কূটনৈতিক সংবাদদাতা : ফিলিস্তিনের মুক্তিসংগ্রামে অব্যাহত সমর্থনদানের জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এ সময় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) চেয়ারম্যান ফিলিস্তিনের দুর্দিনে পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশকে অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করে দেশটির সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
গত শনিবার মধ্যরাতে জর্ডান থেকে জাপানের রাজধানী টোকিও যাওয়ার পথে ঢাকায় যাত্রাবিরতি করেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে স্বাগত জানান। প্রেসিডেন্ট আব্বাস এশিয়ার তিনটি দেশে তাঁর সফরের পথে ঢাকায় প্রথম যাত্রাবিরতি করেন।
উচ্চপর্যায়ের ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদলসহ মাহমুদ আব্বাস বিশেষ ফ্লাইটে রাত সাড়ে ১২টার কিছু পরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। জ্বালানি সংগ্রহ করে প্রায় দুই ঘণ্টা পর বিমানটি রাত আড়াইটার দিকে জাপানের উদ্দেশে ছেড়ে যায় বলে জানা গেছে। এ সময় সেখানে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইউসুফ রামাদান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত, সউদি আরব ও কাতারের রাষ্ট্রদূত; ওমান, মিসর, ইরাক ও লিবিয়ার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং মরক্কোর ডেপুটি চিফ ইন মিশন উপস্থিত থেকে মাহমুদ আব্বাসকে অভ্যর্থনা জানান। পরে সফররত প্রতিনিধিদল বিমানবন্দরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করে।
ফিলিস্তিনি দূতাবাস জানিয়েছে, বৈঠকে মাহমুদ আব্বাস জেরুজালেমের অতি সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সংশ্লিষ্ট ইস্যু এবং চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন নীতির বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন। ফিলিস্তিনের মুক্তিসংগ্রামে বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। পাশাপাশি ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে পড়াশোনা করা এবং সে দেশের সেনা সদস্যদের বাংলাদেশে প্রশিক্ষণের জন্যও ধন্যবাদ জানান মাহমুদ আব্বাস। বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী ফিলিস্তিন। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানানখাতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় তার দেশ, এমনটাই জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। এ সময় ফিলিস্তিনের সমস্যা সমাধানে বিশ্বনেতাদের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি। আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রেসিডেন্টকে সরকারি সফরে বাংলাদেশে আসতে অনুরোধ জানান। তার পরিপ্রেক্ষিতে মাহমুদ আব্বাস তাদের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন এবং সুবিধাজনক সময়ে সফরে আসবেন বলে জানান।
বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রটোকল প্রধান আসাদ আলম সিয়াম ও বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদলে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. রিয়াদ আল মালিক, প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রোদিনি, কূটনৈতিক বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা ড. মাজদি আল খালিদি, বিশেষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মুস্তাফা আবু আল রব এবং জর্ডানে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত আত্তাল্লা খাইরি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার সবসময়ই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও তার জনগণের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের পক্ষেও কথা বলে আসছে বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতিদিন দিন বিশ্বের সমর্থন বাড়ায় সে দেশের মানুষের জীবনেও পরিবর্তন আসছে। গতবছর ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পতাকা তোলা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন