শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চীন থেকে মালামাল আনার আশ্বাসে প্রতারণায় গ্রেফতার ২

উপবৃত্তির টাকা দেয়ার নামে প্রতারণায় গ্রেফতার তিন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২২, ১২:০২ এএম

অল্প সময়ে ও কম খরচে চীন থেকে গ্রাহকদের চাহিদা মোতবেক যেকোনো পণ্য সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৫০ শতাংশ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করে প্রতারণার অভিযোগে মূলহোতাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। চক্রটি। ৩৫ জন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে চক্রের সদস্যরা। গ্রেফতাররা হলেন- ইকোম্যাক্স কার্গোর চেয়ারম্যান আরাফাত হোসাইন (৪০) ও অর্থ পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন (৪২)। গতকাল বুধবার মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন।

তিনি বলেন, সিআইডির কাছে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে বিষয়টি অনুসন্ধান করে সত্যতা পাওয়া যায়। পরে মঙ্গলবার রাতে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রাহকের আস্থা অর্জনের জন্য চক্রটি চুক্তিপত্র করতো। তাদের প্রতিশ্রুত পণ্যের মধ্যে ছিল-গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, মেডিকেল সরঞ্জাম, বাইক, কাপড়, সিলিকাজেল, লোগো ইত্যাদি

তিনি আরো বলেন, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অফিস ভাড়া করে দামি ফার্নিচার দিয়ে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে ইকোম্যাক্স নামের ওই প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের ভাড়া করা মার্কেটিং অফিসারদের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে যার যেমন পণ্য প্রয়োজন তা চীন থেকে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিতেন। পরে বিভিন্ন সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে সময়ক্ষেপণ করে মোটা অংকের টাকা সংগ্রহ করে অফিস ও মোবাইল বন্ধ করে পালিয়ে যেতেন তারা। চক্রের এক সদস্য একসময় চীনে পড়ালেখা করতেন বলে জানা যায়। আরেক সদস্য চীন থেকে মেডিকেল সরঞ্জাম কেনার জন্য যাতায়াত করতেন। এতদিন ধরে চক্রটি ৩৫ জন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা।

অন্যদিকে অনুদান দেয়ার কথা বলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মোবাইলে বার্তা পাঠায় প্রতারক চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতারকৃতরা প্রথমে শিক্ষা বোর্ডের নামে টার্গেটের মোবাইলে বার্তা দিয়ে যোগাযোগের নম্বর হিসেবে চক্রের সদস্যের নম্বর দেয়া হয়। প্রতারকেরা বার্তায় শিক্ষা বোর্ডের নামে ভুয়া নম্বর দিয়ে ওই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলে। সরলমনা শিক্ষার্থী-অভিভাবক তাদের ফাঁদে পা দিয়ে অর্ধকোটি টাকা খুইয়েছেন। গত মঙ্গলবার যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকা থেকে প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেফতারকৃতরা হলো-মো. আশিকুর রহমান (২৫), মো. সাইফুল সর্দার (৩০) ও মোক্তার হোসেন (৩৪)।
সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তারা দু-তিন বছর ধরে উপবৃত্তির নামে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর মোবাইল নম্বরে বার্তা দিয়ে প্রতারণা করে আসছি। প্রথমে শিক্ষাবোর্ডের নামে টার্গেটের মোবাইল নম্বরে মেসেজ দিয়ে যোগাযোগের নম্বর হিসেবে চক্রের সদস্যের মোবাইল নম্বর দেয়া হয়। চক্রের প্রথম সদস্য টাকা পাঠানোর কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানে অবস্থান নেয়। কৌশলে তারা গ্রাহকের লেনদেনের খাতার ছবি তুলে নেয়। ওই ছবি ইমো/মেসেঞ্জার/হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় সদস্যের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে প্রথম ব্যক্তির কাজ শেষ হয়। দ্বিতীয় ব্যক্তির কাজ পিন কোড সংগ্রহ করা। প্রতারকরা শিক্ষার্থী-অভিভাকদের নম্বরে বার্তা পাঠানোর পর ফোন করে কথা বলার মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে। একপর্যায়ে উপবৃত্তির যে পরিমাণ টাকা দেয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয় তার সঙ্গে পিন কোডটি যোগ/বিয়োগ করে বলতে বলা হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাকরা তাদের ফাঁদে পড়ে পিন কোডটি যোগ/বিয়োগ করে চক্রটিকে তথ্য দেয়।

চক্রের তৃতীয় সদস্যরা প্রাপ্ত পিন কোডটি অসংখ্য ব্যাংকিং অ্যাপ সংবলিত অপর একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের অ্যাপে লগইন করলে ভেরিফিকেশন কোড যায় শিক্ষার্থী/অভিভাকদের নম্বরে। তখন দ্বিতীয় সদস্য কৌশলে পাসওয়ার্ডটি শিক্ষার্থী/অভিভাকদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়। যখন শিক্ষার্থী/অভিভাকদের নম্বরে কোথাও থেকে ক্যাশ ইন হয়, তাৎক্ষণিকভাবে দলের তৃতীয় সদস্য ওই টাকা তাদের দলনেতার কাছে রেজিস্ট্রেশন করা নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। পরে চক্রের দলনেতা প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত টাকাগুলো বিভিন্ন জেলায় অবস্থানরত তাদের পরিচিতদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

সিআইডির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, দলনেতা ওই টাকাগুলো ক্যাশ আউট করে প্রত্যেক সদস্যকে বিভিন্ন হারে বণ্টন করে দেয়। মূলত দলনেতাই ভুয়া এনআইডিতে রেজিস্ট্রেশন করা সিমকার্ডগুলো সংগ্রহ করে দলের সদস্যদের সরবরাহ করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন