স্টাফ রিপোর্টার : সরকার বাংলাদেশকে জঙ্গলে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার দুপুরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আমরা এক দুঃসময়, খারাপ সময়ে, নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্যে বাস করছি। আমরা একটা অসভ্য মানুষদের শাসনে বাস করছি। দেশটাকে একটা জঙ্গলে পরিণত করেছে এই শাসকেরা।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের অধিগ্রহণ করা জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হত্যাকা- হয়েছে অভিযোগ করে একে ‘গণহত্যার শামিল’ বলে এর নিন্দা জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
সবচাইতে অবহেলিত, শোষিত, নিরহ সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষজনকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে, তাদেরকে কী অমানবিকভাবে, পিটিয়ে বের করে দিয়ে বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে গুলি করে মেরেছে। সেটা রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। আজকে এ ধরনের হত্যাকা- হচ্ছে, যাকে গণহত্যার শামীল বলে আমরা মনে করি।
গত রোববার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রংপুর চিনিকলের জমির দখলকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ সাঁওতাল শ্যামল হেমভ্রম (৩৫) দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান। ওই সংঘর্ষের পর এনিয়ে দুই সাঁওতালের মৃত্যু হয়।
রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে কারাবন্দি বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের মুক্তি দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে কেউ নিরাপদ নয়। না আছে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, না আছে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, না আছে বৌদ্ধ ধর্মের নিরাপত্তা। আর মুসলমানরা যারা আছেন, তারা প্রতিমুহূর্তে চাপের মধ্যে রয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কী হয়েছে? আজকে প্রমাণিত হয়েছে যে, এটা আওয়ামী লীগাররাই করেছে।
কারণটা কী? এরা আসলে কোনো ধর্মে, কোনো দর্শনে বিশ্বাস করে না। একটাই ধর্ম, একটাই দর্শন দুর্নীতি-লুট-ক্ষমতায় টিকে থাকা।
দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ ভালো নেই। এখনো রাস্তায় পাশে জরাজীর্ণ রোগাক্রান্ত মানুষ দেখা যায়। খুব গর্ব করছেন, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। কার প্রবৃদ্ধি বেড়েছে? আপনাদের (ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী) প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, আপনারা এখন স্ফীত হয়েছেন, আপনারা এখন সম্পদ পুঞ্জিভূত করছেন, সেই সম্পদ নিয়ে বিদেশে পাঁচার করছেন।
আমরা জানি, লোকমুখেও শুনি, পত্রপত্রিকায় মাঝেমধ্যে দেখতে পাই, কানাডায় নাকি নতুন একটি এলাকা তৈরি হয়েছে, তার নাম বেগমবাজার। সিঙ্গাপুরে নাকি বাড়ি, এপার্টমেন্ট, বিল্ডিং তৈরি হচ্ছেÑ এসব বাংলাদেশের মানুষজনের। সুইজারল্যান্ডের সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের মানুষদের একাউন্টে অর্থ বাড়ছে। তারা কারা? তারা এই শাসকগোষ্ঠীর লোকেরা।
বিনা বিচারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হত্যাকা- ও কারাগারে নেতাকর্মীরা মারা যাওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
কোথাও কোনো বিচার নেই, ন্যায় বিচার নেই, আইনের শাসন নেই। প্রত্যেক মানুষ এখন অস্থির হয়ে থাকেন, এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, স্বয়ং মাননীয় প্রধান বিচারপতি বলেছেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। তাহলে আমরা কোথায় যাবো, কার কাছে যাবো, কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে যাবো? সব প্রতিষ্ঠানকে নষ্ট করে দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ।
এই অবস্থার পরিবর্তনে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে। অতি দ্রুত সংগঠিত হোন। সব মানুষকে জাগিয়ে তুলে বিরাজমান অচলায়তন এবং বুকের পাথর সরাতে হবে।
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের কাছে আমরা বারবার আহ্বান করছি আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আপনারা দয়া করে যে জায়গায় অবস্থান করছেন, সেখান থেকে নেমে আসুন, মানুষের কাঁতারে আসুন। মানুষের মনের কথা বুঝতে শিখুন, দেয়ালের লিখনগুলো পড়ুন। তাহলে দেখবেন, ক্ষোভ-ঘৃণা-হতাশা ছাড়া আর কিছু নেই। এটাকে উপলব্ধি করে কোনো কিছু বিস্ফোরণ ঘটার আগে উপলব্ধি করে আপনারা নিয়মতান্ত্রিক পথে ফিরে আসুন। গণতন্ত্রকে গণতন্ত্রের পথে চলতে দিন। জনগণের দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। তার জন্য অবিলম্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করতে হবে।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আব্দুুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরাজ্জামান, লিটন মাহমুদ, সাহাবুদ্দিন মুন্না, রফিক হাওলাদার, বিএনপির ইউনুস মৃধা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন