সীমানা পিলার নিয়ে জটিলতার সমাধান না হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে ‘জাতীয় টাস্কফোর্স’
মো: হাফিজুর রহমান মিন্টু, নারায়ণগঞ্জ থেকে
নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীক শীতলক্ষ্যা নদীকে বাঁচাতে একের পর এক পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বরং দিনের পর দিন চলছে দখল আর দূষণ প্রতিযোগিতা।
এখন শীতলক্ষ্যা নদীর পানি ব্যবহারের উপযুক্ততা হারিয়ে ফেলেছে রঙ ধারণ করেছে পিতবর্ণ। এছাড়া নদীর সীমানা পিলার নিয়ে সৃষ্ট নানামুখী জটিলতার সমাধান না হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে শীতলক্ষ্যা নদী রক্ষায় গঠিত ‘জাতীয় টাস্কফোর্স’। সমস্যা নিরসনে বারবার উদ্যোগ নিয়েও সমস্যা সমাধান করা যায়নি। ফলে নদীর অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদে নেই কোনো অগ্রগতি। তবে শীতলক্ষ্যাকে দখলমুক্ত করতে এবার নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, নদীগুলো দখলমুক্ত করতে সাহসের প্রয়োজন। এ জন্যই এই কঠিন কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দেয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস, নৌবাহিনী মাঠে নামলে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে। কারণ দেশের বড় বড় রাঘব বোয়ালেরাই নদী দখল করে অবকাঠামো গড়েছে। এগুলো উচ্ছেদ করতে সাহসের প্রয়োজন আর এ সাহস আমাদের নৌবাহিনীর আছে।
নরসিংদীর টোকবর্মী থেকে মুন্সীগঞ্জের মহনা পর্যন্ত ৬৫ মাইলের দীর্ঘ অসংখ্য খাড়ি বেষ্টিত শীতলক্ষ্যা নদীর পরিচিতি শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও রয়েছে। একসময় ইংল্যান্ডের ওষুধ ফ্যাক্টরিগুলোর ওষুধ তৈরির কাজে এই শীতলক্ষ্যা নদীর পানি ব্যবহার করা হতো। অথচ দখল আর দূষণের কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে শীতলক্ষ্যার পরিবেশ-প্রতিবেশ। একদিকে দখলদারদের তালিকা হয় অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রভাবে তারা পার পেয়ে যায়। এছাড়া প্রতিদিন হাজার হাজার গ্যালন শিল্পবর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। নৌ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৭০টি শিল্প কারখানা দূষণের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ তো দূরের কথা বহালতবিয়তে প্রতিনিয়ত বিষ ছড়াচ্ছে এসব কারখানা। এছাড়া নদী দখল করে চলছে ইট, বালু ও পাথরের জমজমাট ব্যবসা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নদীর তীর অবৈধ দখলরোধে ঢাকার চার পাশে ৪ হাজার ৬৩টি এবং নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যার তীরে ৫ হাজার ১১টি ‘সীমানা চিহ্নিতকরণ পিলার’ বসানো হয়, যার বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গেছে।
নদী-খাল থেকে অবৈধ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে ‘জাতীয় টাস্কফোর্স’ গঠন করে। ২১ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটির এ টাস্কফোর্সের প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পান নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মুহাম্মদ নিজামউদ্দিন আহমেদ। এ টাস্কফোর্সের প্রধান দায়িত্ব নদীর নাব্যতা ফেরানো এবং স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখা। আর বিআইডব্লিউটিএকে দখলকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে নানা জটিলতায় কোনো কাজই করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
তবে দায়িত্ব পাওয়ার পরই নৌবাহিনী নদী দূষণমুক্ত করতে তিন স্তরের পরিকল্পনা ও কিছু সুপারিশসহ কর্মপরিকল্পনা জমা দেয় মন্ত্রণালয়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এক বছরব্যাপী স্বল্পমেয়াদি, তিন বছরব্যাপী মধ্যমেয়াদি ও পাঁচ বছরব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বলা হয়।
নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শীতলক্ষ্যা নদীর তলদেশে ১০ ফুটের বেশি পলিথিনসহ নানা ধরনের বর্জ্য জমা হয়েছে। আর অবৈধ দখলের কারণে নদী তার স্বাভাবিক চরিত্র ও গতিপ্রবাহ হারিয়েছে। নদীগুলো উদ্ধারে প্রথমে দূষণমুক্ত ও পরে দূষণ ঠেকাতে উদ্যোগ নেয়া জরুরি। প্রয়োজনে লন্ডনের টেমস নদী সংরক্ষণের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন