জার্মানির বিভিন্ন শহরের অলিগলিতে, পার্কের কিনারে কিংবা বড় বড় ভবনের মাঝখানে ছোট ছোট প্লেগ্রাউন্ড বা শিশুদের খেলার মাঠ দেখতে পাওয়া যায়। দোলনা, ঢেঁকি, স্লাইড, স্প্রিং রাইডার, ক্লাইম্বার, ট্রাইটোপিয়া, প্লেহাউসসহ নানা রকম খেলাধুলার উপকরণ থাকে এসব স্থানে। আর সেগুলো তৈরি করা হয় বালির উপরে যাতে করে এসব ব্যবহার করতে গিয়ে শিশুরা পড়ে গেলে বেশি ব্যথা না পায়। পাশাপাশি বালি দিয়ে খেলার সুযোগতো থাকেই। -ডয়েচে ভেলে
প্লেগ্রাউন্ডগুলোতে শিশু-কিশোররা দিনের বেলা যেকোনও সময়ই যেতে পারে। এগুলো ব্যবহারের জন্য কোনও অনুমতি বা আলাদা খরচ নেই। পুরোটাই ফ্রি। শিশুদের এই খেলার জায়গাগুলো আপাত দৃষ্টিতে দেখলে কিছুটা অগোছালো মনে হলেও এগুলোর পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য থাকে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখতে এগুলোতে থাকে নানা আয়োজন। যেমন ক্লাইম্বার এবং ট্রাইটোপিয়ার মতো আয়োজনগুলো শিশুদের ‘মোটর স্কিল’ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। দড়ি কিংবা স্টিলের বিভিন্ন কাঠামো বেয়ে উপরে ওঠা এবং নামার মতো খেলার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে পরিচিত হয়। এতে করে তাদের মানসিক শক্তি বাড়ে যা ভবিষ্যতে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে সহায়ক হয়।
অনেক প্লেগ্রাউন্ডে শিশুদের অনেক কিছু গড়ার সুযোগ থাকে। তারা নিজেদের মতো করে সেগুলো নিয়ে খেলতে পারে। কিছু গ্রাউন্ডে শুধু শিশুদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয় যাতে তারা অভিভাবকদের কাছ থেকে দূরে থেকে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জার্মানির প্লেগ্রাউন্ডগুলোতে শিশুদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবেই মুক্ত পরিবেশে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। কেননা এটা তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত হতে সহায়তা করবে। কেউ কেউ বলতে পারেন, শিশুরা ক্লাইম্বার বা ট্রাইটোপিয়া টাওয়ার ব্যবহার করতে গিয়ে আহত হওয়ার মতো পরিস্থিতি কি তৈরি হতে পারে না? হ্যাঁ, সেই ঝুঁকি কিছুটা রয়েছে৷ তবে শিশুদের যেসব খেলার উপকরণ প্লেগ্রাউন্ডে রাখা হয়, সেগুলো ট্যুভ নামক একটি মান যাচাই সংস্থার সনদপ্রাপ্ত হতে হয়। এই একই সংস্থা জার্মানির রাস্তায় কোন গাড়ি চলার উপযুক্ত এবং কোনটি উপযুক্ত নয় তা নির্ধারণ করে।
খেলার উপকরণগুলো তৈরির ক্ষেত্রে শিশুদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি যতটা সম্ভব যাতে কম থাকে সেটা নিশ্চিত করা হয়। তা না হলে সেগুলো ট্যুভের অনুমোদন পাবে না। যেমন ট্রাইটোপিয়া টাওয়ারে নানা স্তর থাকে যাতে করে বেশ কয়েক মিটার উপর থেকে একটি শিশু সরাসরি নীচে পড়ে না যায়। আর কিছু উপকরণ বা খেলার স্থাপনা ব্যবহারের সময় শিশুদের সাইকেল চালানোর হেলমেট ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়। জার্মানির এই প্লেগাউন্ডগুলোর চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এমনকি যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতেও জার্মানির আদলে শিশুকিশোরদের জন্য প্লেগ্রাউন্ড তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের দেশে শিশু-কিশোরদের জন্যও এরকম প্লেগ্রাউন্ড তৈরি কি অসম্ভব?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন