স্বজনদের সঙ্গে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। গতকাল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ব্যক্তিগত যানবাহন ও যাত্রীবাহী পরিবহনের চাপ ছিল বেশি। তীব্র গরমে দীর্ঘসময় ঘাটে আটকে থেকে নারী, শিশুসহ যাত্রীরা ভোগান্তি পোহান। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে খবর বিস্তারিত :
শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুট হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের কর্মস্থলমুখো যাত্রী ও যানবাহনের গতকাল ছিল উপচেপড়া চাপ। সীমিত সংখ্যক ফেরি চলাচল করায় ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় যানবাহন ও বাইকের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। এদিকে, দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। লঞ্চে যাত্রী নিয়ন্ত্রণে একাধিক সংস্থাকে কাজ করতে দেখা গেছে।
বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসিসহ একাধিক সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে বাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে কর্মস্থলমুখো যাত্রীরা বাংলাবাজার ঘাটে আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঘাট এলাকায় যাত্রীদের ভীড়ও বাড়তে থাকে। বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চ ও স্পীডবোট ছিল যাত্রীতে পরিপূর্ণ। লোডমার্ক অনুযায়ী লঞ্চগুলো যাত্রী পারাপার করছে। আর স্পীডবোটে যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এরুটে রোরো ফেরি এনায়েতপুরী, বেগম সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়া, কেটাইপ ফেরি কুঞ্জলতা, ক্যামেলিয়াসহ ৫টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করছে বিআইডব্লিউটিএ। ফেরিগুলোতে সাধারণ যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরী যানবাহন, কাঁচামালবাহী গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাইকারদের প্রচণ্ড চাপ থাকায় বাংলাবাজার থেকে ৫টি ফেরি শুধু বাইক নিয়ে শিমুলিয়ায় ছেড়ে যায়। বাংলাবাজারের ৬ নং ফেরি ঘাটটি বাইকারদের জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তবে সীমিত সংখ্যক ফেরি চলাচল করায় ঘাট এলাকায় যানবাহন ও যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। পারাপারের অপেক্ষায় ঘাট এলাকায় দুই শতাধিক যানবাহনের লাইন সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র গরমে দীর্ঘসময় ঘাটে আটকে থেকে নারী, শিশুসহ যাত্রীরা ভোগান্তি পোহান। এদিকে, দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা প্রতিটি যানবাহনই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাট ম্যানেজার মো. সালাউদ্দিন বলেন, এরুটে ৫টি ফেরি দিয়ে যাত্রী, জরুরি গাড়ি ও কাঁচামালবাহি গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। কয়েকটি গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা সিরিয়াল অনুযায়ী সব গাড়িই পারাপার করছি। বাইকের জন্য পৃথক ঘাট করা হয়েছে।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে জীবিকার তাগিদে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলা ও কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ছুটি শেষে কর্মস্থলগামী মানুষকে বয়ে আনা অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে দৌলতদিয়া ঘাট অভিমুখে মহাসড়কে অন্তত দেড় কিলোমিটার জুড়ে যানজটের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়। দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের ক্যানেল ঘাট পর্যন্ত যানবাহনের সারিতে শতাধিক যাত্রীবাহি বাস ও বাইপাস সড়কে কয়েক শত প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস। ৫ নং ফেরি ঘাটে ফেরি না থাকায় পন্টুনের উপর কয়েকশত মোটরসাইকেল আটকা পড়ে। তবে বিআইডব্লিউটিসি দাবি করছে, ফেরির জন্য কোনো যানবাহন ঘাট এলাকায় আটকা নেই। যে বাসগুলো সিরিয়ালে আছে সেগুলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মস্থলগামী যাত্রী নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছে। তবে আজও যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ন্ত্রণ করতে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচলনা করা হচ্ছে। এবারের ঈদে অন্যান্য বারের তুলনায় মোটরসাইকেলের চলাচল উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। কর্মস্থল গামী যাত্রী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরী করি। আগামীকাল সকালে আমার ডিউটি আছে সে কারণে আজকেই ঢাকায় যেতে হচ্ছে। তবে যানবাহনের ভাড়াটা বেশি নিচ্ছে কিছুই করার নেই যেতে হবে।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেন, এই ঈদে যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্নে করতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৯টি ফেরি চলাচল করছে। নির্বিঘ্নে যাত্রীরা নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে পারছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন