শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দ্রুতগতিতে দেউলিয়াত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে দেউলিয়াত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার চেয়েও বাংলাদেশের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন। অর্থনৈতিক চরম দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষ নিরিবিলি কেঁদেও শান্তি পাবে না। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আলোর গতিতে দৌড়াচ্ছে। গম আমদানী করা যাচ্ছে না, কারণ রপ্তানীকারক দেশ গম রপ্তানী বন্ধ করেছে। চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যাওয়ার পর কয়েকদিনের মধ্যে আটা ক্রয় করা অসম্ভব হবে সাধারণ মানুষের জন্য। সিন্ডিকেটের দৌরাত্বে খাদ্যপণ্যের দামের উর্ধ্বমূখী গতি থামছেই না। খাদ্যপণ্য নিয়ে সবধরণের গভীর সংকটে বাংলাদেশ। উজানের পানি এবং বাঁধ ভেঙ্গে বাংলাদেশের এক বিস্তৃত অঞ্চলের ধান তলিয়ে গেছে। কৃষককুল দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সারাজাতি আকুল উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছে। বাংলাদেশে এক দুর্বিষহ সংকট প্রচণ্ড গতিতে ধেয়ে আসছে। গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নিবর্তনমূলক কালাকানুন করে গণমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করা হচ্ছে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কায়েম এবং অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে সরকার। ডিফেমেশন ল’, অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট, কনটেম্পট অব কোর্ট, আইসিটি অ্যাক্ট, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, গণমাধ্যমকর্মী আইন, ডেটা প্রটেকশন অ্যাক্ট এবং ওটিটি আইনসহ অনেকগুলো নিবর্তনমূলক কালাকানুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গোরস্থানে কবরের মধ্যে শায়িত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের হাত-পা বেঁধে দিয়ে অবরুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরী করা হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী স্বৈরচারী এই সরকার মনে করে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ গণমাধ্যম। স্বার্থপর হিংসুটে সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা শুনলেই উন্মাদ হয়ে উঠে। গণমাধ্যম যাতে ভীতি-আতংকের মধ্যে থেকে অনির্বাচিত সরকারের স্তুুতিতে মত্ত থাকে সেইরকম একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্যারিসভিত্তিক রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ফ্রন্টিয়ার্স (আরএসএফ) এর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনমন ঘটেছে। ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৬২তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে তলানীতে, এমনকি আফগানিস্তানেরও নীচে।
তিনি বলেন, গত বছরের ৫ জুলাই রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ২০২১ সালের ‘প্রেস ফ্রিডম প্রিডেটর্স’ বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণকারী ৩৭ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের যে তালিকা প্রকাশ করেছিলো, তাতে দু’জন নারী ছিলেন। তাদের একজন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তালিকাটিতে দু’টি ভাগ করা হয়। লাল ও কালো। বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ সংবাদমাধ্যম শিকারি ১৬ জনের ‘কালো’ তালিকায় স্থান পায় বাংলাদেশের সরকার প্রধান। কতটা ভীতিকর ও নাজুক পরিবেশে থাকলে আরএসএফের প্রতিবেদনটি পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো মূলধারার গণমাধ্যম প্রকাশ করতে সাহস পায়নি। যদিও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরস্পর শত্রুপক্ষ। এটি স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে যেমন সত্য ছিল এখনো একই অবস্থা বিরাজমান। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকলে সংবাদপত্র থাকেনা আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকলে আওয়ামী লীগ থাকেনা। দেশে অষোষিত স্বৈরাচারী নীতি চলছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার র‌্যাব-পুলিশ এবং আদালতের ভয় দেখিয়ে অঘোষিতভাবে একটি ভয়ঙ্কর স্বৈরাচারী নীতি প্রণয়ন করেছে সেটি হলো-‘শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের কারো বিরুদ্ধে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে কিছু লেখা যাবেনা’।

এই নীতির বাইরে বেরুনোর চেষ্টা করলেই সে রাষ্ট্রযন্ত্রের জুলুম ও হয়রানীর শিকার হয়। বাংলাদেশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যত মামলা হয়েছে তার শতকরা অর্ধেকের বেশী মামলা হয়েছে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য। এই মামলা থেকে নারী-শিশু ও কিশোর’রাও রক্ষা পায়নি।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার নতুন নতুন কালাকানুন তৈরি করছে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব ও অন্য মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ডিজিটাল মাধ্যম ও ওভার দ্য টপ (ওটিটি) মাধ্যমের জন্য নতুন একটি প্রবিধান বা নীতিমালা তৈরি করছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ২০১৮ সালেও জাতীয় নির্বাচনের মাত্র তিন মাস আগে তড়িঘড়ি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়। এবারও আরেকটি নতুন কালাকানুন তৈরীর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা হবে আরও ভয়ঙ্কর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন