নয়াদিল্লি প্রায় তিনটি বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করার পর বিতর্কিত অঞ্চলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম সফর ছিল গতকাল। এ উপলক্ষে আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরে ‘কালো দিন’ পালিত হয়েছে এবং ভারতবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নয়াদিল্লি ২০১৯ সালের আগস্টে এলাকার বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে দেয়। এসময় কর্তৃপক্ষ হাজার হাজার কাশ্মীরিকে গ্রেফতার করে এবং এই পদক্ষেপের স্থানীয় বিরোধিতাকে প্রতিরোধ করার জন্য বিশ্বের দীর্ঘতম ইন্টারনেট শাটডাউন চাপিয়ে দেয়। ভূখণ্ডের হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণ অংশ জম্মুর পল্লী গ্রামে মোদির উপস্থিতির জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল, যেটি কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসাবে নয়াদিল্লির প্রত্যক্ষ শাসনের প্রবর্তন উদযাপন করে।
সরকারি পাকিস্তানি প্রেস এজেন্সি এপিপি জানিয়েছে, এদিনে সর্বদলীয় হুররিয়াত কনফারেন্সের আহ্বানে অধিকৃত কাশ্মীর সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। আজাদ কাশ্মীরে গত শনিবার সেখানকার প্রধানমন্ত্রী সরদার তানভীর ইলিয়াসের আহ্বানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল রাজধানী মুজাফফরাবাদে এজেকে মন্ত্রী খাজা ফারুক আহমেদ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে একটি বড় ‘কালো দিবস’ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিটি বুরহান ওয়ানি চক থেকে শুরু হয়ে বাড়ি পিন চকে গিয়ে শেষ হয়। ভারতবিরোধী ও স্বাধীনতার স্বপক্ষে সেøাগানসম্বলিত ব্যানার ছাড়াও অংশগ্রহণকারীরা কালো পতাকা হাতে নিয়ে মোদির বিরুদ্ধে সেøাগান দেন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে খাজা ফারুক আহমেদ বলেন, বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝাতে চেয়েছেন যে, কাশ্মীরিরা কখনই ভারতীয় দখলদারিত্ব এবং মোদির মতো একজন ব্যক্তির আগমনকে স্বীকৃতি দেয়নি - যার ‘হাত নিরপরাধ কাশ্মীরিদের রক্তে রঞ্জিত’ - ভূখণ্ডের যে কোনো অংশে তাদের জন্য একটি ‘অত্যন্ত অবাঞ্ছিত’ জিনিস ছিল।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যকে ভারতের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানান, যেমনটি তারা ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার সাথে করেছে। তিনি কাশ্মীরিদের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘দ্বৈত মান’ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
আহমেদ বলেন, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত কাশ্মীরিদের তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দেওয়ার জন্য ভারতকে চাপ দেওয়া। তিনি বলেন যে, ভারত-অধিকৃত কাশ্মীর একটি ক্রমাগত কারফিউর অধীনে ছিল যেখানে একটি ‘পূর্বপরিকল্পনার’ অধীনে মানুষের জীবিকা ধ্বংস করা হচ্ছে যাতে তারা ভারতের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে না পারে।
তিনি সবসময় কাশ্মীরিদের সমর্থন করার জন্য পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আহমেদ বলেন, সেই দিন বেশি দূরে নয় যখন কাশ্মীরিরা স্বাধীন হয়ে পাকিস্তানের অংশ হবে। এপিপি জানায়, জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ইয়াসিন মালিকের স্ত্রী মুশাল হুসেন মালিক বলেছেন, মোদির সফর ‘কাশ্মীরি জনগণের সাথে একটি নিষ্ঠুর তামাশা ছাড়া কিছুই নয়’।
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, কাশ্মীরের সাহসী জনগণ মোদির সফরে সম্পূর্ণ বন্ধ পালন করবে এবং তাকে এবং বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে যে, কাশ্মীরিরা আর নৃশংস পরাধীনতা মেনে নেবে না। সমাবেশ শেষে অধিকৃত ভূখণ্ডের স্বাধীনতা কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
জম্মুতে কড়া নিরাপত্তা : মোদির সফরের আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অধিকৃত এলাকা জুড়ে বিশেষ করে জম্মু অঞ্চলে সেনা ও পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করেছে। রাষ্ট্র-চালিত এপিপি জানায়, ভারতীয় কর্মীরা যানবাহনগুলোর এলোমেলো চেকিং পরিচালনা করে এবং চেকপয়েন্টগুলোতে যাত্রীদের ঝাঁকুনি দেয় যা সমস্ত বড় শহর ও শহরের রাস্তার পাশাপাশি শ্রীনগর-জম্মু হাইওয়েতে ছড়িয়ে পড়ে।
ভারতীয় পুলিশ এবং সেনারা সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করে মানুষের চলাচলের ওপর নজরদারি চালায়। ড্রোন ক্যামেরা এবং স্নিফার কুকুরগুলোকে পরিষেবাতে অন্তর্ভুক্ত করার সময় উঁচু ভবনগুলোতে শার্পশুটারও মোতায়েন করা হয়। ভারতীয় পুলিশ শ্রীনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কিছু বাইক আটক করেছে। সূত্র : ডন অনলাইন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন