রাজধানী ঢাকা এখন বায়ু দুষণ, শব্দ দুষণ, পরিবেশ দুষণের শহর হিসেবে পরিচিত। ক্রমান্বয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়া এই রাজধানী শহরে বসবাসের জন্য প্রতিদিন যোগ হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। তথ্য প্রযুক্তিতে দেশ অনেক এগিয়ে গেলেও নাগরিক সেবা তেমন বাড়েনি। সেবা বাড়ানোর লক্ষ্যে ঢাকা সিটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। অথচ নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির বদলে কমেছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুরুষের পাশাপাশি নারী কর্মজীবীর সংখ্যা দেশে বেড়েছে। পুরুষের পাশাপাশি লাখ লাখ কর্মজীবী নারী প্রতিদিন রাজধানীকে গণপরিবহণে যাতায়াত করেন। কিন্তু তাদের জন্য বাথরুম সুবিধা এবং বাসের জন্য অপেক্ষা করার মতো যাত্রী ছাউনি নেই। ফলে সকালে ঘর থেকে বের হলেই অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। রাজধানী দুই সিট কর্পোরেশনের হিসেবে মতে ঢাকায় সবমিলে যাত্রী ছাউনি রয়েছে দেড়শ। দুই সিটি কর্পোরেশন এবং কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এগুলো নির্মাণ করেছে। অথচ রাজধানীতে এখন বসবাস করেন প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। এর মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ গণপরিবহণে যাতায়াত করেন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ ঘর থেকে বের হলে মহানগরীতে মৌলিক সেবা থেকে বঞ্ছিত। অথচ ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগেও মানুষ সেবা পেয়েছে। পরিসংখ্যান বুরে্যার তথ্য মতে ১৯৯১ সালে ঢাকায় বসবাস করতো ৬৪ লাখ ৮৭ হাজার মানুষ। তার কয়েক বছর আগে আশির দশকে সে সংখ্যা ছিল অর্ধকুটি। তখন স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনামলে কয়েকশ যাত্রী ছাউনি দেখা গেছে। ক্ষমতাসীন দলের একটি গণমাধ্যম ঢাকায় ৫শ যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করেছিল। অর্ধকোটি লোকের ঢাকায় তখন যাত্রীরা যাত্রী ছাউনিতে বাসের অপেক্ষা, টয়লেট সুবিধা পেলেও এখন আধুনিক যুগে লাখ লাখ যাত্রীকে অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যেতে হচ্ছে। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের অবস্থা এমন যে পায়খানা-প্রসাব বাসায় করে বের হলে যতঘন্টা বাইরে থাকবেন ততঘন্টা সেটার সুযোগ পাবেন না। ঢাকায় শত শত কোম্পানীর বাস চলাচল করে। পরিবহণ কোম্পানীর মালিকরা প্রতিবছর বাস ভাড়া বাড়ায় রাস্তায় টেবিল বসিয়ে টিকেট বিক্রি করে; অথচ যাত্রীদের জন্য কোথাও ছাউনি নির্মাণ করে না। এ যেন বিভীষিকাময় শহর রাজধানী ঢাকা। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে যেসব স্থানে যাত্রী ছাউনি রয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগই পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নগরবিদরা বলছেন রাজধানী ঢাকায় প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বাস। এখানে শত শত বাস রুট। দুই সিটিতে কমপক্ষে এক হাজার থেকে দেড় হাজার যাত্রী ছাউনি প্রয়োজন।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, এখন নগর পরিবহন চালু হচ্ছে। নগর পরিবহনের যে রুটগুলো আছে, সে রুটগুলোতে নির্ধারিত মাপে, নির্ধারিত স্থান দেখে একাধিক যাত্রী ছাউনি তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৩২টি হয়েছে এবং বাকিগুলো ক্রমান্বয়ে হবে। এর বাইরে কোন যাত্রী ছাউনি থাকবে না। এর বাইরে যে যাত্রী ছাউনিগুলো থাকবে সেগুলো নিলামে বিক্রি করে দেয়া হবে অথবা আস্তে আস্তে সরিয়ে নেয়া হবে। সুনির্দিষ্ট সংখ্যক নগর পরিবহনের জন্য ইতিমধ্যে তিনটি রুট চালু হয়েছে। তিনটি রুটে ৩২টি যাত্রী ছাউনি ফিক্সড করা হয়েছে, এ মাসে আরও ৬টি সম্পন্ন হবে। এরকম ২২টি রুট চালু হবে এবং এ স্ট্যান্ডার্ডে যাত্রী ছাউনিগুলো থাকবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, আমরা যাত্রী ছাউনিগুলো আধুনিকায়ন করার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এ কাজ শেষ হলে দেখা যাবে সবগুলো যাত্রী ছাউনিই আধুনিক এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি হয়ে যাবে। এটা নিয়ে আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে কাজ করছি।
বাসের জন্য যাত্রীরা অপেক্ষা করবেন যাত্রী ছাউনিতে। এটাই স্বাভাবিক। তবে বাস্তব চিত্র ঠিক তার ১৮০ ডিগ্রি অবস্থানে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাত্রী ছাউনিগুলো পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড় কিংবা মলমূত্র ত্যাগের স্থানে, কোথাও কোথাও দেখা মেলে পাগল ও ভবঘুরের, মাদকসেবীরাও আড্ডা জামান এই স্থানে। কোন কোন যাত্রী ছাউনি আবার রূপান্তরিত হয়েছে দোকানপাটে। অনেক যাত্রীরাই ভয়ে বঞ্চিত হচ্ছেন এই সেবা থেকে। অন্যদিকে রাজধানীর অনেক স্থানে নতুন নতুন বাস বে এবং যাত্রী ছাউনি নির্মিত হলেও সেখানে যাত্রীদের দেখা নেই। তারপরও নতুন নতুন যাত্রী ছাউনি নির্মানেই মনযোগ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। অন্যদিকে সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অভাবেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। সেই সঙ্গে এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের দিকেও জোর দিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের খুব কাছেই অবস্থান তিনটি যাত্রী ছাউনির। শাপলা চত্ত্বরের বাংলাদেশ ব্যাংকের কোল ঘেঁষে একটি যাত্রী ছাউনি আছে। যার অস্তিস্ত টের পাওয়া যায় ফুটপাথে হাঁটা চলা করলে। কারণ এই ছাউনির সামনেই পার্ক করে রাখা হয় বেশ কিছু বাস। যার একটু সামনেই এগিয়ে যাত্রীরা বাসে ওঠেন। তার উল্টোদিকে সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন একটি ছাউনি থাকলেও তা ব্যবহার হচ্ছে হকারদের পণ্য বিক্রির কাজে। এছাড়া হীরাঝিলের সামনে আছে আরেকটি যাত্রী ছাউনি। সেখানে কোন বাসও থামে না, কোন যাত্রী ব্যবহারও করে না। মতিঝিলের জীবন বিমা যাত্রী ছাউনিতে রীতিমতো বিক্রি হচ্ছে ভাত-তরকারির ভ্রাম্যমান দোকান। ছাউনিতে বসার জায়গাটা দাঁড়িয়েছে হোটেলের কাস্টমারের সিটে।
শুধু মতিঝিল এলাকাতেই নয়, পল্টনে সচিবালয় সংলগ্ন একটি যাত্রী ছাউনিতে বিভিন্ন রকমের দোকানে সাজানো। তার উল্টোদিকের চিত্রও একই। অথচ পল্টন থেকে জিরো পয়েন্টের মাঝে এই রাস্তার দু’পাশে দু’টি যাত্রী ছাউনির অবস্থান থাকলে পল্টন মোড়েই দেখা যায় জনস্রোত। গাড়ির জন্য যাত্রীরা অপেক্ষা করেন সেখানেই। এ কারণে সারাদিনই এই এলাকায় ব্যাপক যানজট দেখা যায়। অন্যদিকে বনানীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অফিসের অবস্থান হওয়ায় সেখানেও জনসমাগম বেশি। বনানীতে সুন্দর পরিপাটি বাস বে এবং যাত্রী ছাউনি থাকার পরও সেখানে বাস থামার কোন বালাই নেই। এছাড়া চলন্ত অবস্থায়ও বাসে ওঠানামা করছেন যাত্রীরা। এতে জীবনের ঝুঁকি ছাড়াও বিঘ্ন ঘটে স্বাভাবিক যান চলাচলে। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুঘর্টনাও ঘটতে পারে। হঠাৎ করেই বাস থেকে যাত্রী নেমে বাইকের সামনে এসে যায়। আবার অনেকে আকস্মিক ফুটপাত থেকে দৌড় দেয় বাসে ওঠার জন্য। এতে প্রায়ই দুঘর্টনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। অনেক দুঘর্টনা ঘটছেও। যাত্রীরা তো আছেই। চালকরাও নিদির্ষ্ট স্টপেজে বাস থামায় না। তারা অন্য গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য রাস্তার মাঝেই আড়াআড়িভাবে থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। যা কোনো মতেই কাম্য নয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, নির্ধারিত জায়গা থেকে যাত্রী ওঠানামা নিশ্চিতের ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে। এর ব্যতয় ঘটলে জরিমানা করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় অভিযানও পরিচালিত হয়েছে এবং তা চলমান থাকবে।
অথচ রাজধানীর রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে প্রায় দেড় শতাধিক যাত্রী ছাউনি রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে সিটি করপোশনের রয়েছে প্রায় ১০০টির মতো। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্র জানিয়েছে, তাদের অধীনে মোট যাত্রী ছাউনি আছে ৬১টি। অন্যদিকে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশেনের আওতাধীন বিভিন্ন সড়কে বিভিন্ন সময়ে করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে, বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তায় ও বিজ্ঞাপন সংস্থার অর্থায়নে যাত্রী ছাউনি তৈরি করা হয়। যার সুনির্দিষ্ট তথ্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কাছে নেই। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা অন্য কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা যাত্রী ছাউনি রয়েছে ৫০টিরও বেশি।
অথচ এগুলোর অধিকাংশই ব্যবহার করতে পারছে না সাধারণ যাত্রীরা। আর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি। সরেজমিনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ যাত্রী ছাউনিতেই যাত্রীদের বসার মতো অবস্থা নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ডিএমপির বাস স্টপেজ সংলগ্ন যাত্রী ছাউনিগুলোর অধিকাংশের বসার চেয়ারগুলোর বিভিন্ন অংশ, উপরের ছাউনি খুলে নিয়ে গেছে। কোনো কোনো যাত্রী ছাউনি পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড় কিংবা মলমূত্র ত্যাগের স্থানে। এগুলো সবসময় অপরিচ্ছন্ন থাকায় স্থান করে নিয়েছে পাগল ও ভবঘুরেরা। কোনো কোনো যাত্রী ছাউনিতে রাতে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। আবার অনেকগুলো দখল করে কেউ কেউ বসিয়েছেন দোকান। যেখানে যাত্রীদের অবস্থান নেওয়ার কথা সেখানে আসতে যাত্রীরাই ভয় পাচ্ছেন কিংবা এ অব্যবস্থাপনার কারনে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এসব যাত্রী ছাউনি থেকে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মহাখালী, বনানী, বিমানবন্দর সড়ক, মিরপুর সড়কসহ বেশকিছু সড়কে দেখা গেছে যাত্রী ছাউনিতে যাত্রীরা বসছে না। অধিকাংশই মেরামতের প্রয়োজন। সেখানে হকার, ভবঘুরে মানুষ থাকছে নিয়মিত। এসব যাত্রী ছাউনির সামনে বাস স্টপেজ থাকলেও, সেখানে বাস থামে না।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাংলামোটর, শাহবাগ, আজিমপুর, গুলিস্তান, মৌচাক, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, মালিবাগসহ বেশ কয়েকটি স্থানের যাত্রী ছাউনিগুলো হয় দখল করে বাসের কাউন্টার, দোকান তৈরি করেছে না হয় যাত্রীদের ব্যবহার উপযোগী নেই দখল করে আছে ভবঘুরেরা।
দুই বছর আগে রাজধানীতে যাত্রীসেবা বৃদ্ধি ও গণপরিহনের নৈরাজ্য ঠেকাতে রাস্তার পাশে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় স্থানে ছাউনি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্পের অধীনে যাত্রী ছাউনি প্রকল্পটির ১৯টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছিল। যদিও এ সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল।
২০১৯ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের চাহিদা মোতাবেক ঢাকা দক্ষিণকে ৭০টি ও উত্তরকে ৬০টি বাস স্টপেজ ও যাত্রী ছাউনি নির্মাণের জন্য তালিকা দেওয়া হয়। এ তালিকা অনুযায়ী দক্ষিণ সিটিতে ২০১৯ সালে মেগা প্রকল্প হতে ৩০টি এবং কেইস প্রকল্প হতে ১০টি যাত্রী ছাউনি নির্মান করা হয়েছে। দুটি প্রকল্পের আওতায় মাত্র ৪০টির নির্মাণকাজ শেষ করেছে। রাসরুট র্যাশনালাইজেশনের আওতায় ঘাটারচর-মোহাম্মদপুর-মতিঝিল-সায়েদাবাদ-শনির আখরা পাইলট বাসরুটে ২১টি নতুন যাত্রী ছাউনি নির্মান করা হয়েছে। এছাড়াও বাসরুট র্যাশনালাইজেশন কমিটি কর্তৃক নির্দেশিত নতুন বাসরুট সমূহের চিহ্নিত স্থানগুলোতে যাত্রী ছাউনি নির্মানের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। দক্ষিণ সিটিতে কেইস প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি যাত্রী ছাউনিতে নির্মান ব্যয় হয়েছে ৬ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত ১০টি ছাউনি নির্মানে মোট ব্যয় ৫৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে উত্তর সিটিতে বর্তমান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর ৫টি যাত্রী ছাউনি নির্মান হয়েছে এবং ডিএসসিসির আওতাধীন কেইস প্রকল্পের আওতায় নির্মিত যাত্রী ছাউনি সমূহের মধ্যে ৯টি ক্ষতিগ্রস্থ যাত্রী ছাউনি মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে। যা মেরামত ব্যয় ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রতিটি দৃষ্টিনন্দন যাত্রীছাউনি নির্মানে আকৃতিভেদে ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এছাড়া ডিএনসিসির আওতাধীন সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৫০টি যাত্রী ছাউনি মেরামত কাজ বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদারদের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে অঞ্চল-২ ও অঞ্চল-৩ এর আওতাধীন বিভিন্ন সড়কে যাত্রী ছাউনি নির্মান কাজ চলমান রয়েছে।
এসব যাত্রী ছাউনির পাশে উন্নত ফুটপাত, বিশুদ্ধ খাবার পানি, ওয়াইফাই, টি-স্টল ও মোবাইল ফোন চার্জের ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও এমন কোনও কিছু দেখা যায়নি কোনো যাত্রী ছাউনিতে। এগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি রয়েছে বাস কাউন্টার, দোকানের দখলে আর অধিকাংশই ব্যবহার অনুপোযোগী। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক মেগা প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে বাকি ৩০টি যাত্রী ছাউনি, এগুলোর বর্তমান চিত্রও এমন।
কিন্তু সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, দক্ষিণ সিটিতে মোট ৬১টি যাত্রী ছাউনির মধ্যে ব্যবহার উপযোগী অবস্থায় আছে ৫২টি। অন্যদিকে উত্তর সিটি সূত্র জানায়, ইতিপূর্বে বাস্তবায়িত যাত্রী ছাউনি সমূহ অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশেনের বিভিন্ন সড়কে অবস্থিত। বিজ্ঞাপনী সংস্থা কর্তৃক নির্মিত অধিকাংশ যাত্রী ছাউনি সমূহ দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী অবস্থায় রয়েছে। তবে এর সঠিক কোন সংখ্যা জানাতে পারেনি সংস্থাটি।
তবে শুধু যাত্রী ছাউনি নির্মান করলেই হবে না বরং এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের দিকে জোর দিয়েছেন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, যাত্রী ছাউনি যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামত করা হয় আর যাত্রীদের ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় তবেই সাধারণ মানুষ সুফল পাবে। এজন্য সিটি করপোরেশনকে পরিকল্পিতভাবে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ ও এর সঠিক ব্যবস্থাপনায় হাত দিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন