শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইতিবাচক শুল্কারোপ

বিলাসবহুল ও বিদেশি ১৩৫ পণ্য আমদানি নিরুৎসাহ দেশে উৎপাদিত হচ্ছে এমন পণ্য আমদানি বন্ধ করা অপরিহার্য : ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদেশ থেকে ফল আনার প্রয়োজন নেই : সিরাজুল ইস

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। আমদানি-রফতানি প্রতিটি দেশের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে কিছু কিছু সময় আমদানি-রফতানির ওপর লাগাম টানতে হয়। দেশ ডলার সঙ্কটের কবলে পড়ে সরকার বিলাসবহুল ও বিদেশি ১৩৫ পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কারোপ করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। চাল, তেল, ওষুধের মতো পণ্য আমদানি অপরিহার্য। কিন্তু প্রসাধন পণ্য, বিদেশি ফার্নিচার, ফলফলাদি ইত্যাদি ভোগের জন্যই আমদানি হয়ে থাকে। বিশেষ করে কিছু ফল ও বিদেশি ফার্নিচার আমদানি বিলাসী মানসিকতা হিসেবে ধরে নেয়া হয়। ডলার খরচ করে এমন পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহী করতেই শুল্ক বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমদানির চাপ কমাতে বিলাসপণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা বন্ধ করা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এমনকি যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছে, তাও বাতিল করতে হবে। যেসব খাদ্য, ফল ও অন্যান্য পণ্য দেশে উৎপাদিত হচ্ছে, আপাতত সেসব পণ্য আমদানি বন্ধ করা অপরিহার্য।

অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে আমদানি ব্যয়। বাণিজ্য ঘাটতি ইতোমধ্যে ২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বাড়ায় চাপের মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে ডলার সঙ্কট। ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রতিদিনই কমেছে। সর্বশেষ গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার প্রতি মার্কিন ডলার ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৭ দশমিক ৯০ টাকা নির্ধারণ করে। এ নিয়ে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৬ বার টাকার অবমূল্যায়ন করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতিহাসের রেকর্ড ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায় প্রতি ডলারের দাম। এমনকি ১০২ টাকাতেও ডলার কেনার ঘটনা প্রকাশ পায়। আর তাই দীর্ঘদিন ধরেই দেশের আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা আমদানি ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত মাসে এক সভায় সরকারি বা বেসরকারি খাতে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণে সবসময় পদক্ষেপ নেয়া হয়। আমদানি তো নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে, এটা ওপেন নয়। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা বিদ্যমান থাকায় বিলাসবহুল সামগ্রী নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যখন অতিরিক্ত দুর্বলতা থাকবে না, আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো বিপজ্জনক কারণ থাকবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। এরপর গত ১১ এপ্রিল ব্যাংকগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন ভোগ্যপণ্যের জন্য ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ অগ্রিম অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ আমদানি বৃদ্ধি রোধ করতে ব্যর্থ হয়। পরে গত ১০ মে বিলাসবহুল গাড়ি ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র খোলার সময় ব্যাংকগুলোকে আমদানিকারকদের কাছ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত (উচ্চ মার্জিন আরোপ) অগ্রিম অর্থ নেয়ার কঠোর নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে অতি জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সকল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেয়। এই ধারাবাহিকতায় গত রোববার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের আবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে বৈঠকে বসে কঠোর নির্দেশনা দেন। এরপর সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপ ও আমদানি প্রবণতা কমাতে ও দেশীয় পণ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিলাসবহুল ও বিদেশি ১৩৫ পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত আরোপ করা হয়েছে। গতকাল এনবিআরের জনসংযোগ দফতর প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ডলার নিয়ে একই সমস্যায় পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সমাধানে হাত দেয়নি সময়মতো। তাই আগেভাগে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে ইতোমধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা। এছাড়াও পণ্য আমদানির ঋণপত্রে (এলসি) ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করছে একটি চক্র। দামি পণ্য আমদানির কথা বলে নিয়ে আসছেন অনেক কম দামি পণ্য। এভাবে চক্রটি বিদেশে টাকা পাচার করছে। ভুয়া এলসির নামে অর্থপাচার রোধে পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই সরকারের আমদানিতে লাগাম টানার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আয় বাড়াতে সাময়িক সময়ের জন্য প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা বাড়ানো যেতে পারে। পোশাকের যে রফতানি আয় আটকে আছে, তার প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে। এতে আয় বাড়বে। আর খোলাবাজারে ডলারের দাম এত বাড়ল কেন, তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা খতিয়ে দেখতে পারে। কেউ বেশি মুনাফার আশায় মজুত করছে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। মানি চেঞ্জারগুলোতে ডলারের দামের পার্থক্য যাতে সর্বোচ্চ ২-৩ টাকা বেশি হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

সূত্র মতে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি, ভোগ্যপণ্য, মূলধনি যন্ত্র, কাঁচামাল ও জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। এ কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) আমদানি খরচ বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। আমদানি খরচ যে হারে বেড়েছে, রফতানি সে হারে বাড়েনি। প্রবাসী আয় কমছে। আয় দিয়ে ব্যয় মিটছে না। প্রতি মাসে ঘাটতি হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা বা ১ বিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে আছে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ। এসব সঙ্কটে বাড়ছে ডলারের দাম, আর চাহিদা মেটাতে গিয়ে চাপে পড়েছে রিজার্ভ। এমন অবস্থা সামাল দিতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। জানা গেছে, এসব পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতেই বিলাসপণ্যে অতিরিক্ত শুল্কারোপের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বাড়তি শুল্কহার কার্যকর হলে দেশীয় বাজারে পণ্যগুলোর দাম বাড়বে, মানুষের আগ্রহ কমবে। অপরদিকে দেশীয় পণ্যের দিকে ঝুঁকবে মানুষ। যদিও ইতোমধ্যে ডলারের সঙ্কট মোকাবিলায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। এখনই বাস্তবায়ন জরুরি নয়, এমন সব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি। অথচ অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্য সামগ্রী প্রতিদিনই আমদানি করা হচ্ছে। যেমন ধরা যাক ফল আমদানি। বাংলাদেশ এখন মৌসুমী ফলে সমৃদ্ধ। তারপরও এই মৌসুমে চলছে ফল আমদানি। অথচ হরেক রকম দেশীয় ফলেই এই চাহিদা মেটানো সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, বছরওয়ারি হিসাবে পার্থক্য থাকলেও প্রতি বছর চাহিদা অনুযায়ী ফল আমদানিতে গড়ে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। আপেল, কমলা, আঙুর, নাশপাতি, মাল্টা, চেরি, আনার, বরই, আম ছাড়াও বেবি ম্যান্ডারিন, পাম, নেকটারিন, কিউই, সুইট মিলন, অ্যাভোকাডোর মতো কিছু অপরিচিত ফলও আমদানি করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিইএ) হর্টিকালচার উইং ও উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ টনের বেশি আপেল, দেড় থেকে দুই লাখ টন কমলা, ৫০ হাজার টনের বেশি আঙুর আমদানি করা হয়। তবে মাল্টার আমদানি গত কয়েক বছরে বেড়েছে। দেশে মোট আমদানি ফলের প্রায় ৮৫ শতাংশই আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙুরের দখলে। বাকি অংশ পূরণ হয় অন্য ফল আমদানিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আপেল আমদানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে। কয়েক বছর আগে এ তালিকায় বাংলাদেশ ছিল সপ্তম অবস্থানে। পণ্যের বাজার পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ইনডেক্সমুন্ডির তথ্য অনুযায়ী, মাল্টা আমদানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন পঞ্চম। তিন বছর আগে ছিল অষ্টম অবস্থানে। গত অর্থবছরে মাল্টা-কমলাই আমদানি হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি।

অথচ পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প (ডিএই) তথ্য মতে, আয়তনে বিশ্বের অন্যতম ছোট দেশ হলেও বাংলাদেশ ফল উৎপাদনের সফলতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে। মৌসুমী ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। এখন দেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে।

জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) মতে, ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বেড়েছে। কাঁঠাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়, আমে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে আছে। আম উৎপাদনে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। এরপরও দেশে প্রতি বছর বড় অঙ্কের আম আমদানি হয়ে থাকে। আর মৌসুমী ফল উৎপাদনে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান দশম। প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে ফল চাষের জমি বাড়ছে।

সূত্র মতে, বাংলাদেশ ফল আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে গ্রীষ্ম মৌসুমের পর্যাপ্ত ফল বাজারে থাকায় এলসি বন্ধ করলেও ফলের চাহিদা পূরণে কোনো ঘাটতি হবে না। তিনি বলেন, এখন আম, লিচুর ভরা মৌসুম। এসব ফলই বাজারে বেশি বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমের ফল দিয়েই মানুষের চাহিদা পূরণ হয়ে যাচ্ছে। তাই ফল আমদানি বন্ধ থাকলেও ফলের চাহিদা পূরণে সেটা বাজারে প্রভাব ফেলবে না। অন্যদিকে ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি খরচও অনেক বেড়ে গেছে। আমদানিকারকরা গত দেড় মাস ধরে প্রতিটি শিপমেন্টে (কনটেইনারে) চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা করে লোকসান দিচ্ছে। তাই আগামী দুই থেকে তিন মাস দেশি ফল দিয়ে চলতে হবে বলে জানান ফল ব্যবসায়ীদের এই নেতা।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও ইউক্রেন-রাশিয়া চলমান যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ায় বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বাড়ছে। এই সময় দেশের বাইরে বিনিয়োগ একেবারেই বন্ধ করে দেয়া উচিত। আয় বাড়াতে ও খরচ কমাতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তা নিতে হবে। তিনি বলেন, মৌসুমী ফলে দেশ সমৃদ্ধ। তারপরও বাজারে হরেক রকম বিদেশি ফল দেখা যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে দেশীয় ফুল ও ফল চাষিরা ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং ফুল ও ফল চাষে উৎসাহিত হবে। এতে করে দেশের প্রান্তিক চাষিরা লাভবান হবেন এবং আমদানি নির্ভরতা কমবে। আমদানি ব্যয় সাশ্রয়ে সকল ধরনের ফল আমদানি বন্ধ করতে হবে। বর্তমান সময়ে যা জরুরি। একই সঙ্গে বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ফার্নিচার ও কসমেটিকস যথেষ্ট মানসম্পন্ন এবং দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সক্ষম। শুল্ক আরোপের ফলে বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশীয় শিল্প বিকশিত হবে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আরো আগেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার ছিল বলে মনে করেন এস এম রাশিদুল ইসলাম।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এ কে এম আলী আহাদ খান ইনকিলাবকে বলেন, দেশের স্বার্থেই বিলাসবহুল ও বিদেশি পণ্যে অতিরিক্ত শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই এ তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বিলাসজাত ও অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্কারোপ বিষয়ে এনবিআর’র প্রজ্ঞাপন আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে সরকার ইচ্ছা করলে বাস্তবতার আলোকে মেয়াদ আরো বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত শুল্কারোপ করা পণ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আমদানি করা বিস্কুট, চকলেট, বিভিন্ন জাতের ফল, জুস, বিদেশি তৈরী পোশাক, ফার্নিচারের জন্য বাঁশ, পার্টস, রাটান, বিভিন্ন উপাদান, প্লাস্টিকের ফার্নিচার, কাঠের ফার্নিচার, অফিস-রান্নাঘর-শোবার ঘরে ব্যবহৃত কাঠের ফার্নিচার, বিভিন্ন মেটাল ফার্নিচার, পারফিউম, বিউটি ও মেকআপ প্রিপারেশন, দাঁতের ফ্লস, দাঁতের পাউডার, প্রি-শেভ ও আফটার শেভ কসমেটিকস, স্যান্ডস্টোন, কাসাভা স্ট্রেচ, বিভিন্ন ধরনের টক জাতীয় ফল, ভুট্টা গুঁড়া, ক্যানে সংরক্ষিত ফল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম। আপেল, আম, কাঁঠাল, পেঁপে, আঙুর, আনারস, চেরি, এপ্রিকোট, পিয়ার্স, পেয়ারা, অ্যাভোকাডো, ডুমুর-এসব ফল ড্রাইড ও ক্যান জাতীয় ও এই করের অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন ধরনের আর্টিফিশিয়াল, ব্লিচড ও বিদেশি ফুল ইত্যাদি পণ্যে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়ে রাজস্ব বোর্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মুমেন বলেন, করোনা পরবর্তী অর্থনীতি পুনর্গঠন, বিলাসবহুল পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা ও আমদানি হ্রাস এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিদেশি ফল, বিদেশি ফুল, ফার্নিচার ও কসমেটিকস জাতীয় প্রায় ১৩৫টি এইচ এস কোডভুক্ত পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ০ শতাংশ ও ৩ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা গত সোমবার কার্যকর হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন