মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ইসলাম বিদ্বেষী তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের ফ্যাশন হয়ে গেছে। আশপাশের দেশের অর্থে তারা এসব করছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই ইসলাম, দেশ ও মানবতার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়। কৌশলে আলেম- ওলামাদের দাবিয়ে রাখতে ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটভিত্তিক অপপ্রচার চালায়। ১১৬ জন আলেম ও ১ হাজার মাদরাসার তালিকা তৈরি করে অপপ্রচার সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। যারা তালিকা তৈরি করেছে, তারা নিজেরাই গণধিকৃত। সমাজে তিরস্কৃত ব্যাক্তি। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত কথিত গণকমিশন সম্প্রতি দেশ বরেণ্য আলেম ও ধর্মীয় বক্তাদের বিরুদ্ধে দুদকে কাল্পনিক, মিথ্যা, বানোয়াট ওভিত্তিহীন অভিযোগের প্রতিবাদে বিভিন্ন ইসলামী দলের সভা সমাবেশ এবং বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ গতকাল এসব কথা বলেন।
পীর সাহেব চরমোনাই ঃ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই ইসলাম, দেশ ও মানবতার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ইসলামপন্থিদের কৌশলে দাবিয়ে রাখতে ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটভিত্তিক অপপ্রচার চলছে। ১১৬ জন আলেম ও ১ হাজার মাদরাসার তালিকা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। যারা তালিকা তৈরি করেছে, তারা নিজেরাই বিভিন্ন অপরাধে অপরাধী ও তিরস্কৃত। সাবেক বিচারপতি মানিক চৌধুরী নিজের দ্বৈত নাগরিকত্ব গোপন রেখে বিচারপতি হয়েছে, যা সংবিধান বিরোধী। দেশে আইন আদালত থাকতে গণকমিশন গঠন দেশের সংবিধান পরিপন্থি কাজ। দেশের ওলামায়ে কেরামের তালিকা করে দুদকে দেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত বিশাল ইসলামী মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্রে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আহম খালিদ হোসাইন, নওমুসলিম ডা. সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম বক্তব্য রাখেন। ইসলামী আন্দোলনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়েছে।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, সবচেয়ে আশ্চয্যের বিষয় হলো যারা ওলামায়ে কেরামদের বিরুদ্ধে লাগছে, সেই তথাকথিত গণকমিশন এর সার্থে সম্পৃক্তদের ইসলামের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম কী জিনিস তাও তাদের বুঝার যোগ্যতা নেই। এমন অপরাধী ও তিরস্কৃত ব্যক্তিরা মাদরাসা ও আলেমদের ভুল ধরার চেষ্টা করছে। ঠিক আছে, আগে তুরিন ও মানিকদের কৃত অপরাধের বিচার আগে করতে হবে। একটি গোষ্ঠি কৃত্রিমভাবে জঙ্গিবাদকে দেশের প্রধান সমস্যা আকারে হাজির করার পাঁয়তারা করছে। দেশে যখন স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের দলীয় হানাহানিতে শতশত মানুষ মারা যাচ্ছে তখন তারা কথিত সাম্প্রদায়য়িকতাকে ইস্যু আকারে উপস্থান করছে। তিনি বলেন, দেশে যখন সরকারদলীয় ব্যক্তি ও সরকারের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির খবরে মানুষ অতিষ্ট তখন এরা উলামাদের আর্থিক লেনদেন নিয়ে হাউকাউ শুরু করেছে। জাতি এই ধান্ধাবাজ অশুভ গোষ্ঠিকে চেনে। কারা এদেরকে অর্থায়ন করে, তাদের মতলব কি তা মানুষ জানে। এরা হলো দুর্নীতির দোসর, লুটপাটের দোসর। এরা মানুষের ভাত ভোটের অধিকার হরণকারীদের ছা-পোষা বুদ্ধিজীবি, এরা দুষ্ট প্রতিবেশির পা-চাটা গোলাম। জনগণ এদেরকে প্রতিহত করবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ঃ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা শায়খ যিয়া উদ্দীন ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী এক বিবৃতিতে বলেছেন ধর্মব্যবসায়ী আলেমদের তালিকা প্রকাশ করার নামে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও তথাকথিত গণকমিশন যে নাটক মঞ্চস্থ করেছে তা হালে পানি না পেলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পরিকল্পিত এই তামাশার মাধ্যমে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্তে লিপ্ত। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ওয়াজ মাহফিলের কালচার নতুন কিছু নয়,বরং আবহমানকাল থেকে চলে আসছে,তাই ঢালাওভাবে এই অঙ্গনের সবাইকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস নতুন ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করে। জমিয়ত নেতৃদ্বয় বলেন, হক্বানী আলেমগণ ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করেন না বরং ধর্মের দাওয়াত দিয়ে মানুষকে প্রকৃত ঈমানদার বানানোর চেষ্টা করেন।এখানে কারো গাত্রদাহ হলে তা ধর্মবিদ্বেষেরই প্রমাণ। নেতৃদ্বয় এসব দুষ্টচক্রের অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঃ দুর্নীতিবাজদের আড়াল করে আলেমদের ভাব মর্যাদা নষ্ট করতে ১১৬ জন আলেমের নাম উল্লেখ করে এবং ১ হাজার মাদরাসার বিরুদ্ধে কথিত ‘গণকমিশন’ দুদকে যে শ্বেতপত্র জমা দিয়েছে তাতে তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। ওলামায়ে কেরামকে জঙ্গি আখ্যাদানের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নেতৃদ্বয় বলেন, দেশবিরোধী একটি চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করতে তথাকথিত গণকমিশনের নামে নতুন চক্রান্তে মেতেছে।
এক বিবৃতিতে নেতৃদ্ব্য় বলেন, দেশের শীর্ষ আলেমদের বিরুদ্ধে গণকমিশন গঠনের এখতিয়ার তাদের মতো বিতর্কিত ব্যক্তিদের নেই। দেশে আইন আদালত থাকতে গণকমিশন গঠন দেশের সংবিধান বিরোধী। ইসলামী আন্দোলনের নেতৃদ্বয় বলেন, দুর্নীতিবাজ এবং দেশের টাকা বিদেশে পাচারকারীদের বিষয়ে তাদের নিরবতা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। যারা এসব উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড করছে, সরকারকে তাদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশঃ আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়তের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় সংগঠনের মহাসচিব আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী সভাপতির বক্তব্যে বলেছেন, তথাকথিত গণকমিশন নামে ইসলামবিদ্বেষী সংগঠনটি বরাবরের মতোই দেশ বরেন্য ওলামায়ে কেরাম ও মাদরাসার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট শ্বেতপত্র প্রকাশ করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এসব মিথ্যা বক্তব্যের কারণে দেশে চরম অশান্তি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া দেশের ওলামায়ে কেরামের বিষয়ে তদন্ত করার অধিকার তাদেরকে কে দিলো? তারা বিশ্ব দরবারে সরকারকে এবং বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমাণ করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। অতএব, যারা এসব উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড করছে, সরকার যেন তাদেরকে শক্ত হাতে প্রতিহত করে। গতকাল শনিবার নগরীর খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদরাসায় এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সোবহানী, মাওলানা জহুরুল ইসলাম, মাওলানা মুফতি কিফায়াতুল্লাহ আযহারী, মাওলানা মুফতি কামাল উদ্দীন, মাওলানা শাব্বির আহমাদ, মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আশেকুল্লাহ, মাওলানা ইউনুস ঢালী, মাওলানা রাশেদ বিন নূর, মাওলানা মুমিনুল ইসলাম, মাওলানা আল-আমীন মুফতী মোরশেদ বিন নুর ও মুফতি ইউনুছ।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঃ
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদিস আল্লামা ইসমাঈল নুরপুরী বলেছেন,ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে তথাকথিত ‘গণকমিশন’ ১১৬ জন আলেমদের ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তালিকার শ্বেতপত্র দুদকে জমা দেয়ার সাহস কিভাবে পেলো তা জাতি জানতে চায়। দেশের এতোগুলো সংস্থা থাকতে তাদেরকে কে এ দায়িত্ব দিলো এবং এতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে তা কোথায় থেকে এসেছে তা দুদককে খুঁজে বের করতে হবে। ইসলাম ও আলেমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সাধারণ মানুষদেরকে আলেমদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।
তিনি গতকাল শনিবার পুরানা পল্টনস্থ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মাসিক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদের পরিচালনায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমীর মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা কুরবান আলী কাসেমী, মাওলানা আব্দুল আজীজ, সাংগঠনিক ও অফিস সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, সাংগঠনিক মাওলানা এনামুল হক মূসা, ড. জিএম মেহেরুল্লাহ, মাওলানা আব্দুল হাসানাত জালালী, বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা নিয়ামাতুল্লাহ, মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া, মাওলানা জহিরুল ইসলাম ও শরীফ হোসাইন।
মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ ঃ কথিত ‘গণকমিশনের বিতর্কিত শ্বেতপত্র প্রস্তুতে কোন দেশ বিরোধী অশুভ গোষ্ঠীর অর্থায়নে হয়েছে কী না তা’ দেশবাসী জানতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কথিত গণকমিশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ নিজের ‘মা’ এর সম্পদ কুক্ষিগত করা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের প্রসিকিউটর থাকাকালীন অবৈধ অর্থের লোভে আসামীর সাথে বোরকা পরে সাক্ষাৎ করার বিষয়টি প্রমানিত হওয়ায় তাকে অপসারণ করা হয়েছে।
আমরা মনে করি কথিত গণকমিশন যে শেতপত্র প্রস্তুত করেছে তা দেশ বিরোধী দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের অর্থায়ন ছাড়া সম্ভব হতে পারে না।
বিবৃতিতে শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যেই বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি এই দেশকে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক ও জঙ্গী মুক্ত করতে পরশপাথর তুল্য আলেম সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।
কথিত শ্বেতপত্রে যে শতাধিক ওলামাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়ন ও ওয়াজের মাধ্যমে তারা ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ঠ করছেন বলা হয়েছে তা ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে দুর্নীতিবাজরা আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়ে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনৈতিকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে এই কমিশন তদন্ত করে শ্বেতপত্র প্রকাশ না করে দেশের আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বিভ্রান্তিমূল অভিযোগ তুলে সংবিধান বিরোধী কাজ করেছে। অবিলম্বে এসব চক্রান্তকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
বাতিল প্রতিরোধ পরিষদ ঃ বাতিল প্রতিরোধ পরিষদের সভাপতি হাজী জালাল উদ্দিন বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, তথাকথিত গণকমিশন ইসলাম ও আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছে। দেশের জনগণ তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন ও সজাগ। এদের ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার অপচেষ্টা জাতি রুখে দিবে। নেতৃদ্বয় বলেন, গণকমিশনের হোতারা সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবাজদের আড়াল করতে আলেম-উলামা ও ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছে এবং দেশে সাম্প্রদায়িক ও সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারা করছে। এসব মতলববাজদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে জনগণ গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে ইনশাআল্লাহ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন