বড় ধরণের বিপত্তির মধ্যে আছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) গ্রাহকরা। গত কয়েকদিন থেকেই সার্ভার ডাউনজনিত কারণে কোন প্রকার অর্থনৈতিক লেনদেন করতে পারছেন না। কার্যালয়গুলোতে তাদের নির্ধারিত বুথে টাকা জমা দিতে গেলে কর্তৃপক্ষ বলছে সার্ভার ডাউন হয়ে গেছে। এতে হাজারো গ্রাহক বিপাকে পড়েছেন। পরে দালাল চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে ফ্রি জমা দিতে হয় বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা।
গ্রাহকরা জানান, গত কয়েক দিন থেকে গাড়ির অগ্রিম কর প্রদানসহ বিভিন্ন ফ্রি জমা দিতে মিরপুর, উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় বিআরটিএ কার্যালয়ের নির্ধারিত বুথে টাকা জমা দিতে যান। কিন্তু বুথে টাকা জমা দিতে গিয়ে এক ঘণ্টা টাকা জমা নেয়ার পর সার্ভার ডাউনের অজুহাতে টাকা জমা নেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে গ্রাহকরা টাকা জমা দিতে পারছেন না। পরে নির্ধারিত তারিখ শেষ হয়ে যাওয়াতে তারা বাড়তি ফ্রি দিয়ে কর প্রদান করছেন। তবে বিষয়টি সম্পর্কে বিআরটিএ’র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রয়েছেন সুখ-নিদ্রায়। এতে গ্রাহকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
মুসা নামের এক গ্রাহক ইনকিলাবকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার গাড়ির অগ্রিম কর প্রদানের জন্য উত্তরা দিয়াবাড়ি শাখায় যাই। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে থেকে সার্ভারে সমস্যা রয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে বিকাল ৪টায় দিকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে গ্রাহকদের বুধবার ফের আসতে বলা হয়। সারাদিন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে গ্রাহকরা বাড়ি ফিরে যান। পরে আ বুধবার ফের তিনি টাকা জমা দিতে ওই শাখায় যান। কিন্তু ওই দিনও একই অবস্থা। আজ অনেক গ্রাহকের টাকা জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল। তবে নির্ধারিত দিনে টাকা জমা না দিলে বাড়তি ফ্রি দিতে হয় বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে আজ বুধবার দুপুরে বিআরটিএ’র ঢাকা বিভাগের উপ পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) শফিকুজ্জামান ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমার বিষয়টি জানা নেই। জেনে আপনাকে জানাচ্ছি। পরে আর বিষয়টি জানাননি তিনি। এক পর্যায়ে বিষয়টি জানতে তার মোবাইল ফোনে ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
পরে বিষয়টি জানতে বিআরটিএ’র প্রোগ্রামার হোসেন মমতাজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বিআরটিএ’র পরিচালক(রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী’র সাথে যোগাযোগ করেন।
পরে শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি। এক পর্যায়ে বুধবার সন্ধ্যার পর ফের উনার মোবাইল ফোনে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়টি জানতে অন্য অফিসার অথবা চেয়ারম্যান স্যারকে ফোন দেন। পরে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মোবাইল ফোনে ফোন দিলেও তিনিও ফোন রিসিভ করেনি।
তবে সূত্র জানায়, করোনা পরবর্তী সময়ে বিআরটিএর কাজের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বেড়ে গেছে। প্রতিদিন শত শত গাড়ি ফিটনেস হালনাগাদ এবং লাইসেন্স নবায়নের জন্য আনা হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবা নিতে আসা সাধারণ গ্রাহক। আর ওইসব চক্রের সাথে জড়িত রয়েছেন বিআরটিএ’র কর্মকর্তারাও। আর বাড়তি ফ্রি আদায়ের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই সার্ভার ডাউন বলে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক জানান, দালাল ছাড়া কোনো কাজ করা যায় না। ফাইলের মধ্যে একটি বিশেষ মার্ক থাকে। যা দেখলে বিআরটিএ কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন ফাইলটি কোন দালালের!
জানা যায়, যানবাহনের লাইসেন্স, গাড়ির নম্বরপ্লেট, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য সেবার জন্য সরকার নির্ধারিত ফি নির্দিষ্ট অনলাইনে জমা দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত ফি জমা দিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজারো গ্রাহক।
এছাড়াও বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, যে কোন ফি পেমেন্ট করার জন্য আবেদনকারীকে বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালে এ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক। যাদের এ্যাকাউন্ট নেই তারা https:ww/w.ipaybrta.cnsbd.com/index/login এই ওয়েবসাইট ভিজিট করে এ্যাকাউন্ট করে নিতে পারবেন। এ্যাকাউন্ট তৈরির পর বিভিন্ন সেবার জন্য অনলাইনে আবেদন এবং ফি পেমেন্ট করা যাবে। আবেদনের জন্য প্রথমে নিচের যে কোন লিঙ্কে গিয়ে ইমেইল/মোবাইল নম্বর এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করতে হবে। কিন্তু এই সার্ভিসটি চালু থাকলেও গ্রাহকরা দৃশ্যমান কোনো সেবা পাচ্ছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন