শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

প্রত্যাবর্তন হোক একমাত্র আল্লাহর জন্য

মুহাম্মদ নাহিদ হোসেন নাঈম | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২২, ১২:১০ এএম

আল্লাহ তাআলা গাফফার-মহা ক্ষমাশীল; তিনি ক্ষমা করতেই ভালোবাসেন। তাই তো ক্ষমার জন্য তিনি রেখেছেন- বিভিন্ন উপলক্ষ; এই উপলক্ষে সেই উপলক্ষে তিনি বান্দাকে ক্ষমা করেন। পৃথিবী-ভর্তি গোনাহও তিনি ক্ষমা করে দেন। প্রয়োজন শুধু ফিরে আসা। তওবার মাধ্যমে তাঁর ক্ষমার দুয়ারে ধরনা দেওয়া। ব্যস, বান্দার ক্ষমা চাইতে দেরি, ক্ষমা করতে দেরি নেই। আর শুধু ক্ষমা নয়, ক্ষমা করে তিনি টেনে নেন রহমতের ছায়ায়; এমনকি কখনো পাপের সংখ্যা পরিবর্তন করে দেন পুণ্য দিয়ে।
বান্দাকে হতে হবে ‘তাওয়াব’-গোনাহ হয়ে গেলেই সাথে সাথে তওবা করতে হবে। তওবা করতে হবে দিল থেকে, অনুশোচনার সাথে। তাহলেই লাভ করা যাবে ‘গাফফার’-এর ক্ষমা। হাদীস শরীফে ইরশাদ- প্রতিটি বনী আদম ‘খাত্তা’-বারংবার পাপকারী। তবে ‘খাইরুল খাত্তাঈন’ অর্থাৎ পাপকারীদের মধ্যে উত্তম হল তারা, যারা ‘তাওয়াবূন’ অর্থাৎ যারা বেশি বেশি তওবা করে; গোনাহ হলেই তওবা করে নেয়। -(জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪৯৯)।
আল্লাহতায়ালার ক্ষমাশীলতার সীমা-পরিসীমা নেই। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে আল্লাহর ক্ষমার মহাসমুদ্রের কথা বার বার উল্লেখিত হয়েছে। মহিম্বান্বিত সত্তা! আমাদের সর্বদা অপরাধ সত্ত্বেও আমাদের দান করেন, ক্ষমা করেন। বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধ করতে থাকে এবং অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করে, আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করতে থাকেন। কারণ ক্ষমা করার ক্ষমতা ও এখতিয়ার একমাত্র আল্লাহর রয়েছে। কারণ তিনিই একমাত্র মালিক সারা জাহানের। অতএব তারই (মালিকের) রয়েছে ক্ষমার মহান গুণ ও ক্ষমতা।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত যে মহানবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন গুনাহ থেকে যে ব্যক্তি তওবা করে সে এমন নিষ্পাপ হয়ে যায় যেন তার কোনো গুনাহই ছিল না (ইবনে মাজাহ্ হাদিস ৪২৫০ বায়হাকী, হাদিস ৭১৭৮ মুনযিরী, হাদিস-৪৫০৪)। অপর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আদম সন্তানের সবাই (কম বেশি) গুনাহগার। আর এ গুনাহগারদের মধ্যে তারাই শ্রেষ্ঠ যারা বেশি বেশি তওবা করে (তিরমিযী হাদিস ২৫০১, ইবনে মাজাহ হাদিস ৪২৫১, ইমাম হাকেম খ- ৪ পৃ. ২৪৪ মুনযিরী হাদিস-৪৫৯৬)।
আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক এমন পাপীর জন্যও তওবার দুয়ার খোলা রেখেছেন যে ব্যক্তি বারবার পাপ করছে। সুতরাং এমন ব্যক্তির জন্য এ পাপ পরিত্যাগপূর্বক কলুষমুক্ত জীবনে পরিবর্তিত করতে কোনো বাধা নেই, কেননা হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, পাপী ব্যক্তির পাপ যদি এতে অধিকও হয় যে, তা আকাশ ছুঁয়ে যায় তবুও সে যখন আল্লাহপাকের কাছে তওবা করে আল্লাহপাক তাকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ)।
অপর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে : হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি শুনেছি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, আল্লাহপাক বলেছেন, হে আদম সন্তান যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং আমার কাছে আশা করতে থাকবে, তোমার যত গুনাহই হোক না কেন আমি তা মাফ করে দেব। আমি কারও পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব (তিরমিযী পৃষ্ঠা-১৯৪, খণ্ড-২)।
বান্দা নিজের পাপ দেখে নিজেই নিরাশ হয়ে যায়- আমি যত পাপ করেছি, আমার ক্ষমা নেই। বান্দার পাপের সীমা আছে, কিন্তু রহমানুর রাহীমের ক্ষমার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। একটি হাদীসে কুদসীতে এরই একটা উদাহরণ টেনেছেন আল্লাহ তাআলা। বান্দা! কত গোনাহ করেছ? তোমার গোনাহ দ্বারা পৃথিবী পূর্ণ হয়ে গেছে, আসমান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে তোমার পাপরাশি! শিরক থেকে মুক্ত হয়ে, তওবা করে ফিরে আস আমার কাছে, সকল পাপ ক্ষমা করে দিব; কোনো পরোয়া করব না!
(হাদীসে কুদসী) আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা বলেছেন- বনী আদম! তুমি যতক্ষণ আমাকে ডাকতে থাকবে, আমার কাছে (ক্ষমার) আশা করতে থাকবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব; কোনো পরোয়া করব না। বনী আদম! তোমার পাপরাশি যদি মেঘমালা পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও আমি ক্ষমা করে দিব; কোনো পরোয়া করব না। বনী আদম! তুমি যদি পৃথিবী-ভর্তি পাপ নিয়ে আমার কাছে আস এবং শিরক থেকে মুক্ত হয়ে আমার সাথে সাক্ষাৎ কর আমি পৃথিবী-ভর্তি ক্ষমা নিয়ে তোমার সাথে সাক্ষাৎ করব। (-জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৪০)
তো যে রব আকাশসম গোনাহ ক্ষমা করে দেন, ক্ষমা করার জন্য বাহানা তৈরি করেন এবং বান্দার তওবায় এত খুশি হন তাঁর বান্দার কি গোনাহ রয়ে যাওয়া সাজে!

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন