সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রায়পুরার নিলক্ষার চরে আর সংঘর্ষ ঘটেনি : থমথমে অবস্থা

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি’র ঘটনাস্থল পরিদর্শন

প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : আওয়ামী লীগের দু’দল লাঠিয়াল ও পুলিশের মধ্যে গত সোমবার সংঘটিত ত্রিমুখী সংঘর্ষে অর্ধশত গ্রামবাসী হতাহতের ঘটনার পর রায়পুরার নিলক্ষার চরে নতুন করে কোনো সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
শনি, রবি ও সোমবারের সংঘর্ষের পর গতকাল মঙ্গলবার এলাকায় দেড় শতাধিক দাঙ্গা ও ব্যাটেলিয়ন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ব্যাপকসংখ্যক পুলিশ মোতায়েনের কারণে দাঙ্গাবাজ লাঠিয়ালরা গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে গেছে।
পাশাপাশি পুলিশি হয়রানি ও গ্রেফতার এড়াতে ৭/৮টি গ্রামের যুবক ও মধ্যবয়সী মানুষেরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। মহিলা, অতিবৃদ্ধ ও শিশু ছাড়া গ্রামগুলোতে তেমন কোনো মানুষের দেখা পাওয়া যায়নি। সারা নিলক্ষা ইউনিয়ন একটি বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়নের ৭/৮টি গ্রামের লাঠিয়ালদের ভয়াবহ তা-বের চিহ্নগুলো বর্বরতার স্বাক্ষর হয়ে পড়ে রয়েছে। সেখানকার সাধারণ নিরীহ মানুষ জান ও মালের নিরাপত্তা হারিয়ে সার্বক্ষণিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। এলাকায় অশান্ত পরিস্থিতিতে মহিলা ও শিশুরা রান্নাবান্না করতে না পেরে ৩ দিন ধরে অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এলাকার হাই স্কুল ও প্রাইমারি স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীরা যেতে সাহস পাচ্ছে না। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার আমেনা বেগম, এসপি সার্কেল বশির উদ্দিন এবং রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ: মতিন ইউনিয়ের দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে ডিআইজি আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেছেন, পুলিশ দাঙ্গা দমনে সর্বোপরি চেষ্টা করেছে। দু’পক্ষের লোকজনকে ডেকে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করেছেন। এরপরও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পুলিশ ঘটনাস্থলে যাবার পর লাঠিয়ালরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশ প্রাণ রক্ষার্থে যা করার তা করতে বাধ্য হয়েছে। পুলিশ জনগণের স্বার্থেই কাজ করেছে। এদিকে সোমবার পুলিশের গুলি ও টেঁটার আঘাতে নিহত ৪ জনের লাশ মঙ্গলবারও নরসিংদী হাসপাতাল মর্গে পড়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, টেঁটাবিদ্ধ হয়ে নিহত শাহজাহানের লাশ সন্ধ্যার সময়ই হাসপাতাল মর্গে পৌঁছে। গুলিতে নিহত খোকন, মানিক ও মামুনের লাশ পর্যায়ক্রমে মধ্যরাতের আগে হাসপাতাল মর্গে পৌঁছিয়েছে পুলিশ। যার ফলে মঙ্গলবার লাশগুলোর ময়না তদন্ত শেষ করতে দুপুর গড়িয়ে যায়। দুপুরের পরও লাশগুলো নেয়ার জন্য আত্মীয়-স্বজনদের কেউ মর্গে যায়নি। পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে আত্মীয়-স্বজনরা লাশ নিতে মর্গে যেতে সাহস পায়নি। পরে সন্ধ্যার পূর্বে গ্রামের লোকজন এসে লাশগুলো নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে বলে খবর পাওয়া গেছে। শনি, রবি ও সোমবারের সংঘর্ষে হতাহতের ব্যাপারে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো হত্যাকা-, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে নামে ১ শত জনকে এবং বেনামে প্রায় দেড় হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে নরসিংদী ডিবি পুলিশের এস আই রুপন কুমার সরকার বাদী হয়ে জনৈক সোলাইমানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এই সোলাইমানের বাড়ি ঢাকার মিরপুরে। নিলক্ষা এলাকায় লাঠিয়ালদের বোমা ও ককটেল সরবরাহের অভিযোগ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছে যে, গত সোমবার গভীর রাতে নিলক্ষার হরিপুর বাজারে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। লুটেরারা নৌকাযোগে এসে হরিপুর বাজারে গিয়ে দোকানদারদের দোকান ভেঙে লাখ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী পুলিশ এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। লাঠিয়ালরা এলাকায় না থাকলেও তারা নিরাপদ দূরত্বে থেকে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ওঁৎ পেতে বসে রয়েছে। যে কোনো সময়ই আরো বড় ধরনের রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন