শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের বাম্পার ফলন

ঘূর্ণিঝড় অশনি ও শ্রমিক সঙ্কটে ব্যাপক ক্ষতি

এস এম বাবুল (বাবর), লক্ষ্মীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ সয়াবিন উৎপাদন হয় লক্ষ্মীপুরে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আবাদ হওয়ায় এ জেলা সয়াবিনের রাজধানী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এ বছর জেলায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন। জেলায় সয়াবিন প্রক্রিয়াজাত কারখানা স্থাপনের পাশাপাশি সরকারিভাবে সয়াবিন সংরক্ষণের দাবি স্থানীয় সয়াবিন চাষিদের।
কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মী ও কর্মকর্তাদের পরামর্শের পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতার কারণে এ বছর জেলায় সয়াবিনের উৎপাদন ভালো হয়েছে। সয়াবিন চাষে জমিতে বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই বলে অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে জানান কৃষকরা। লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের বাম্পার হলেও ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির পানিতে লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশিরভাগ সয়াবিন গাছ পানিতে পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে কৃষক হয়ে পড়েছে দিশেহারা। টানা বৃষ্টি ও শ্রমিক সঙ্কটের কারণে মাঠ থেকে সয়াবিন তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চয়াবিন চাষিদের।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর লক্ষ্মীপুর ৫টি উপজেলায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ২ হাজার ৩শ’ হেক্টর, রায়পুর উপজেলায় ৫ হাজার ৮শ’ ৮৫ হেক্টর, রামগঞ্জ উপজেলায় ৫০ হেক্টর, রামগতি উপজেলায় ১৬ হাজার ৫শ’ ৬৫ হেক্টর ও কমলনগর উপজেলায় ১২ হাজার ২শ’ হেক্টর।
সরেজমিনে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম চরমনসা গ্রামে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠে সয়াবিন ক্ষেত তলিয়ে আছে পানির নিচে। এতে করে সয়াবিন গাছে পচন ধরছে। কৃষক শ্রমিক নিয়ে হাঁটু সমান পানি থেকে গাছ পাকা সয়াবিন সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনি মোহন এলাকার কৃষক হাফেজ আহম্মেদ, আমান উল্যাহ ও সেকান্তর মিয়াসহ কয়েকজন জানান, সয়াবিন চাষে তাদের বাড়তি ঝামেলা নেই। শুধু জমি চাষাবাদ করে বীজ বপন এবং একটু যত্ন করলেই কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। তারা মহাজনদের কাছ থেকে উৎপাদিত সয়াবিনের ন্যায্য মূল্য পান না। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ফসলের মাঠে পানি জমে গেছে। এতে করে সয়াবিন গাছগুলোয় পচন ধরেছে। এবার প্রতিটি সয়াবিন গাছে থোকায়-থোকায় ফলন এসেছে। টানা বৃষ্টি না হলে লাভবান হতেন।
কৃষক মো. সিরাজ জানান, চলতি বছরে সোয়া কানি জমিতে সয়াবিনের আবাদ করেছেন। এতে তার প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সয়াবিনের ভালো ফলনও হয়েছে। তবে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে লোকশানে পড়তে হবে তাকে। বেশিরভাগ সয়াবিন পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। ছোট বেলা থেকে চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত। সরকার সবসময় কৃষকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়। কিন্তু তিনি কখনও সরকারের সহয়তা পাননি।
সয়াবিন চাষি মো. শামিম হোসেন জানান, এ বছর ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে ১ কানি জমিতে সয়াবিনের আবাদ করেন। ক্ষেতের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ সয়াবিন পাকা। টানা বৃষ্টি ও শ্রমিক সঙ্কটে সয়াবিন ঘরে তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন। বেশিরভাগ শ্রমিক এ সময় ইটভাটায় কাজ করেন। বৃষ্টি না হলে সয়াবিনে লাভবান হতেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. জাকির হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষিরা উন্নতজাতের বীজ বোপন ও সুষম সারের ব্যবহার করেছেন। ফলে এবার সয়াবিনের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর লক্ষ্মীপুরে জেলায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ৩০০ কোটি টাকার বেশি হবে।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে টানা বৃষ্টির কারণে সয়াবিন চাষিদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা করে সহায়তা প্রদান করা হবে। একই সঙ্গে কৃষকদের দ্রুত মাঠ থেকে সয়াবিন ঘরে তোলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এখন আর সয়াবিন কাঁচা নেই। প্রতিটি গাছের সয়াবিন পাকা। পানি লাগলে সয়াবিন নষ্ট হয়ে যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন