কিন্তু সরকারের এ ধরনের কোনো চিন্তা- ভাবনা আছে বলে আমার মনে হয় না।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করে ওই আইনের মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিতে হবে। অন্যথায় কমিশন প্রশ্নœবিদ্ধ হবে, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, মামলাও হবে। আর আগামী ফেব্রুয়ারির আগেই নির্বাচন কমিশন আইন করার প্রয়োজন জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশন আইন ছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত গণতান্ত্রিক চর্চা। দেশে যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন আইন ছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হলে কমিশন আইন করার কোনো বিকল্প নেই। কমিশনের একটি খসড়া আইন তো আগেই করা রয়েছে। সেটা নিয়ে কিছুদিন আলোচনা করলেই আইনটি চূড়ান্ত করা সম্ভব। এটা খুব একটা কঠিন কিছু হবে বলে আমার মনে হয় না। তবে সংবিধানের যে সংশোধন প্রয়োজন, তা এত দ্রুত করা সম্ভব কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারের চেয়ে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, শক্তিশালী, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন আইন অবশ্যই দরকার। আর নির্বাচন কমিশনে তিন ভাগের এক ভাগ নারী সদস্য থাকা উচিত।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ক্ষমতাসীনরা কখনোই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারে না। এ ছাড়া এখন সরকার তাদের সহায়ক আইন প্রণয়ন করছে।
তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় এবং জনগণ ওই নির্বাচন মেনে নেবে না। সার্চ কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সার্চ কমিটির ওপর আমাদের কোনো আস্থা নেই। সার্চ কমিটির গুরুত্ব বাড়াতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন