অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা নিচু স্তর থেকে উঁচু স্তরে চলে এসেছি। বিশ্বে আমাদের মান সম্মান আগের চেয়ে বেড়েছে, এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আছি। ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হবো। ২০৪১ সালে একটি উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ হবো। গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর মাস্টার ট্রেইনারগণের চার দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায়’ মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দেশের উন্নয়নের ইতিহাস তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত। এটা আমাদের কমিটমেন্ট। এই কাজটি করতে পারলে জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মুল জায়গায় স্পর্শ করতে পারবো। জাতির প্রধান চাওয়া ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি। জাতির পিতা আমাদের ভৌগলিক মুক্তি দিয়ে গেছেন কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তির কাজ তিনি সম্পন্ন করতে পারেন নি। এই সুযোগ আমরা তাকে দেয়নি। আজকে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিবিএস প্রথমবারের মতো নিজস্ব প্রযুক্তিতে ডিজিটাল জনশুমারি করতে যাচ্ছে। এতে আমরা খুবই আনন্দিত। পরিসংখ্যান যদি ঠিক না থাকে, ডাটা যদি ঠিক না থাকে তাহলে কোনভাবেই অর্থনীতিতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারি না। ডাটা সঠিক না হলে সকল ধারণা ও পরিকল্পনা নষ্ট হবে। আগে শুমারি সঠিকভাবে না হওয়ায় আমাদের অনেক জনগোষ্ঠী আগে না খেয়ে মারা গেছে। আমরা জানি এখন থেকে ২০০ বছর আগে ১৮০৪ সালে পৃথিবীতে প্রথম ১০০ কোটি মানুষের দেখা পায়। কয়েক বছরের মধ্যে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে পৃথিবীতে ছিল ৭০০ কোটি মানুষ। এর মধ্যে অনেক বছর হয়ে গেছে মাত্র ১০০ কোটি মানুষ বেড়ে ৮০০ কোটি হয়েছে। এর কিছু বেশি হতে পারে। এর আগে পৃথিবী এত বছর পাড়ি দিয়েছে জনসংখ্যা ততো বাড়েনি। এর প্রধান কারণ বরফের যুগ। এই যুগ শেষ হওয়ার ফলে মানুষ বাড়ে। এর আগে খাবারের অভাবে মানুষ জন্মাতে পারেনি।
দেশবাসীকে জনশুমারিতে তথ্য দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জনশুমারিতে তথ্য নেয়া হবে। অনেক মনে করতে পারেন শুমারির পরে ট্যাক্স বাড়বে, খাজনা বাড়বে ইত্যাদি অনেকে নানা ধরণের কথা বলতে পারে। কেউ যেন এভাবে ভুল তথ্য দিয়ে প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ব্যহত না করতে না করতে পারে সেই দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এই বিষয়ে সবার কাছে অনুরোধ থাকবে। আপনার আমার সকলের দায়িত্ব এদেশের মানুষকে ভালোবাসা। আমরা সবাই জানি এদেশের মানুষ অনেক সহনশীল ও পরিশ্রমী। সকলে সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখে। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। শুধু নিজের দিকে চিন্তা করলে হবে না। আমাদের আশেপাশের যে প্রতিবেশি আছে তাদের জন্যও খেয়াল রাখতে হবে।
রেমিটেন্স প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, রেমিটেন্সে তথ্য সংগ্রহ করতে প্রথম সার্ভে করা হয়েছিল। তখন রেমিটেন্স আসে ১৪ বিলিয়ন ডলার, রেমিটেন্সে প্রণোদনা দেয়ায়র ফলে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। প্রণোদনা দেয়ার ফলে ১৮ বিলিয়ন থেকে পরবর্তীতে ২৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায় রেমিটেন্স। চলতি বছরে এ বছর এখন পর্যন্ত ২১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে।
এক ভিডিও বার্তায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জনশুমারি প্রয়োজন। এটি কোভিড-১৯ এর কারণে দেড় বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অতি সহজে অল্প সময়ের মধ্যেই এটি সম্পন্ন হবে। মাঠ ও উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে মনিটনিং করতে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিভাগীয় ও জেলা গণনা সমন্বয়কারীরা এই চারদিনে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। আপনারা নিজেদের অধীনস্তদের মধ্যে এই জ্ঞান ছড়িয়ে দেবেন। এটি জাতিসংঘের টেইসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অর্জনে সহায়ক হবে। মন্ত্রী বলেন, দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এখন কেউ খালি গায়ে না খেয়ে ভাঙা ঘরে থাকে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর(বিবিএস) মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্যব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক মো. দিলদার হোসেন ও টেকনিক্যাল টিমের প্রধান ড. দিপংকর রায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন