চলছে পবিত্র রমজান মাস। এ মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ রোজা রেখে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক ও তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টি অর্জনে আরাধনা করছেন। আমরা অনেকেই রমজান মাস আসলে রোজা রাখি কিন্তু এর হুকুম-আহকাম তথা বিধানাবলী সম্পর্কে অনেকেই খুব একটা জানি না। এর পবিত্রতা বজায় রাখা সম্পর্কেও সচেতন নই। এই রমজানের রোজা রাখা ফরজ। এই রমজানের রোজা কোন্ কোন্ অবস্থায় কাযা করা যাবে, আবার এই কাযা কখন কিভাবে আদায় করতে হবে এ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। অথচ একজন মুসলমানের জন্য উচিত রমজানের সব বিষয়ে ফরজ পরিমাণ জানা থাকা।
তাই রমজানের রোজার ‘কাযা’ কখন কিভাবে আদায় করতে হবে তা নিয়েই আজকের এ আলোচনা। বিভিন্ন অপারগতা কিংবা অজুহাতে (ওজর) রমজানের রোজা কাযা করা হয়। তবে এই কাযা রোজাগুলো পরবর্তীতে আদায় করে নিতে হবে। না হলে ফরজ আমল ত্যাগের গুনাহ হবে। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক যেসব ওজর ও অপারগতার কারণে রোজা কাযা করা যাবে। মনে রাখতে হবে, এসব রোজা মাফ নয়। তাই অপারগতা দূর হয়ে যাওয়ার পর সেটার কাযা আদায় করা ফরজ। অবশ্যই এক রমজানের রোজার কাযা পরবর্তী রমজানের আগেই পূরণ করতে হবে।
যে সব রোজার শুধু কাজা আদায় করতে হবে। মুসাফির অবস্থায়, রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধির বেশি আশঙ্কা থাকলে, মাতৃগর্ভে সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে, এমন ক্ষুধা বা তৃষ্ণা হয় যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে, শক্তিহীন বৃদ্ধ হলে, কোনো রোজাদারকে সাপে দংশন করলে। মহিলাদের মাসিক হায়েজ ও নেফাস চলা অবস্থায় রোজা ভঙ্গ করা যাবে। এছাড়াও রোজা ভঙ্গের আরো যেসব কারণে শুধু কাজা আদায় করতে হয়। স্ত্রীকে চুম্বন বা স্পর্শ করার কারণে যদি বীর্যপাত হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে, পাথরের কণা, লোহার টুকরা, ফলের বিচি গিলে ফেললে, ডুশ গ্রহণ করলে, বিন্দু পরিমাণ কোন খাবার খেলে। (তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে বা মনের ভুলে খেলে রোজা ভাঙ্গবে না। মনে আসা মাত্রই খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে)। নাকে বা কানে ওষুধ দিলে যদি তা পেট পর্যন্ত পৌঁছে, মাথার ক্ষতস্থানে ওষুধ দেওয়ার পর তা যদি মস্তিষ্কে বা পেটে পৌছে ইত্যাদি কারণে রমজানের রোজার শুধু কাযা আদায় করতে হবে কাফফারা আদায় করতে হবে না।
যে সব কারণে রোজার কাজা ও কাফফারা উভয়টি আবশ্যক হয়। এমন কিছু বিষয় নিচে উল্লেখ করা হলো- রমজানের রোজা রেখে দিনের বেলা স্ত্রী সহবাস করলে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ওপর সেই রোজার কাজা-কাফফারা ওয়াজিব হবে। (বোখারি : ৬৭০৯)। রোজা রেখে স্বাভাবিক অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে কাজা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। (আল বাহরুর রায়েক : ২/২৭৬)। বিড়ি-সিগারেট, হুক্কা পান করলেও রোজা ভেঙে যাবে। কাজা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৩৮৫)। আর সুবহে সাদিক হয়ে গেছে জানা সত্ত্বেও আজান শোনা যায়নি বা এখনও ভালোভাবে আলো ছাড়ায়নি, এ ধরনের ভিত্তিহীন অজুহাতে পানাহার করলে বা স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হলে কাজা ও কাফফারা দুটোই জরুরি হবে। (মাআরিফুল কোরআন : ১/৪৫৪-৪৫৫)।
রোজার কাজা : শরিয়তে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিনা কারণে রোজা ভঙ্গ করলে অবশ্যই কাজা-কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব। যতটি রোজা ভঙ্গ হবে, ততটি রোজা আদায় করতে হবে। কাজা রোজা একটির পরিবর্তে একটি, অর্থাৎ রোজার কাজা হিসেবে শুধু একটি রোজাই যথেষ্ট।
রোজার কাফফারা : কাফফারা আদায় করার তিনটি বিধান রয়েছে। ১. একটি রোজা ভঙ্গের জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। কাফফারা ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজার মাঝে কোনো একটি ভঙ্গ হলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। ২. যদি কারও জন্য ৬০টি রোজা পালন সম্ভব না হয়, তাহলে সে ৬০ জন মিসকিনকে দু’বেলা খাবার দেবে। অপরদিকে কেউ অসুস্থতাজনিত কারণে রোজা রাখার ক্ষমতা না থাকলে ৬০ জন ফকির, মিসকিন, গরিব বা অসহায়কে প্রতিদিন দু’বেলা করে পেটভরে খাবার খাওয়াতে হবে। ৩. গোলাম বা দাসী মুক্ত করতে হবে ইত্যাদি।
অতএব, রমজানের রোজা একটি ফরজ ইবাদত। এই রোজা পালনের যে সকল বিধি-বিধান রয়েছে, ইসলাম ধর্মে সেগুলো জেনে ও মেনে অত্যন্ত পবিত্রতার সাথে রোজা পালন করতে হবে। তাই রোজার কাযা আদায়ের সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী কাযা আদায় করতে হবে। আর যেসব ছোটখাটো কিছু ভুল থেকে শুরু করে বড় বড় কিছু কাজে রোজা মাকরুহ হয়ে যেতে পারে ও তার পবিত্রতাও নষ্ট হতে পারে। সেগুলো থেকে আমরা সর্বোচ্চ সচেতনার সহিত বিরত থাকার চেষ্টা করবো এবং আমাদের সিয়াম সাধনাকে পরিপূর্ণভাবে আদায় করবো, ইনশাআল্লাহ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন