বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শিক্ষাঙ্গনে আজব নিয়ম

ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি-প্রক্টর-হল প্রভোস্ট ‘নাচের পুতুল’

ফারুক হোসাইন ও রাহাদ উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০২২, ১২:০৩ এএম

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে সর্বোচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠ। উচ্চ শিক্ষা নিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা, মুক্ত বুদ্ধির চর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। হল পরিচালনার জন্য প্রভোস্টের নেতৃত্বে হল প্রশাসন ও ক্যাম্পাসের জন্য রয়েছেন ভিসি, প্রক্টরিয়াল বডি। মুক্তবুদ্ধির চর্চা কেন্দ্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সকল মত প্রকাশের সুযোগ থাকবে, ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোও সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং নির্বিঘ্নে পালন করবে। এই প্রচলন প্রায় সারাবিশ্বের বিশ্ববিদ্যায়ে দেখা যায়। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে। গত এক যুগ ধরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীরা এখন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে! বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই সংগঠনটির নেতাকর্মীদের ‘নাচের পুতুল’ হয়ে গেছে। তারা যেমনি নাচায় ভিসি-প্রো ভিসি-প্রক্টর তেমনি নাচেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের অন্যান্য পাবকিলক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোন শিক্ষার্থী হলে থাকবে, কে থাকবে না সে সিদ্ধান্ত নেয় ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা। কারা ক্যাম্পাসে আসতে পারবে, কারা পারবে না সেটাও যেন হয়ে গেছে ওই সংগঠনের নেতাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। এমনকি কোন দাবিতে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করবেন, কথা বলবেন সেটিও ঠিক করে দেয় ছাত্রলীগ। মনো:পুত না হলেই শিক্ষার্থী, ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হয় হামলা, হলে হলে রাতভর চলে নির্যাতন, শুরু হয় রড, হকিস্টিক, রামদা, লোহার পাইপ, আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশিয় অস্ত্রের ব্যবহার ও মহড়া। এই হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন কখনো বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা, কখনোবা সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বাদ যাচ্ছে না নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে অস্ত্রের ব্যবহার। ছাত্রসংগঠনগুলোর অভিযোগ, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্যাম্পাসগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ছাত্রলীগ। নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে প্রতিপক্ষ, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ঘটেছে অসংখ্য সংঘর্ষের ঘটনা। এতে আহত হয়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, ঘটেছে অঙ্গহানীর মতো ঘটনা, মৃত্যুবরণ করেছে শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিশুও। এ এক আজব কাণ্ড!

বেশ কিছু দিন ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির আতুরঘর হিসেবে পরিচিত প্রতিষ্ঠানটি। গত মঙ্গলবার শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে যাওয়ার পথে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিসোটা, রড, লোহার পাইপ, হকিস্টিক নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে দুই পক্ষের মধ্যে ঘটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর একদিন পরই গত বৃহস্পতিবার আবারও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে আগে থেকেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাহাড় থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে দোয়েল চত্বর ও হাইকোর্ট এলাকায় সংঘর্ষ বেধে যায় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের। উভয় ঘটনায় অন্তত; অর্ধশতাধিক ছাত্রদল নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গত এক বছরে এই নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর ৫ বার হামলা চালালা ছাত্রলীগ।

আর এই সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকেই ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক ও বর্তমান ছাত্র নেতারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলা বিরোধী মত দমনের বহিঃপ্রকাশ যা শিক্ষাঙ্গনে অনিরাপদ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে মনে করে আট ছাত্র সংগঠন। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী চাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র ফেডারেশন (দুটি অংশ), বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেন, বিভিন্ন সময় ছাত্র সংগঠনগুলো ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা তাদেরকে বার বার সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে প্রমাণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলমান থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের পুতুল প্রশাসনের ভূমিকা পালন করছে।

সাবেক ছাত্র নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আ স ম আবদুর রব বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ওপর সরকারি ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসী হামলা এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা সরকারের জন্য বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনবে। সারা দেশে সরকারের আশ্রিত ‘হেলমেট বাহিনী’ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোকে অস্থিতিশীল করছে, যা খুবই ন্যাক্কারজনক। তিনি বলেন, বিরোধী ছাত্র সংগঠনের ওপর অব্যাহত হামলায় প্রশাসনের নীরব দর্শকের ভূমিকা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করা শিক্ষাঙ্গনকে যেমন অনিরাপদ করে তুলছে; তেমনি রাজনীতিকে চরম সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আরেক সাবেক ছাত্র নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিশ্বজিৎ হত্যা, আবরার হত্যা আপনারা দেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে একের পর এক আঘাত করা হয়েছে। এরকমটা হতে পারে! বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। তার আগেই ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকেরা। যারা শীর্ষ পদে আছেন তারা চান না সম্মেলন হোক, নতুন কমিটি হোক। এখন যারা আছেন তারা আরো বেশিদিন পদে থাকতে চান। আর এই কারণেই তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্যাম্পাসে উত্তাপ তৈরি করছেন। তারা তাদের ক্ষমতা দেখাচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রদল দেশে সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালাচ্ছে তারেক জিয়াকে লাশ উপহার দেয়ার জন্য। তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্যাম্পাসে এসেছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে তাদের প্রতিরোধ করেছে। ছাত্রলীগের মহড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস তৈরি করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই দলমত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাস দমন করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনোরকম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি, শুধু উত্তেজনাকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে একটু। বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে এমন তথ্য আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাইনি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে চাইলে সেই দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় নিবে না বরং যারা করেছে তারাই এই দায়ভার নিবে।

আইনও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে গত বছর ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছে। তারা আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এই সব ঘটনায় ছাত্রলীগের কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। ২০২০ সালে ছাত্রলীগ বনাম ছাত্রলীগ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ১৫টি। তাতে দুইজন নিহত এবং ৬০ জন আহত হয়েছেন। আর অন্য ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা তো আছেই। হল দখল, ক্যান্টিনের নিয়ন্ত্রণ, টেন্ডার ও চাঁদাবাজিও থামেনি।
ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ সাবেক ছাত্র নেতারা বলেন, ২০০৯ সাল থেকেই ছাত্রলীগ সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। যাকে ইচ্ছা হয়েছে মারধর করেছে, হত্যা করেছে, হাতুড়ি পেটা করেছে কিন্তু কোনটির বিচার হয়নি। একারণে প্রতিনিয়ত সংগঠনটি আরও বেপরোয়া হয়েছে।

বিগত ১২ বছরে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা তুলে ধরে সাবেক নেতারা বলেন, ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাবির স্যার এ এফ রহমান হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন মেধাবী ছাত্র আবু বকর। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎ দাসকে নৃশংসভাবে হত্যা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর এমসি কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষা দিয়ে বের হবার পরই খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় হেলমেট পরিহিত সশস্ত্র কিছু যুবক ধানমন্ডি, জিগাতলা এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তরিকুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় হাতুড়ি পেটা করে ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল-মামুন। গতবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে এহসান নামের এক ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। হামলায় এহসানের চোখের কর্নিয়া গুরুতর জখম হয়। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের নৃশংসতার শিকার হয় বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ২০১০ সালে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ইফতারের টোকেন সংঘর্ষ বাধে রাজশাহী ছাত্রলীগের মধ্যে। তার জের ধরে দলটির কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিমকে পিটিয়ে শাহ মখদুম হলের দ্বিতীয় তলা থেকে ফেলে দেয়া হয়। ১০ দিন হাসপাতালে থাকার পর তার মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে জানুয়ারিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়েরকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করে তারই সংগঠনের প্রতিপক্ষরা। ২০১৩ সালে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয় মারা যায় ১২ বছরের শিশু রাব্বি। ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র তাপস সরকার। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী গত ১০ বছরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। যার প্রায় সবগুলোর সাথেই ছাত্রলীগ জড়িত রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টিই ঘটেছে নিজেদের অন্তর্কোন্দলে। সবচেয়ে বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ১০ বছরে সেখানে ৮ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ছাত্রলীগ যেমন একদিকে বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনকে দমন করছে তেমনি সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও বিভিন্নভাবে দমন পীড়ন করছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ তার দখলদারিত্বের পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন যেন গড়ে উঠতে না পারে তার অংশ হিসেবে বিরোধী দল ও মতকে দমনে কাজ করছে। একইসাথে হলগুলোতে গণরুম গেস্টরুমের অত্যাচার নিপীড়ন চলছে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, গত দুই দিনে যা ঘটেছে এবং আমার কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে এই সংঘাতের দায় ছাত্রলীগকেই নিতে হবে। শুনেছি কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু নেতা পদ ধরে রাখার জন্য ছাত্রলীগের সম্মেলন যাতে পিছিয়ে যায় সেজন্য পরিকল্পিতভাবে তারা ক্যাম্পাসে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন। এটা খুবই উদ্বেগজনক।

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ছাত্রলীগ গত ১৩-১৪ বছর ধরে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল করে আছে। এতদিন সংঘাত হয়েছে তাদের নিজেদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সহযোগী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এর আগে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন ছাত্রদলও ক্যাম্পাস দখলে রাখে। দুই সময়েই গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, চলমান অস্থিরতার প্রভাবটা বেশি পড়ে যারা আবাসিক হলগুলোতে থাকে তাদের উপর। এমনিতেই আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীরা অনেক অনাচারের মধ্যে থাকতে হয়। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন যে অনাচারটা করে এই সময়ে তাদের অনেককেই বাধ্য করে লাঠিসোঁটা, হটিস্টিক নিয়ে মারামারি করতে।

চলমান অস্থিরতায় ছাত্রলীগের বক্তব্যের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই ধরনের সংঘর্ষে জড়ায়, এ ধরনের কথাবার্তা আসলে আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে। তাদের বেশিরভাগই জোর করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কেউ কেউ মানসিকভাবেই মাস্তানিটাকে পছন্দ করে। তাই তারা উৎসাহী হয়ে যায়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা আসলে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়। কেননা হলে থাকতে হলে এই মারামারির মধ্যে না থাককে হলের সিটে থাকাটা সমস্যা হয়ে যায়।

চলমান অস্থিরতা নিরসনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবন ও শিক্ষার নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু প্রশাসন কি তার দায়িত্ব পালন করছে? তারা যদি মনে করেন যে তারা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছেন তাহলে এই সমস্যাটা সমাধান করা খুব বেশি কঠিন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
হাসান ২৮ মে, ২০২২, ১১:২২ এএম says : 0
আমার মতে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ভালো হলে সব কিছু এ দেশে ভালো মতো চলতো। তখন এ দেশে কোনো সংঘাত থাকতো না। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ এ দেশের রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল না।
Total Reply(0)
Bijoy ২৮ মে, ২০২২, ১০:০৬ এএম says : 0
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা যদি ইচ্ছা করেন এ সমস্যা সমাধান করবেন তাহলে এই সমস্যাটা সমাধান করা খুব বেশি কঠিন না।
Total Reply(0)
Bijoy ২৮ মে, ২০২২, ১০:০৭ এএম says : 0
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে সহানুভূতি থাকলে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব
Total Reply(0)
Bijoy ২৮ মে, ২০২২, ১০:০৫ এএম says : 0
আমাদের দেশে ছাত্র সংগঠনগুনগুলো দিনে দিনে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ এ দেশের রাজনীতির অবস্থা ভালো না
Total Reply(0)
Bijoy ২৮ মে, ২০২২, ১০:০৬ এএম says : 0
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবন ও শিক্ষার নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু প্রশাসন কি তার দায়িত্ব পালন করছে
Total Reply(0)
Abdullah al mahmud ২৮ মে, ২০২২, ১১:০০ এএম says : 0
উচ্ছ শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের অস্রবাজি। এই ছাত্ররাই একদিন রাষ্ট্রের হত্তা কর্তা হলে দেশের ভবিষত কি হবে।
Total Reply(0)
Sasanka Sekhar Saha ২৮ মে, ২০২২, ২:৫২ এএম says : 0
বাংলাদেশের রাজনীতির অতীত বর্তমান মিলিয়ে দেখে মূল্যায়ন করলে আসল রূপ বেরো
Total Reply(0)
উমেদ আহমদ ২৮ মে, ২০২২, ২:৫২ এএম says : 0
প্রত্যেক মা বাবাদের উচিত শিশু জন্মের পর ৬টি টিকার পাশাপাশি আরও একটি বাড়তি টিকা দেওয়া। সেটি হলো "ছাত্রলীগ নিরোধক টিকা" যাতে আপনাদের ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়।
Total Reply(0)
Yousman Ali ২৮ মে, ২০২২, ১:২০ এএম says : 0
যেমন দল তেমন ছাত্র বদমাশ ..
Total Reply(0)
Mohammed Anik Chowdhury Jabed ২৮ মে, ২০২২, ২:৪৮ এএম says : 0
শিরোনামটা ভালো লাগলো
Total Reply(0)
HM Abdus Sabur ২৮ মে, ২০২২, ২:৪৮ এএম says : 0
নিরোনাম দেখে মনে তৃপ্তি আসছে
Total Reply(0)
Mohammad Younus Fakir ২৮ মে, ২০২২, ২:৫১ এএম says : 0
1990 এর পর থেকে ছাত্র রাজনীতি বলতে আদৌ কিছু নেই এখানে একটা নব্য গণতন্ত্র উদয় হয়েছে সেখানে পালাক্রমে দুই ব্যক্তির শাসন চলছে। এরা নতুন রাজতন্ত্র চালু করেছে তাকে ব্যক্তিতন্ত্র বলা যায়। না আছে বলে গণতন্ত্র না আছে বিশ্ববিদ্যালয় সময় গণতন্ত্র না আছে সংসদে কোথায়? যে ব্যক্তি যখন ক্ষমতায় থাকে তার ইচ্ছানুযায়ী সব হয়!
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন