‘দাম বেশি হওয়ায় রাজধানীতে গোশতের বাজারে আগের মতো ক্রেতা নেই। গরুর গোশত কিছুটা বিক্রি হলেও, খাসির গোশতের ক্রেতা খুবই কম। একটি খাসি কাটলে বিক্রি হতে দিন পেরিয়ে যায়। তাই অতিরিক্ত দাম দিয়ে দোকানে খাসি তুলি না’। কথাগুলো বলেন শনিরআখড়া এলাকার বিসমিল্লাহ্ গোশত ব্যবসায়ী মো. ফরিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আগে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে দুই-একটা গরুর গোশত এক বেলাতেই বিক্রি হয়ে যেত। এখন সারাদিনে ছোট গরুর অর্ধেকই বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দাম বেশি হওয়ার কারণে খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ এখন গরুর বা খাসির গোশত কেনে না। অতিরিক্ত দামের কারণে খাসির গোশত বিক্রি বলতে গেলে বন্ধই করে দিয়েছি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, ফকিরাপুল, শনিরআখড়া, কাপ্তানবাজার, ধোলাইপাড় বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর গোশত প্রতি কেজি ৬৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি। সোনালি, পাকিস্তানি ৩১০ এবং লেয়ার কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা কেজি। পাশাপাশি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ডিম।
ক্রেতারা জানান, এক কেজি গরুর গোশত কিনলে হাড় ও চর্বি বাদ দিলে ৬০০ থেকে সাড়ে ৬৫০ গ্রাম গোশত পাওয়া যায়। দাম বেশি হওয়ায় কোনো কোনো কসাই মাপের সময় কৌশলে বেশি চর্বি দিলে এক কেজি গোশতে আধা কেজি গোশত পাওয়া যায়। অথচ দাম ৬৮০ টাকা কেজি। তাহলে ছোট্ট এক টুকরা গোশতের দাম কত পড়ে? আর খাসি পরিচয়ে রাজধানীতে যে গোশত বিক্রি করা হয় তা মূলত বকরি ছাগল ও ভেড়ার গোশত। এখন প্রতিটি পণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে। সে কারণে এতো দামে গরু ও খাসির গোশত ক্রয় করতে পারি না। তবে আগে সাপ্তাহে একদিন গরুর গোশত খেলে এখন বাচ্চাদের জন্য মাসে একদিন গোশত খাওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর মহাখালী এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে গরু-খাসির গোশত বিক্রি করেন দুলাল মিয়া। বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের চেয়ে আমাদের বিক্রি অনেক কমে গেছে। এত টাকা দিয়ে মানুষ গোশত কিনে খেতে চায় না। গোশতের দাম বাড়তি থাকলে আমাদের লোকসান হয়। কারণ ক্রেতা কমে যায়। বর্তমানে ৬৮০ টাকা কেজিতে গোশত কিনে খাওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক কম।
তিনি আরও বলেন, দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, দোকানের বাজার, গরু কেনাসহ নানা খরচ দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে গেছে। খাসির গোশত ৯০০/৯৫০ টাকা বিক্রি করতে হয়। ফলে ক্রেতা পাই না বললেই চলে। তাই খাসির গোশত বিক্রি ছেড়েই দিয়েছি।
বাজারে গোশত বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বছর আগেও খাসির গোশত বিক্রি হতো ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। বর্তমানে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বলতে গেলে, এক বছরে খাসির গোশতের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেড়েছে।
রাজধানী এলাকার যাত্রাবাড়ি বিক্রেতা ইয়াছিন আলী খান বলেন, গরু কিনে দোকান পর্যন্ত আনতে অনেক ধরনের চাঁদা বা বাজার খরচ দিতে হয়। আবার চামড়া কার্যত পানির দামে বিক্রি করতে হয়। ফলে গোশতের দাম বেশি হওয়ার কারণে বর্তমানে বিক্রি অনেক কমে গেছে। এখন ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গোশতের দাম বাড়ায় আমাদের কোনো লাভ নেই, বরং ক্ষতি। দাম বাড়তি থাকলে মানুষ গোশত খুব কম কেনে। ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারেন না। এতে করে আমাদের লোকসান হয়। কারণ, আমরা ক্রেতা তেমন পাচ্ছি না। বিক্রিও অনেক কম। এসব কারণে রাজধানীর অনেক ছোট ছোট গোশতের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল শনিরআখড়া এলাকার কাঁচাবাজারে সপ্তাহের বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত মো. শহিদুল রহমান। গোশতের দোকানে সামনে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, উৎসব বা আত্মীয় স্বজন আসা ছাড়া সাধারণত গরুর গোশত কেনা আমাদের মতো মানুষের পক্ষে এখন সম্ভব না। দুই-এক মাসে একবার শখ করে গরুর গোশত কেনা হয়। আর খাসির গোশত বাজার থেকে কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের নেই। বলতে গেলে ঈদ ছাড়া খাসির গোশত কেনাই হয় না।
যাত্রাবাড়ি কাঁচাবাজারে এসেছেন গার্মেন্টস কর্মী সুলতান আহমেদ। গোশত কেনা হয় কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত কয়েক মাসের মধ্যে শুধুমাত্র ঈদের সময় গরুর গোশত কিনেছিলাম ৭৫০ টাকা কেজিতে। এরপর আর কেনা হয়নি। আর খাসির গোশত কিনে খাওয়ার কথা তো চিন্তাও করতে পারি না। ব্রয়লার মুরগি কিনে গোশতের চাহিদা মেটাই। তাও প্রতি কেজির দাম পড়েছে ১৬০ টাকা। বাজারে সব জিনিসের দামই বাড়তি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন