শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পদ্মা-যমুনায় ভাঙন

লৌহজংয়ে ভাঙছে ঘরবাড়ি : গোয়ালন্দে লঞ্চ-ফেরি ঘাটসহ হুমকির মুখে শত শত পরিবার

শওকত হোসেন, লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) ও মোফাজ্জল হোসেন লাল্টু, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০২২, ১২:০২ এএম

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ফের অসময়ে পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় হঠাৎ নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীতে উত্তাল ঢেউ আর প্রবল স্রোতের কারণে অসময়ের এই ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে পদ্মা নদী ঘেঁষা উপজেলার আশপাশের গ্রাম ও বসতভিটা। এদিকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পদ্মা ও যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে লঞ্চ ও ফেরি ঘাটসহ কয়েক শত পরিবার। এই বর্ষা মৌসুমের আগেই দৌলতদিয়া পাটুরিয়া ঘাটকে আধুনিক নৌ বন্দরের উন্নয়নকরণের কাজ করার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত সেই কাজের ছিটা ফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। বর্ষার আগেই ঘাটের কাজ শুরু করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

গত ১ সপ্তাহে লৌহজং উপজেলায় ২টি বসতভিটা বিলীন হয়েছে। উপজেলার কনকসার ইউনিয়নের সিংহেরহাটি গ্রাম ও লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া গ্রামের ১ নম্বর ওয়ার্ডে সপ্তাহ খানেক যাবত ভাঙন শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে হোসেন মোল্লার ৪০০ বছরের পুরনো ভিটেবাড়ি ভেঙে যায়। পরে তরিগরি করে ঘরটি ভেঙে অন্য স্থানে সরিয়ে রাখা হয়। মিঠু মোল্লার একটি ঘরের আংশিক পদ্মার গর্ভে চলে গেছে। ১ নম্বর ওয়ার্ড বড় নওপাড়া গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কখন পদ্মায় গিলে খায় সে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীর পাড়ের মানুষ।

আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, আমার বাসার বিল্ডিং ভেঙে যাচ্ছে। সামনের বাড়িঘর সব পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। আমরা অহন কোথায় যামু। ফরিদ মাঝি বলেন, গত ৩ দশক যাবত দেখছি প্রতিবছর গ্রামের পর গ্রাম পদ্মায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফাতেমা বেগম জানান, ১৭ বছর ধরে বিয়ে হয়েছে তখন আশপাশে নদী দেখিনি। এখন নদীর প্রতিটি ঢেউ কানে বাজে। আমরা আতঙ্ক দিনরাত কাটাচ্ছি। রাতে ঘুমাতেও পারি না। মনে হয় এই বুঝি পদ্মায় খেয়ে ফেলবে। দ্রুত এ ভাঙনের স্থায়ী সমাধান চাই।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল আউয়াল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নদীভাঙনের বিষযটি জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তারা আগামী দুই একদিনের মধ্যে এসব এলাকায় ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলার আশ্বাস দেন।

এছাড়া গত বুধবার লৌহজং-টঙ্গাবাড়ি উপজেলায় ৪৪৬ কোটি টাকার স্থানীয় বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। এ প্রকল্পে লৌহজং উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম ও টংগিবাড়ী উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৪টি গ্রামের ৯ হাজার ১০০ মিটার নদী তীরবর্তী এলাকায় বাঁধের কাজ হবে। সেখানে প্রথমে জিও ব্যাগ ফেলে ফাউন্ডেশন করা হচ্ছে। তারপর পাথর দিয়ে বাঁধ দেওয়া হবে।

রাজবাড়ী পাউবো ও বিআইডব্লিউটিএ এর সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া ঘাটের পশ্চিমে দেবগ্রাম প্রান্তে ৬ কিলোমিটার এবং পাটুরিয়া ঘাটে ২ কিলোমিটার স্থায়ীভাবে আধুনিকীকরণ করতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক গত বছরের জানুয়ারীতে ৬৮০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য রাজবাড়ী পাউবোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিদিষ্ট সময়ে ঘাটের কাজ শুরু করতে না পারায় নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এ কাজের বর্তমান ব্যয় হবে ১ হাজার কোটি টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত।

সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১, ২ এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। লঞ্চঘাটের বিপরীতে পশ্চিমে লালু মন্ডল পাড়া থেকে নদীর তীরবর্তী দেবগ্রাম ইউনিয়নের অন্তর মোড় পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক মাস ধরে পদ্মা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙনে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার ভিটা মাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। নদীতে বিলিন হয়েছে কয়েক শত বিঘা কৃষি জমি। আরো ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, টার্মিনাল, বাজার, স্কুল, মাদরাসাসহ ৮টি গ্রামের প্রায় ২ হাজার পরিবার।

লালু মন্ডল পাড়ার কৃষক সেলিম বলেন, বসতবাড়িসহ ৩ বিঘা আবাদি জমি নদীতে চলে গেছে। এখন নদীর তীরবর্তী ২ বিঘা জমি আছে সেখানেই কোন রকম একটি ছাপড়া ঘর করে আছি। এ বছর যদি নদী শাসনের কাজ না করে তাহলে অন্যত্র চলে যেতে হবে। এলাকার বেশ কয়েকজন জানান, গত বছর নদী শাসনের জন্য যে সকল জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হয়েছিল, সেগুলো নদীতে পড়েনি। জিও ব্যাগগুলো ডাঙার উপর দিয়ে ফেলা হয়েছে। এখন নদীতে যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে আর নদী পাড়ে থাকা সম্ভব না।

রাজবাড়ী পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান অংকুর বলেন, আমরা নকশা করে বিআইডব্লিউটিএর নিকট দিয়েছি। বিআইডব্লিউটিএ সেই নকশাটি ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য বুয়েটে পাঠিয়েছে। সেখান থেকে নকশাটি আমাদের নিকট আসলে আমরা ঘাট আধুনিকীকরণের কাজ শুরু করবো। দৌলতদিয়া নদী বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পের পরিচালক ও বিআইডব্লিউটিএ›র তত্ত্বাবধায়ক পরিচালক মোহাম্মদ তারিকুল হাসান বলেন, বুয়েট থেকে নকশা অনুমোদন হয়নি এবং জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পূর্র্ণ হয়নি। এ সকল কাজ সম্পূর্ণ হলে ঘাট আধুনিকীকরণ উন্নয়নের কাজ শুরু করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন