শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ডেঙ্গুর ভয়াবহতার আশঙ্কা

নিয়ন্ত্রণে মাঠে দুই সিটি করপোরেশন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০২২, ১২:৩১ এএম

রাজধানীতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হাসপাতালগুলোতেও ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন কিন্তু বুঝতে পারছেন না তারা ডেঙ্গু আক্রান্ত এমন রোগীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও ঘরে বসেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ১৫৯টি বাড়িতে এডিস মশা অতিরিক্ত মাত্রায় চিহ্নিত হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ, বংশবিস্তার ও প্রজনন ধ্বংস করতে না পারলে এবার আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় প্রাক মৌসুম এডিস সার্ভে-২০২২ শীর্ষক জরিপে রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড এবার ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। রাজধানীর দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডের ১১০টি স্থানে ডেঙ্গুর প্রকৃত অবস্থা নিয়ে মাঠপর্যায়ে সমীক্ষা চালিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। জরিপে উত্তর সিটির ৬৩টি এবং দক্ষিণ সিটির ৯৬টি বাড়িতে এডিস মশা অতিরিক্ত মাত্রায় চিহ্নিত হয়েছে। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো রেকর্ড পরিমান। ওই বছর লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭৯ জন। ২০২০ সালে ১২ জন মারা যায়। ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে শুধু আগস্ট মাসেই মারা যায় ৩০ জন। বেসরকারি হিসাবে ২০২১ সালে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে প্লাস্টিক ড্রামে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সেখানে ২০২২ সালে মৌসুম পূর্ব জরিপে লার্ভার পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তারা মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের নানা প্রক্রিয়া নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, দুই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে করপোরেশনগুলো। প্রথমত বছরব্যাপী, দ্বিতীয়ত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনাটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনাটি যাচাইবাছাই চলছে। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় ও মেয়রের নেতৃত্বে ৩টি সভা হয়েছে। সেখান থেকে এ ব্যাপারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বছরব্যাপী কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে খাল পরিষ্কার করার কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। এছাড়াও এলাকা ধরে পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন সকাল-বিকাল ৪ ঘণ্টা করে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। পাশাপাশি বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান বা চিরুনি অভিযানও পরিচালনা করা হচ্ছে। জনসচেতনতা কর্মসূচির ওপর সর্বোচ্চ জোর দিয়ে পথসভা, লিফলেট বিতরণ, মাইকিং করা হচ্ছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে। বাড়ানো হয়েছে বরাদ্দ, যান, যন্ত্রপাতি ও কর্মী বাহিনী।
মধ্যম মাত্রার ডেঙ্গু ঝুঁঁকিতে থাকা ডিএসসিসির ওয়ার্ডগুলো হলো- রাজারবাগ ও চামেলীবাগ এলাকা নিয়ে গঠিত ১৩ নম্বর ওয়ার্ড; ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা এবং পূর্ব রায়েরবাজার নিয়ে গঠিত ১৫ নম্বর ওয়ার্ড; শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলা মোটর এলাকা নিয়ে গঠিত ২১ নম্বর এবং লালবাগ ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ২৩ নম্বর ওয়ার্ড। মধ্যম মাত্রার ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকা ডিএনসিসির ওয়ার্ডগুলো হলো- পল্লবী ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ৬ নম্বর ওয়ার্ড, মহাখালী ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ২০ নম্বর ওয়ার্ড এবং লালমাটিয়া ও মোহাম্মদপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ড। ব্রুটো ইনডেক্স অনুযায়ী, এসব এলাকায় মশার ঘনত্ব ১০ থেকে ১৯ শতাংশ। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো ডিএসসিসির- ৮, ১৪, ২০, ৩৫, ৪৬ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ড এবং ডিএনসিসির- ১০, ১৩, ১৬, ২৭, ৩০ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার জানান, এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুর বিস্তার ধ্বংস করতে না পারলে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। এডিস ধ্বংস করতে না পারলে আক্রান্তের সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার অধীনে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার ঘনত্বের প্রাক মৌসুম জরিপ-২০২২ এর প্রধান ছিলাম। এতে দেখা যায়, জমা পানিতে মশার লার্ভা জন্মানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বহুগুণ বেশি। ফলে ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত উদ্বেগ বাড়াচ্ছে নগর প্রশাসনের।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সাবেক নবজাতক ইউনিট প্রধান ও বারডেম হাসপাতালের (শিশু-২) শিশু বিভাগ প্রধান অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, বৃষ্টির এ সময় কারও জ্বর হলে ডেঙ্গুর সম্ভাবনাটা মাথায় রেখেই চিকিৎসা করাতে হবে। রক্তসহ যা যা দরকার, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু যদি একবারের বেশি কারও হয়, তাহলে জ্বরের তীব্রতার সঙ্গে সার্বিক জটিলতা ভয়াবহ আকারে হতে পারে।
তিনি জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত যে কোনো বয়সি ব্যক্তির ক্ষেত্রেই ঝুঁকি থাকে। ডেঙ্গুর কোনো ওষুধ নেই। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি মাত্র। ডেঙ্গুর জীবাণু তার মতো করেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে হানা দেয়। ডেঙ্গু যদি জটিল হয়, তাহলে এর চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় লাখ লাখ টাকা খরচ করার পরও আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন অনিশ্চত থাকে। দেশে চিকিৎসাসামগ্রী অপ্রতুল। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সচেতনা বৃদ্ধি, প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও সচেতনতার বিষয়ে বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। মশারি ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে এখন থেকেই। দরজা, জানালায় অস্থায়ী নেট লাগানোও জরুরি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন