মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কোম্পানি খুলে এমপি পুত্রের প্রতারণা

রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ ও বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

যদি কোন পণ্য বর্তমান বাজার দরের ওপর নির্ভর না করে ভবিষ্যতে কোন দরে বা দামে ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি করা হয়, সেটা যে আইনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে, তাকে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বলা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাংলাদেশে এখনো তা গড়ে ওঠেনি। তবে গত এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ঘোষণা দিয়েছে যে তারা প্রথমবারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জ তৈরির জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। সেখানে শেয়ার, বন্ড ইত্যাদি ভবিষ্যতের দরে কেনাবেচা হবে। এর ফলে বাজারে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ সীমিত হয়ে আসে। কৃষি পণ্য, খনিজ দ্রব্য, বন্ড বা সিকিউরিটিজও এভাবে লেনদেন করা হতে পারে। আর এরপর থেকেই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামে থাকা দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার বিষয়টি নজরে আসে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের। এই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ মে রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ এবং বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানকেও চিঠি পাঠিয়ে বিএসইসি তাদের ব্যবসার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, সদস্যভুক্ত কোন ব্যক্তি ব্যতীত, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোন সিকিউরিটিজের জন্য ব্রোকার বা ডিলার হিসাবে কাজ করতে পারবে না। কিন্তু সম্প্রতি এই দুটি প্রতিষ্ঠানের পত্রিকায় দেয়া ব্যবসা প্রস্তাব তাদের নজরে এসেছে। স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য না হলে কীভাবে তারা এই ধরনের ‘কমোডিটি ফিউচার ন্যাচার কন্ট্রাক্ট’ ব্যবসার প্রস্তাব দিয়েছেন, সাতদিনের মধ্যে তা ব্যাখ্যা করার অনুরোধ করা হয়েছে।

সূত্র মতে, অনুমোদন ছাড়াই কমোডিটি এক্সচেঞ্জের নামে ব্যবসায় নেমেছে এই দুটি প্রতিষ্ঠান। কোম্পানি দুটির অন্যতম উদ্যোক্তা ও ম্যানেজিং পার্টনার রাশেক রহমান। গত এপ্রিল মাসে এই প্রতিষ্ঠান দুটি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসা শুরু করে। ঢাকার পাশাপাশি রংপুর ও কুমিল্লায় অফিস নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। রংপুরের মুন্সীপাড়ায় নেওয়া হয়েছে বুরাক কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানির অফিস। তারা স্বর্ণ ব্যবসার ঘোষণা দেয়। এসব স্বর্ণ আমদানি করে তা গোল্ড বার হিসাবে বিক্রি করার ঘোষণা দেয়া হয়। রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ একটি লাইফ স্টাইল কোম্পানির মাধ্যমে ‘সুইস মেড ২৪ ক্যারেট মিন্টেড গোল্ড বারস’ বিক্রি করার কথা বলা হয়, যেখানে এক থেকে ১০০ গ্রামের স্বর্ণ বার কেনার সুযোগ থাকবে।
বাংলাদেশের আইন অনুসারে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বিএসইসির অনুমতি নিয়েই শুধু এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান করা যায়। তাদের অনুমোদন ছাড়া ব্যবসা শুরু করায় প্রতিষ্ঠান দুটিকে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও জানানো হয়েছে।
বিএসইসি’র চিঠিতে বলা হয়েছে, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ধারা ৮(৪) অনুযায়ী, সদস্যভুক্ত কোনো ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোনো সিকিউরিটিজের জন্য ব্রোকার বা ডিলার হিসেবে কাজ করবে না। ফলে এ পরিস্থিতিতে কমিশনের অনুমোদন ছাড়া বা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য না হয়েও কমোডিটি ফিউচার কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে ব্যবসা করার প্রস্তাব দেয়ার বিষয়ে আপনাদের অবস্থান জানতে চায় কমিশন। এ চিঠি জারি করার সাত কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। গত ১৬ মে এই চিঠি দেয়া হয়।
রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং পার্টনার রাশেক রহমান বলেন, বিএসইসি’র অভিযোগ বোধগম্য নয়। বাংলাদেশের আইন মেনে স্বর্ণ ব্যবসা করছি। তিনি দাবি করেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠান দুটির নামের সঙ্গে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ শব্দটি থাকলেও তারা এ জাতীয় কোনো ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি বলেন, নামের কারণে এরকম একটি ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হতে পারে। আমরা স্বর্ণ আমদানি করে বিক্রি করে থাকি। আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নিতে হয়, বিক্রি করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। এসব লাইসেন্স আমরা নিয়েছি। এছাড়া স্বর্ণ ব্যবসা করার জন্য আর কোন অনুমোদনের বিষয় নেই। এসইসি জানতে চেয়েছে, আমরা ভবিষ্যৎ দামে স্বর্ণ বিক্রি করি কি না? এর উত্তর হচ্ছে, আমার করি না। ভবিষ্যৎ ধারণা নির্ভর কোনরকম পণ্য বা তার মূল্য নির্ধারণ করে কোনরকম ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে আমরা জড়িত নই বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে বিষয়টি তারা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেবেন বলে তিনি জানান।
বিএসইসি’র চিঠিতে বলা হয়, কমোডিটি ফিউচার কন্ট্রাক্ট সংক্রান্ত বিষয়ে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ধারা ২ (সিসিসি) অনুযায়ী কমোডিটি এক্সচেঞ্জে নগদ বা অফসেট কমিশনের সঙ্গে যথাযথভাবে নিবন্ধিত। কমোডিটি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছেÑকৃষি, পশুসম্পদ, মৎস্য, বনজ, খনিজ বা এনার্জি এবং এই জাতীয় পণ্য থেকে তৈরি বা প্রক্রিয়াজাত দ্রব্য। এছাড়া কমিশন সরকারি গেজেটের মাধ্যমে অবহিত করা যেকোনো পণ্য বা দ্রব্য হতে পারে। আর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ধারা ২(১)(৩) অনুসারে, কমোডিটি ফিউচার কন্ট্রাক্টকে নিরাপত্তা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
বিএসইসি’র কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকায় নিবন্ধিত রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ও রংপুরে নিবন্ধিত বুরাক কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানি দুটির নামের সঙ্গে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ আছে। যদি কোনো কোম্পানি ‘ফিউচার কন্ট্রাক্টে’ পণ্য লেনদেনের ব্যবসায় যুক্ত থাকে তবে অবশ্যই তাকে বিএসইসি’র অনুমতি নিতে হবে। রিলায়েবল ও বোরাক ফিউচার কন্ট্রাক্টের অনুমোদন দেয়ার একমাত্র ক্ষমতা রাখে বিএসইসি। অন্য কেউ এই লাইসেন্স দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। তাই প্রতিষ্ঠান দুটো কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কি না, তা জানার জন্য তাদের কাছে আমরা আরও বিস্তারিত জানতে চেয়েছি। একই সঙ্গে আমাদের কমোডিটি এক্সচেঞ্জের ডেফিনিশনের ভেতরে যদি পড়ে, সেক্ষেত্রে আমাদের অনুমতি নিয়ে করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিএসইসির সহকারী পরিচালক মো. মোসাব্বির আল আশিকের স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ অনুযায়ী এ ধরনের কোম্পানি স্বর্ণ ব্যবসায় যুক্ত হতে পারবে না।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, বিএসইসি যথার্থ পদক্ষেপ নিয়েছে। যে যাই করুক লাইসেন্স তো নিতে হবে। না নিলে সেটা অবশ্যই অন্যায়। তার জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিএসইসি ব্যবস্থা নিয়েছে। এটা তো দোকানদারি ব্যবসা না। এর পেছনে যেই থাকুক, ছাড় দেয়া যাবে না।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বিএসইসি’র অনুমতি ছাড়া কেউ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করলে তা বেআইনি বলে গণ্য হবে। বিএসইসি সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিএসইসি যে পদক্ষেপ নিয়েছে শুধু এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে যদি এখানে অনিয়ম হয়ে থাকে, আইন ভঙ্গ করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (14)
Abir Chowdhury ২৪ মে, ২০২২, ৬:৪৩ এএম says : 0
রাজনৈতিক কারণে কখনো কিছু হবে না সাধুরা
Total Reply(0)
Md Zaman Bokul ২৪ মে, ২০২২, ৬:৪৩ এএম says : 0
দেশটা উনাদের পৈতৃক সম্পত্তি কার অনুমতি আর অনুমোদন নিবে,উনারা চেতনার কারবারি এত্ত সাহস কার হইলো উনাদেরকে বলা অনুমোদন নেওয়ার, উনারা জয়বাংলা ধ্বনিতে সব উল্টো করে দিবো,
Total Reply(0)
MD Ripon Hossen ২৪ মে, ২০২২, ৬:৪৪ এএম says : 0
ওনি তো টকশোতে অনেক কথা বলে। ওনার কিছুই হবে না।
Total Reply(0)
Alamgir Khan ২৪ মে, ২০২২, ৬:৪৪ এএম says : 0
আওয়ামীলীগ হওয়ার পর আর লাইসেন্সের কি প্রয়োজন?
Total Reply(0)
Nurnabi Babul ২৪ মে, ২০২২, ৬:৪৪ এএম says : 0
উনারা সরকারি দলের নেতা হইয়া ব্যবসার জন্য অনুমোদন নিতে হবে।এটা কেমন কথা!
Total Reply(0)
Titu Meerr ২৪ মে, ২০২২, ৭:২৪ এএম says : 0
দেশের মালিকদের আবার অনুমোদনের কি দরকার ? ভাড়াটিয়া হয়ে এমন কথা বলার দুঃসাহস হয় কি করে ?
Total Reply(0)
Palash ২৪ মে, ২০২২, ৯:৪৪ এএম says : 0
অনেক বড় নেতা কিছুই হবেনা।
Total Reply(0)
রাশেদ ২৫ মে, ২০২২, ২:১৮ পিএম says : 0
ভাই এম পির নামটা লিখলে না? ভয় পান না টাকা খান
Total Reply(0)
A.M MAMUNUR RASHID ২৫ মে, ২০২২, ৬:৩৯ পিএম says : 0
এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ এটা আওয়ামী লীগের বাংলাদেশ এই সমস্ত আইন গাইন মানার সময় নাই,, চেতনা থাকলেই হল
Total Reply(0)
Ali ২৫ মে, ২০২২, ৮:২৯ পিএম says : 0
Mujib coat thakleii holo...law ER ki Kam?
Total Reply(0)
হালিম ২৬ মে, ২০২২, ২:৪১ পিএম says : 0
চোরের আবার বড় গলা
Total Reply(0)
jack ali ২৭ মে, ২০২২, ৩:১৬ পিএম says : 0
দেশ স্বাধীন করেছিলাম যে আমরা দেশকে গর্ব ইউরোপ অথবা সিঙ্গাপুরের মতো কিন্তু আমাদের দেশে যতগুলো সরকার এসেছে তারা আল্লাহ দ্রোহী এবং দেশটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে আমাদের দেশটাকে মনে হয় যেন একটা বস্তু এবং ময়লার ভাগাড় যত ধরনের দুর্নীতি আছে আমাদের দেশে সব হয়
Total Reply(0)
বাবুল চৌধুরী এইচ এম ৩০ মে, ২০২২, ১২:৫৮ এএম says : 0
আমি দৈনিক ইনকিলাবকে বস্ত্তনিষ্ঠ খবরের কাগজ হিসাবে গণ্য করি কিন্তু উল্লিখিত প্রতিবেদন পড়ে মনে হলো যেন বিরোধিতার জন্য মনের ঝাল মেটানোর জন্য মাথা মুন্ডহীন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে এজন্য যে কথিত এম পি'র নাম প্রকাশ করা হয়নি উপরোন্ত তারা কিভাবে জনগনকে ধোঁকা দিয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি।
Total Reply(0)
বাবুল চৌধুরী এইচ এম ৩০ মে, ২০২২, ১২:৫৮ এএম says : 0
আমি দৈনিক ইনকিলাবকে বস্ত্তনিষ্ঠ খবরের কাগজ হিসাবে গণ্য করি কিন্তু উল্লিখিত প্রতিবেদন পড়ে মনে হলো যেন বিরোধিতার জন্য মনের ঝাল মেটানোর জন্য মাথা মুন্ডহীন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে এজন্য যে কথিত এম পি'র নাম প্রকাশ করা হয়নি উপরোন্ত তারা কিভাবে জনগনকে ধোঁকা দিয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন