শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ব্যাংকে টাকা রাখলে প্রতি বছর দুই শতাংশ কমবে

মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

এখন টাকার আমানতে গড় সুদের হার ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকে টাকা রাখলে প্রতি বছর প্রকৃত মূল্য দুই শতাংশ করে কমে যাবে। এটা বড় ধরণের সঞ্চয়বিরোধী। গতকাল সোমবার ‘বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, জাতীয় বাজেট ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক একটি মিডিয়া ব্রিফিংয়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আগামীতে টাকার মান অবশ্যই নিম্নমুখী হবে। অবশ্যই সুদের হার বাড়াতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতিকে ধরে রাখতে হলে, মূল্যস্ফীতিকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ তাদের আয় পণ্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে না। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত এই ব্রিফিংয়ে তিনি মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন। কোর গ্রুপ সদস্য ও সিপিডি’র অপর ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

অনুষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিকভাবে আলোচনায় অংশ নেন একশনএইড বাংলাদেশ পরিবেশ ও জলবায়ু ও সবুজ অর্থনীতি কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুমানা হকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ এতে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

অর্থনীতির তিনটি বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় তার প্রতিবেদনে বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, অন্যদিকে টাকার মূল্যমান কমে যাচ্ছে। যেকোনো অর্থনীতির ভেতরে সুদের হার, বিনিময় হার ও মূল্যস্ফীতির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। একদিকে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, আবার অন্যদিকে টাকার মান অবনমন হচ্ছে। যে প্রত্যাশায় সুদের হার কম রাখা হচ্ছে, সেই বিনিয়োগ কত কয়েক বছরের বেড়েছে এমন কোনো তথ্য নেই। সুদের হার কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে এমন সূত্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য নয়।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির ভিতরে বড় ধরনের টানাপোড়ন দেখা দিয়েছে। বিগত বছরে আমাদের আর্থিক যে আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে, তা সব সময়ই দুর্বল ছিল। দুর্বলতার লক্ষণ হচ্ছে আমাদের কর জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের ওপরে উঠেনি। একই সঙ্গে উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে পরিচালন ব্যয় বা অপারেটিং ব্যয় অনেক বেশি। দেশে কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা হলো-একদিকে অর্থের অভাব, অন্যদিকে সম্পদ থাকলেও তা যথাপোযুক্তভাবে খরচ করতে না পারা।

বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকেই কমার ধারা শুরু হয়েছে। আমাদের বর্তমানে যে মজুদ আছে, তা দিয়ে ৪ থেকে ৫ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না।

বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্য যদি আরও বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের টান পড়বে। অন্যদিকে বাজার স্থিতিশীলতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার ছাড়ার সক্ষমতা থাকছে না। এর ফলে টাকার পতনের ধারা অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে টাকা ও ডলারের বিনিময় হারে বড় ধরণের পার্থক্য হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে সরকার পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়াতে চাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো অনুচিত।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষায় এডিপি বাস্তবায়নের হার কম উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, যেখানে সার্বিক এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪১ শতাংশ, সেখানে ওই তিন খাতে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৫ শতাংশের নিচে। এই কমের হার গত বছরের ৩৭ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। মানে আরও কমেছে।

গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সঞ্চয় কমে যাচ্ছে জানিয়ে সিপিডির এই বিশেষ ফেলো বলেন, এ কারণে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করা উচিত। এর পাশাপাশি প্রান্তিক ও দুঃস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ প্রণোদনা রাখতে হবে। সুরক্ষাভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি। আগামী দিনে ভর্তুকি ও পিছিয়ে পড়া মানুষের প্রণোদনা অব্যাহত রাখা কঠিন বিষয় হয়ে যাবে। ভর্তুকির টাকা যেন মেগা প্রকল্পের খাতে ব্যয় না হয়, সেটি লক্ষ্য রাখতে হবে।

সক্রিয়ভাবে নীতিব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করে এই প্রবীণ অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকার যে ব্যবস্থা নেয়, তা প্রতিক্রিয়ার পরে নেয়। ঘটনার আগে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এক সময় ছিল তথ্যের নৈরাজ্য, এখন তথ্যে বন্ধাত্ব বা অন্ধত্ব চলছে। এর ফলে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

এছাড়া সরকার ছয় দশমিক ২২ শতাংশের যে মূল্যস্ফীতির কথা বলছে, বাস্তবতার সঙ্গে তার আদৌ মিল নেই। এমনকি এ তথ্য বিজ্ঞানসম্মতও নয় বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, সরকার মূল্যস্ফীতির কথা ছয় শতাংশের ওপরে বলে থাকে, যেটি প্রকৃত বাস্তবতার সঙ্গে আদৌ মিলে না। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি। যেমন-ভোজ্যতেলের ও পাম ওয়েলের দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশের ওপরে। আটা-ময়দার মতো পণ্যের দামও ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে মোটা চালের দাম বাড়েনি। কিন্তু মাঝারি বা সুগন্ধি চালের দাম অনেক বেড়েছে।

সার্বিকভাবে তেল,ডাল, ডিম, মুরগি ও মাছসহ ইত্যাদি পণ্যের দাম বাড়ার যে হার দিচ্ছে টিসিবি, তা বিবিএসের দেওয়া তালিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গেও মিলে না। বিবিএস যে মুদ্রাস্ফীতির তথ্য দিচ্ছেন তা বাস্তবসম্মত নয়, এমনকি বিজ্ঞানসম্মতও নয়।

আমাদের ধারণা মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আগামী দিনে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ব বাজারে যে পণ্যের দাম বেড়েছে, সেই পণ্য এখনও দেশের বাজারে আসেনি। সেগুলো যখন আসবে, তখন নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়বে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Ruhul Amin Sumon ১৭ মে, ২০২২, ৫:৩৭ এএম says : 0
একটা বছর বাজেট প্রণয়ন এর দায়িত্ব দেব প্রত্য ভট্টাচার্য sir কে দেয়া হোক, Hope no body will criticise then
Total Reply(0)
MD Uzzal Hossain ১৭ মে, ২০২২, ৫:৩৭ এএম says : 0
দেশের যে অবস্হা শ্রীলঙ্কা হোতে বেশি দেরি নাই। এখন ও সময় আছে। আমার দেশ আমার অহংকার।
Total Reply(0)
Hemal Hussain ১৭ মে, ২০২২, ৫:৩৮ এএম says : 0
উন্নয়নের বাজেট অনেক হয়েছে। এবার দয়া করে বাঁচার বাজেট দিন।
Total Reply(0)
Arman Hossain ১৭ মে, ২০২২, ৫:৩৮ এএম says : 0
জনগনের বাজেট চাই! গুটিকয়েক লোকের পকেট ভারি হবে, জনগনের টাকা লুটেরাজদের পকেটে যাবে এমন বাজেট চাইনা।
Total Reply(0)
Shibly Chowdhury ১৭ মে, ২০২২, ৫:৩৯ এএম says : 0
নির্বাচনের আগে কোন জাতীয় সরকার নয়, দাবি একটাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্তবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে
Total Reply(0)
Kamal Ahmed ১৯ মে, ২০২২, ১০:২৪ এএম says : 0
People want only Caretaker government.
Total Reply(0)
jack ali ২২ মে, ২০২২, ১:৩৭ পিএম says : 0
সুদ এত বড় একটা জঘন্যতম অপরাধ সুদের সত্তুরটা পাপ আছে সব থেকে ছোট পাপ হচ্ছে নিজের মায়ের সাথে যেনা করা নাউজুবিল্লাহ আল্লাহ কোরআনে বলছে যখন কেয়ামত হবে তখন যারা সুদখোর সুদ এর সাথে জড়িত তাদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দেবে ফেরেশতারা এবং বলবে আল্লাহ ও রাসূলের সাথে যুদ্ধ করো তখন কি হবে এই সুদখোর ঘুষখোর ঘুষখোর সরকার আমাদের দেশটাকে ধ্বংস করে ফেলেছে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন