চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় পুলিশ কনস্টেবলকে দা দিয়ে কুপিয়ে হাত থেকে কব্জি বিচ্ছিন্ন করা আসামি কবির আহমদকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাব জানিয়েছে, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনি আহত হয়েছেন। কথিত ওই বন্দুকযুদ্ধে তার বাম পায়ে মারাত্মক জখম হয়েছে। এছাড়া, এই ঘটনায় র্যাবের এক সদস্যও আহত হয়েছেন। ঘটনার পর পাঁচ দিন ধরে বিভিন্ন পাহাড়ে এক সহযোগীকে নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন কবির। আত্মগোপনে যাওয়ার সময় সেই দা-ও সঙ্গে নিয়েছিল। তার হেফাজত থেকেই সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার নগরীর চান্দগাঁও ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দিয়েছেন র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এসময় র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ উপস্থিত ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া এলাকায় পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে কবির আহমদ (৪৩) ও তার সহযোগী কফিল উদ্দিনকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়। কবির আহমদ (৩৫) লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের লালারখীল গ্রামের মৃত আলী হোসেনের ছেলে। কফিলের বাড়িও একই এলাকায়।
গত ১৫ মে লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর লালারখিল ওয়ার্ডে আসামি ধরতে গিয়ে হামলার শিকার হন পুলিশ কনস্টেবল জনি খান। আসামি কবির আহমদ কনস্টেবল জনিকে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে তার বাম হাত থেকে কব্জি বিচ্ছিন্ন করে পালিয়ে যায়। পুলিশ অভিযানে নিয়ে গিয়েছিল কবিরের বিরুদ্ধে মারামারির ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী আবুল হোসেন কালুকেও। পালিয়ে যাওয়ার সময় কবির বাদী কালুকেও কুপিয়ে আহত করে। আহত জনি খান ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে লোহাগাড়া থানায় কবির ও তার স্ত্রী রুবি আক্তার এবং কবিরের মাকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। ঘটনার পরদিন রুবিকে বান্দরবান জেলার লামা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ঘটনার পর থেকে কবিরের অবস্থান নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার আল মঈন বলেন, ঘটনার পরই কবির পালিয়ে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা দক্ষিণ হাঙ্গরে অবস্থান নেয়। দুই দিন পর সেখান থেকে চলে আসে লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া এলাকায়। পাঁচ দিন ধরে পাহাড়েই সহযোগী কফিলকে নিয়ে ছিল কবির। মাদক চোরাচালান ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কবিরের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা আছে। কফিলও প্রতিবেশী দেশ থেকে ইয়াবা এনে বিক্রি করে। তার বিরুদ্ধেও মাদক আইনে ছয়টি মামলা আছে। দু’জন একই চক্রের সদস্য।
কবিরকে গ্রেফতারের সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’র বর্ণনা দিয়ে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার ভেতরে বড়হাতিয়া এলাকায় একেবারে দুর্গম পাহাড়ে কবির ও তার সহযোগী কফিল অবস্থান নিয়েছিল। সেখানে যাওয়ার কোনো রাস্তা ছিল না। জমির আইল ধরে আমরা প্রথমে একটি পাহাড়ে পৌঁছাই। কিন্তু সেখানে তল্লাশি করে পাওয়া যায়নি। তখন আরেকটি পাহাড় থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়। আমরা বুঝতে পারি, আমাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে গুলি করা হয়েছে। আমরা প্রথম পাহাড় থেকে নেমে ওই পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা দিই। যখন কাছাকাছি পৌঁছাই তখন আবার আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। ৫-৬ মিনিট পর আবার গুলি করা হয়। তখন আমরাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করি। আমরা ওই পাহাড় কর্ডন করে ফেলি। প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট গোলাগুলির পর দেখি সুনসান নীরবতা। পাল্টা গুলি আর আসছে না। তখন আমরা গিয়ে কবিরকে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার করি। কফিলকেও গ্রেফতার করি। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ র্যাবে কর্মরত সিপাহী আকরামও আহত হয়েছেন। আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, র্যাব একটি মানবিক ফোর্স। আমরা অপরাধীর প্রতিও সর্বোচ্চ মানবিকতা প্রদর্শন করি।
সেজন্য পুলিশের ওপর নৃশংসভাবে হামলাকারীকেও আমরা মানবিকতা দেখিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই। বর্তমানে কবির চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
র্যাব জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সদস্যকে জখমে ব্যবহৃত দা, একটি ওয়ান শ্যুটার গান, তিন রাউন্ড তাজা গুলি ও তিন রাউন্ড খোসা, ধারালো অস্ত্র ও ১৮০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
মেজর মেহেদী হাসান বলেন, পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় দা-ও সঙ্গে নিয়েছিল কবির। পরে কফিল যখন তার সঙ্গে যোগ দেয়, তখন সে-ও কিছু অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যায়। পাহাড়ে যেখানেই তারা থেকেছে, সেখানে গাছপালা-জঙ্গল কেটে তারপর আস্তানা গেড়েছে। এই দা সেই কাজেও তারা ব্যবহার করেছে। পুলিশ কনস্টেবলকে কুপিয়ে কব্জি বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে কবির যেসব তথ্য দিয়েছে, তাতে মনে হয়েছে এটি একেবারেই পূর্বপরিকল্পিত। সে জানত, মামলা যেহেতু হয়েছে তাকে গ্রেফতার করা হবে। গ্রেফতার করতে এলেই কোপাবে এমন সিদ্ধান্ত সে নিয়েছিল। কবির ও কফিলের বিরুদ্ধে র্যাবের ওপর হামলা, অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন