রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার প্রস্তাব রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের আভাস

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত

হাবিবুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৩৭ পিএম



সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিয়ে আলাদা তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা যেতে পারে : ড. আকবর আলী কমিশন আইন প্রণয়নে সবার জোর দেয়া উচিত : ড.শাহদীন মালিক
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের প্রয়োজন আছে। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিয়ে আলাদা তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা যেতে পারে। সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা যেতে পারে।  আকবর আলী খান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের প্রয়োজন আছে। তবে শুধু নির্বাচনকালীন সরকার থাকলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এর জন্য দলগুলোর রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে হবে। গতকাল এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি চার ধরনের নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব করেন।
সাবেক উপদেষ্টা বলেন, যে সরকার থাকে সেই সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করতে পারে, যেহেতু তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিয়ে আলাদা তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা যেতে পারে। সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা যেতে পারে। সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকার করা যেতে পারে। তিনি আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকরণের সমস্যার কথাও তুলে ধরেন এসময়।
আকবর আলী খান বলেন, নির্বাচন কমিশন একা নির্বাচন পরিচালনা করে না। সরকারের কর্মকর্তাদের নিয়েই নির্বাচন কমিশন ভোট পরিচালনা করে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা ইনকিলাবকে বলেন, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ বা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করার যে প্রস্তাব বিএনপি চেয়ারপার্সন দিয়েছেন এটি ইতিবাচক। বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়টি আমরাও বলে আসছিলাম। সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য, শক্তিশালী, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন। এখন বিএনপি চেয়ারপার্সনও এই প্রস্তাব দিয়েছেন।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন নির্বাচন কমিশন আইন না করার কথা বলে যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেটি বাস্তবায়িত হলে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই এ বিষয়ে একটি আইন প্রণয়নে সবার জোর দেয়া উচিত। বিষয়টি যেহেতু আমাদের সংবিধানে বলা আছে, তাই আইন না করে অন্য কোনো উপায়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে সেই প্রক্রিয়া আবার প্রশ্নœবিদ্ধ হয়ে পড়বে। আর আইন করলে তখন আইনই বলে দেবে কি প্রক্রিয়ায়, কাদেরকে, কিভাবে কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের সুপারিশ করতে হবে। কাকে কেন সুপারিশ করবে সেটাও বলা থাকবে। তাই আমার মনে হয়, এ বিষয়ে একটি আইন করা জরুরি। আর আইন করার ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিতে হবে। যাতে ওই আইন নিয়ে  কোনো প্রশ্ন না ওঠে।
তিনি বলেন, সংবিধানেই নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে বলা আছে। নির্বাচন কমিশন গঠন আইনে তিনটি বিষয় থাকতে হবে। প্রথমত, বাছাই কমিটি, কমিশনারদের ন্যূনতম যোগ্যতা ও কমিশনার বাছাই প্রক্রিয়া।  
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন একটি ভালো প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরাও বিভিন্ন ফোরামে এসব বিষয়ে বলে আসছি। বিতর্ক এড়াতে ও নির্বাচন কমিশনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল এবং জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল এমন রাজনৈতিক দলের মতামত নেয়া জরুরি। তিনি বলেন, দেশে নির্বাচন কমিশন গঠনের কোনো আইন হচ্ছে না। ভারতেও এ ধরনের আইন নেই। তবে ভারতে নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক ওঠে না। এখন আইন করা সম্ভব না হলে বাংলাদেশে সবার অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সর্বসম্মতভাবে একটি বাছাই কমিটি করলে এটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। নির্বাচন কমিশনার সর্বসম্মতভাবে না হলে এটি কর্তৃত্ব পাবে না। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যে প্রস্তাবনা দিয়েছে, একই দাবি অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও। সংবিধান মেনে নির্বাচন কমিশন গঠনের একটি আইন করতে হবে সরকারকে। সেক্ষেত্রে সার্চ কমিটি, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশন গঠনে অন্যদের কি যোগ্যতা হবে তা উল্লেখ থাকতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছি। সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশন এমনভাবে গঠন করতে হবে যে, যারাই এর দায়িত্ব পালন করুক না কেন তাদের হতে হবে অত্যন্ত দক্ষ। দায়িত্বপ্রাপ্তরা যেমন নিরপেক্ষ হবেন একইভাবে মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও থাকতে হবে। এখন আমাদের এ ধরনের লোক খুঁজে বের করার পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে হবে। ছহুল হোসাইন ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন নিয়ে খালেদা জিয়ার দেওয়া এই বক্তব্যকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন। কারণ, এই বক্তব্যের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে বিএনপি যে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক তারই ইঙ্গিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মিলন ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ১:৩৬ এএম says : 0
ড. আকবর আলী স্যারের কথার সাথে আমি একমত।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন