সাম্প্রতিককালে আঁশবিহীন ব্যাপক জনপ্রিয় আম হাঁড়িভাঙ্গা। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এখন সুখ্যাতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। সেই হাঁড়িভাঙ্গা আম শোভা পাচ্ছে গাছে গাছে। বাজারে আসতে সময় লাগবে কমপক্ষে আরও ২৫ থেকে ৩০ দিন। আশা করা যাচ্ছে, মধ্য জুনের দিকে হাতের নাগালে আসবে হাঁড়িভাঙ্গা আম।
বাগান মালিক এবং চাষিরা বর্তমানে বাগানে আমের শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। অত্যন্ত নজর কাড়া, সুমিষ্ট এবং আঁশবিহীন এই আম সাধারণত রংপুরের মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকায় হয়ে থাকে। এরমধ্যে পদাগঞ্জ এলাকা হচ্ছে হাঁড়িভাঙ্গা আমের জন্য বিখ্যাত। স্বাদ ও বৈশিষ্টের জন্য সবার কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রফতানি হওয়ায় চাহিদাও বেড়েছে কয়েকগুণ।
কয়েক বছর ধরে ফলন ভালো হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে হাঁড়িভাঙা আম চাষ ও উৎপাদনের পরিধি। এই আম এখন রংপুর জেলার প্রায় প্রতিটি এলাকায় চাষ হচ্ছে। শুধু রংপুরেই নয়, পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান করা হয়েছে অনেক। এখনও পাশ্ববর্তী জেলার শত শত মানুষ হাঁড়িভাঙ্গা আমের চারা নিয়ে যাচ্ছেন।
রংপুর সদরের ভুরারঘাট, রানীপুকুর, ধাপেরহাট এলাকা থেকে শুরু করে মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে শুধু হাঁড়িভাঙ্গা আম গাছের সারি চোখে পড়বে।
বাড়ির চারপাশ ছাড়াও বিভিন্ন ফসলি জমিতে লাগানো হয়েছে হাঁড়িভাঙা আমের গাছ। বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে কাঁচা আমের সুঘ্রান।
একই চিত্র মিঠাপুকুরের আখিরাহাট, মাঠেরহাট, খোড়াগাছ, ময়েনপুর, মৌলভীগঞ্জের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা ছাড়াও বদরগঞ্জের গোপালপুর, নাগেরহাট, কুতুবপুর, কাঁচাবাড়ি, সর্দারপাড়া, রোস্তমাবাদ, খিয়ারপাড়া, রংপুর সদরের সদ্যপুষ্করনী ইউনিয়নের কাঁটাবাড়ি, পালিচড়াসহ অন্যান্য এলাকাতেও। এসব এলাকার লোকজন হাঁড়িভাঙ্গার বাগান করতেই ঝুঁকে পড়েছেন। উঠোন থেকে শুরু করে বাড়ির আশপাশের পতিত জমি এখন আর পতিত নেই। সেগুলোতে লাগানো হয়েছে হাঁড়িভাঙ্গা আমের গাছ।
রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমের গোড়াপত্তন করেছিলেন নফল উদ্দিন পাইকার নামে এক বৃক্ষবিলাসী। প্রায় ৪৫ বছর আগে তিনি মারা যান। এরপর মিঠাপুকুর উপজেলার আখিরারহাট এলাকার আব্দুস সালাম সরকারের হাত দিয়ে রংপুর পেরিয়ে গোটা দেশে সম্প্রসারিত হয় এই আম।
কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর রংপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার হেক্টরেরও অধিক জমিতে হয়েছে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙা আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি।
বাগান মালিকদের কথা, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মৌসুমের শুরুতে প্রায় সব বাগানেই ব্যাপক মুকুল এসেছিল। আমের গুটি বের হওয়ার কিছুদিন পর এবং পরবর্তীতে আরও একদফা শিলাবৃষ্টিতে গাছের অর্ধেক আমই ঝরে পড়েছে। ফলে বাগানে এখন অর্ধেকেরও কম আম রয়েছে। শিলাবৃষ্টি না হলে এবার হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাম্পার ফলন হত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, হাঁড়িভাঙ্গা আম জুনের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ পরিপক্ক হবে। আর তখনই বাগান মালিকরা আম পাড়তে পারবেন। তবে কিছু কিছু গাছে আগাম আম হয়েছে। সেগুলো মধ্য জুনেই পাড়া যাবে। বর্তমানে যে গরম তা অব্যাহত থাকলে মধ্য জুন থেকেই বাজারে মিলবে হাঁড়িভাঙ্গা আম।
বাগান মালিকরা জানান, মৌসুমের শুরুতে হাঁড়িভাঙা আম ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। এক পর্যায়ে ৬০ থেকে ৭০ এবং শেষে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। বাগান মালিকদের অভিযোগ, হাঁড়িভাঙ্গা আম সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। এতে করে মাত্র ১ মাসের মধ্যেই এই আমের মৌসুম শেষ হয়ে যায়। হাঁড়িভাঙ্গা আম খ্যাত পদাগঞ্জ এলাকায় একটি হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন