রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

মুনাফা ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে এরদোগান-মোহাম্মদের আলিঙ্গন

একসময়ের শত্রু এখন বন্ধু

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান প্রকাশ্যে সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ইস্তাম্বুলে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগির জঘন্য হত্যার নির্দেশ দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন। মার্কিন মিডিয়ার প্রকাশিত অ্যাকাউন্ট অনুসারে সউদী যুবরাজ প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা এবং ডি ফ্যাক্টো উপসাগরীয় দূত জ্যারেড কুশনারের সাথে কথোপকথনে মি. এরদোগানকে ‘বিপজ্জনক ইসলামপন্থী’ বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু বছর পার হয়ে গেছে এবং খাসোগির হত্যাকারীদের বিচার স্থগিত করা হয়েছে। সম্ভাব্য বাণিজ্যে বিলিয়ন ডলারের ভারসাম্য স্তব্ধ। গত শুক্রবার জনাব এরদোগান সউদী আরবে দুই দিনের সফর শেষ করেন। এসময় তিনি প্রকাশ্যে আলিঙ্গন করেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও তার বাবা বাদশাহ সালমানের সাথে।

এক দশকের মতাদর্শগত ফাটল এবং প্রক্সি যুদ্ধের পর তুরস্ক এবং আরব উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এই বৈঠকটি একটি পূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
জেদ্দার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে জনাব এরদোগান বলেন, ‘আমাদের পারস্পরিক স্বার্থে আমরা বিশ্বাস করি প্রতিরক্ষা ও অর্থসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোয়।
জনাব এরদোগান পরে টুইটারে নিজের এবং যুবরাজের একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ককে অতীতের চেয়ে আরো এগিয়ে নিয়ে যাব। ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক সম্পর্কযুক্ত দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ হিসেবে আমরা আমাদের মধ্যে সব ধরনের রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে এবং একটি নতুন যুগের সূচনা করার চেষ্টা করছি’।

জনাব এরদোগানের উপকূলীয় শহর জেদ্দায় হাই-প্রোফাইল সফরটি জনাব খাশোগি হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ২৬ সউদী নাগরিকের অনুপস্থিতিতে বিচার স্থগিত করার তুরস্কের সিদ্ধান্তের পরে অনুষ্ঠিত হল।
২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুল সউদী কনস্যুলেটে নিয়ে গিয়ে ৫৯ বছর বয়সী সউদী সাংবাদিকে জামাল খাশোগিকে খুন এবং টুকরো টুকরো করা হয়েছিল। তার লাশ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ মামলাটি আন্তর্জাতিক ক্ষোভের জন্ম দেয় এবং যুবরাজ মোহাম্মদকে একজন প্যারিয়াতে পরিণত করে।

মানবাধিকার কর্মীরা তুরস্কের বিচার স্থগিত করার সিদ্ধান্তের ব্যাপক নিন্দা করেছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি মিডল ইস্ট ডিরেক্টর মাইকেল পেজ বলেছেন, এ পদক্ষেপ ‘তার জন্য ন্যায়বিচারের যে কোনো সম্ভাবনাকে শেষ করে দেবে এবং সউদী কর্তৃপক্ষের আপাত বিশ্বাসকে শক্তিশালী করবে যে, তারা হত্যার মাধ্যমে পার পেয়ে যেতে পারে’।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে একটি ব্যাপকভাবে শেয়ার করা ধারণা যে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ঝাঁকুনির পিছনে মূল চালক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে তার ভূমিকা থেকে সরে আসছে, যার মধ্যে রয়েছে সিরিয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের আউটরিচ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান এবং সউদী আরবের মধ্যে চলমান ইরাক-আয়োজক আলোচনা।

তুরস্কের ইকোনমিক পলিসি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক সেলিম কোরু বলেছেন, ‘দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এবং সাধারণভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি হতাশ এবং বিকল্প নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে চায়। জনাব এরদোগানের সফরে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র স্থান মক্কা এবং মহানবী মোহাম্মদ (স.)-এর রওজা পরিদর্শন অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে সউদী আরবে এটি ছিল তুরস্কের প্রথম সরকারি রাষ্ট্রীয় সফর।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরে বাদশাহ সালমানের প্রতি শ্রদ্ধার সাথে আচরণ করেছেন, কিন্তু তার ৩৬ বছর বয়সী ছেলে এবং মনোনীত উত্তরাধিকারীর প্রতি তার অবজ্ঞা ঢাকতে সংগ্রাম করেছেন। তারপরও দুজনে একসঙ্গে হাজির হয়ে করমর্দন করলেন। সরকারী সউদী প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে যে, জনাব এরদোগান এবং যুবরাজ মোহাম্মদ ‘সউদী-তুর্কি সম্পর্ক এবং সব ক্ষেত্রে তাদের বিকাশের উপায়গুলো পর্যালোচনা করেছেন’। জেদ্দায় বৈঠকটি হয় এ সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতি এবং তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চলমান ইস্তাম্বুল সম্মেলনের অনুসরণে।

তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সম্পর্কের পতন ঘটেছিল, কারণ তারা নিজেদেরকে লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধের বিপরীত দিকে খুঁজে পেয়েছিল এবং মধ্যপ্রাচ্যের জন্য তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে জনাব এরদোগান এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ গত বছর আঙ্কারায় মতবিরোধ দূর করতে এবং বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার প্রয়াসে বৈঠক করেছিলেন। জনাব এরদোগান ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফরের সাথে প্রতিদান দেন।

খাশোগি হত্যার অভিযোগের পর থেকে সউদী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তুর্কি পণ্যের অনানুষ্ঠানিক বয়কট আরোপ করেছে এবং গত বছর আমদানি নতুন নিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। ‘তুরস্কের উপসাগরীয় বাজারে প্রবেশাধিকার প্রয়োজন’ মিঃ কোরু বলেছেন। ‘তুর্কি ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই পণ্য পাচার করছিল, সেগুলোকে ‘মেড ইন ইউএই’ স্ট্যাম্প লাগিয়ে সউদীতে রপ্তানি করত’। সূত্র : দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Sakibul Hasan ১ মে, ২০২২, ৪:৫১ এএম says : 0
সৌদি সফরে এরদোগান। বাইডেন ঝড়? না চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব? সে যাই হোক না কেন, মুসলিম বিশ্বের দুই বড় শক্তি নিজেদের ইগো দূর করে যদি একসঙ্গে কাজ করতে পারে,তাহলে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর অনেক উপকার সাধন হতে পারে।
Total Reply(0)
Md Abdullah Abdullah ১ মে, ২০২২, ৪:৫২ এএম says : 0
গোটা মুসলিম বিশ্বের জয় হবে ইনশাআল্লাহ
Total Reply(0)
Ismail Sagar ১ মে, ২০২২, ৪:৫২ এএম says : 0
ওহে বীর মুসলিম জেগে ওঠো তুমি
Total Reply(0)
Helal Uddin Helal ১ মে, ২০২২, ৪:৫৩ এএম says : 0
মাশাআল্লাহ
Total Reply(0)
হাসানুল বান্না ১ মে, ২০২২, ৪:৫৭ এএম says : 0
আপনাদের আন্তর্জাতিক খবর গুলো এভাবেই গুগল বাংলা ট্রান্সলেট করে না দিয়ে আরেকটু সুন্দর ভাবে পরিবেশন করা যায়। এভাবে পড়তে অসুবিধা হয়।
Total Reply(0)
Dr. Mohammad Ziaul Hoque ১ মে, ২০২২, ৯:১০ এএম says : 0
মুসলিম দেশগুলোর মাঝে দ্বন্দ্ব নিরসন ইসলামের স্বার্থে প্রয়োজন। আল-কোরানের শিক্ষা হতে দূরে থাকার কারণে সব সমস্যার উদ্ভব হয়। আল-কোরআন অনুসরণ করে সকল মুসলিম সকল সমস্যার সমাধান করবে এই আশাবাদ ব্যাক্ত করছি।
Total Reply(0)
Md.Abdullahil kafi ১ মে, ২০২২, ২:৪৫ পিএম says : 0
Mashallah,we hope that following both countries of Quran and sunnah to make a good relationship ????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন