মালয় মানবসম্পদ মন্ত্রী ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর যৌথ ঘোষণা
স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হচ্ছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জনশক্তি রফতানির প্রথম ফ্লাইট কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি উভয় দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের জি টু জি প্লাস স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতেই প্রাথমিক পর্যায়ে নির্মাণ খাত, প্লান্টেশন ও মেনুফ্যাকচার খাতে কর্মী যাবে। গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় একটি হোটেলে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী রিচার্ড রায়ট আনাক জায়েমের সাথে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সাথে জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বৈঠকে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ সম্পর্কিত বিষয়ে সার্বিক আলোচনা হয়। আলোচনায় উভয় মন্ত্রী একমত হন যে, শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে নির্মাণ খাত, প্লান্টেশন ও মেনুফ্যাকচার খাতে মালয়েশিয়ায় স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী গমন শুরু হবে। বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরণকৃত ৭৪৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করার জন্য বৈঠকে আলোচনা হয়।
বৈঠকে মালয়েশিয়ার ৯ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী রিচার্ড রায়ট আনাক জায়েম। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হচ্ছেনÑ ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার নুর আশিকিন বিনতে মোহাম্মদ তায়েব, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-মহাসচিব শাহনিয়ার বিন দারুসমান, ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক হাজি মুস্তাফা বিন হাজি আলী, শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক জেফরি বিন জোয়াকিম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশী শ্রমিক ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব জামিরি বিন মাত জিন, অভিবাসন দফতরের পরিচালক খায়রুল খায়ের বিন ইয়াহিয়া, মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মুখ্য সহকারী সচিব শাহাবুদ্দিন বিন আবু বকর ও মানবসম্পদ মন্ত্রীর বিশেষ কর্মকর্তা রবার্ট আনাক দাপন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১০ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হচ্ছেনÑ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামছুন নাহার, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: সেলিম রেজা, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ, মন্ত্রীর একান্ত সচিব মু: মোহসিন চৌধুরী, যুগ্ম সচিব নারায়ণ চন্দ্র বর্মা, যুগ্ম সচিব মো: আকরাম হোসেন, যুগ্ম সচিব মো: বদরুল আরেফীন, মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশের কাউন্সেল (শ্রম) মো: সাঈদুল ইসলাম ও বিএমইটির পরিচালক ড. নুরুল ইসলাম।
বৈঠকের শুরুতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী রিচার্ড রায়ট আনাক জায়েম বলেন, শিগগিরই তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে এবং মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার ব্যাপারে খুব আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নির্ধারিত ব্যয়ে মালয়েশিয়া সরকার ও বাংলাদেশ সরকার কর্মী গমনাগমনের বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে নির্মাণ খাত, প্লান্টেশন ও মেনুফ্যাকচার খাতে কর্মী নেবে বলে জানান তারা।
বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিতে দালাল চক্র নির্মূল করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার। দক্ষ ও আধাদক্ষ কর্মী প্রেরণের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত আছে। ইতোমধ্যে কর্মী প্রেরণের কৌশল নিয়ে উভয় পক্ষ একাধিকবার বৈঠক করেছে। মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি আরো বলেন, জনশক্তি রফতানিতে গুটিকয়েক রিক্রুটিং এজেন্সিকে সুযোগ না দিয়ে পূর্বে প্রেরিত ৭৪৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি হতে অভিজ্ঞ ও স্বনামধন্য রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করা হবে। এতে করে অভিবাসন ব্যয় হ্রাস পাবে এবং সরকার নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী প্রেরণ করা যাবে। বৈঠক শেষে মন্ত্রীদ্বয়ের মধ্যে স্মারক বিনিময় হয়।
এদিকে, মালয়েশিয়া শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণের খবর মালয়েশিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে প্রবাসী কর্মী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়। কুয়ালালামপুর থেকে একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বায়রার মালয়েশিয়া জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন বে-বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আলহাজ মো: গিয়াস উদ্দিন বাবুল মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির দ্বার উন্মোচিত হওয়ার ঘোষণা দেয়ায় গতকাল রাতে কুয়ালালামপুর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক, মানবসম্পদ মন্ত্রী রিচার্ড আনাক জায়েমকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানিতে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে কর্মী প্রেরণের সুযোগ পায় তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মালয়েশিয়া প্রবাসী ব্যবসায়ী কমিউনিটির নেতা রাশেদ বাদল এবং জাতীয় শ্রমিক লীগ মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি নাজমুল ইসলাম বাবুল, সহ-সভাপতি শাহ আলম হাওলাদার ও মহাসচিব এস এম আবুল হোসেন অনুরুপ এক বিবৃতিতে শিগগিরই মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির চালুর যৌথ ঘোষণা হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে সিন্ডিকেটবিহীন কর্মী প্রেরণে অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ এবং সহনীয় অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন