ফারুক হোসাইন
অনিয়ম ও আইনবহির্ভূত কাজের জন্য লিংক থ্রি টেকনোলজিসকে শোকজ করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। আইনবহির্ভূতভাবে ক্যাপিটাল ও শেয়ার বৃদ্ধি, প্রাইভেট কোম্পানি থেকে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তর এবং শেয়ার হস্তান্তর করায় ন্যাশনওয়াইড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) এই প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। সরকারের অনুমোদন ব্যতিরেকে আইনবহির্ভূত কাজ করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কেন প্রশাসনিক জরিমানাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এসব অনিয়ম ও আইনবহির্ভূত কাজের ব্যাখ্যা দিতে ৩০ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। অন্যথায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে বিটিআরসির ২০০তম কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, আইএসপি লাইসেন্সধারী লিংক থ্রি টেকনোলজিস প্রতিষ্ঠানটি কমিশন/সরকারের অনুমোদন ছাড়াই আইনবহির্ভূতভাবে পেইড-আপ ক্যাপিটাল তিনবার ও অথোরাইজড শেয়ার ক্যাপিটাল একবার বৃদ্ধি করেছে। প্রতিষ্ঠানটিকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর এবং এর ফলে শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা দুইজন থেকে সাতজন করা হয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডার আবু সায়ীদ মজুমদারের সম্পূর্ণ শেয়ার ইনতেখাব আহমেদ চৌধুরীর নামে হস্তান্তর করা হয়েছে।
যদিও কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মূলধনে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১-এর ৩৭(২)(ঝ)-এর বিধানে বলা হয়েছে, লাইসেন্সধারী কোনো কোম্পানি, সমিতি বা অংশীদারী কারবারের শেয়ার মূলধনে বা মালিকানায় এমন কোনো পরিবর্তন যার ফলে লাইসেন্স দ্বারা অনুমোদিত কাজকর্মের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরিত হয়, অথবা অন্য কোনো কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের সাথে একীভূত হলে অবশ্যই কমিশনের পূর্বানুমতি নিতে হবে। পূর্বানুমতি গ্রহণে কমিশনের সুপারিশের প্রেক্ষিতে সরকার বিবেচনা করবে যে, প্রস্তাবিত পরিবর্তন বা একীভূতকরণের ফলে যে ব্যক্তি, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের নিয়ন্ত্রণ লাভ করবে, সেই ব্যক্তি, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান ওই লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য কি না এবং অনুমতি প্রদানের ফলে লাইসেন্সকৃত কাজকর্ম ব্যাহত হবে কি না তা কমিশন বিবেচনা করবে।
কমিশন সূত্রে জানা যায়, লিংক থ্রি টেকনোলজিস ২০০০ সালের ২০ মে যুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত হয়। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির দু’জন শেয়ারহোল্ডার ছিলেন চেয়ারম্যান শেখ রায়হান আহমেদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজ্জাদ হায়দার পাশা। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি তাদের কোম্পানির পেইড আপ ক্যাপিটাল ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে। ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটি তাদের অথোরাইজড শেয়ার ক্যাপিটাল ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। এর কিছুদিন পরই ৩০ এপ্রিল পুনরায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার ক্যাপিটাল ১ কোটি ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা এবং ৮ মে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে। একই বছরের ৩০ মে ব্যবসা সম্প্রসারণের কারণে প্রতিষ্ঠানটি প্রাইভেট লিমিটেড থেকে পাবলিক লিমিটেডে রূপান্তর করা হয় এবং পাবলিক লিমিটেডের বিধান অনুযায়ী ২ জন শেয়ারহোল্ডার থেকে ৭ জনে বর্ধিত করা হয়। পরবর্তীতে আরো ২৩ কোটি ১৮ লাখ ৬ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে। ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর আবু সায়ীদ মজুমদার তার সম্পূর্ণ শেয়ার ইন্তেখাব আহমেদ চৌধুরীর নিকট হস্তান্তর করেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ আগস্ট ৯৮০ কোটি টাকার স্টক ডিভিডেন্ট ইস্যু করে লিংক থ্রি তাদের পেইড আপ ক্যাপিটাল পুনরায় বৃদ্ধি করে।
এর আগে ন্যাশনওয়াইড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ডাটা এডজ লিমিটেড কমিশনের অনুমোদন ব্যতিরেকে শেয়ার অবকাঠামো পরিবর্তন, শেয়ার মূলধন বৃদ্ধি এবং পরিচালক পর্ষদের পরিবর্তন করায় প্রশাসনিক জরিমানা করা হয়। ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর কমিশনের ১৯২তম সভায় প্রতিষ্ঠানটিকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অনুমোদন ছাড়াই একাধিকবার শেয়ার হস্তান্তর করায় কমিশনের ১৯৭তম সভায় সেন্ট্রাল জোন আইএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান মিরাই কোম্পানিকে শোকজ এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
জানতে চাইলে লিংক থ্রির চিফ টেকনিক্যাল অফিসার রাশেদ আমিন বলেন, ক্যাপিটাল ও শেয়ার বৃদ্ধি, প্রাইভেট কোম্পানি থেকে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তর এবং শেয়ার হস্তান্তর করলে কমিশনের অনুমোদন প্রয়োজন হয় এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এটি করার পরই আমরা জানতে পারি সাথে সাথেই বিটিআরসিতে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিটিআরসির সচিব মো: সরওয়ার আলম বলেন, আইনবহির্ভূতভাবে বেশ কিছু কাজ করায় কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লিংক থ্রি’কে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে তাদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তারা কি জবাব দেয় এবং অপরাধের ধরনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কমিশন সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন