বরিশাল মহানগরী ও সন্নিহিত এলাকায় কির্তনখোলা নদীর ভাঙন রোধে ৩৬০ কোটি টাকার সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে একাধীক প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নদী বন্দর এবং নগরীর উত্তর প্রান্তের চরবাড়ীয়া সহ অপর পাড়ের চরকাউয়া এলাকায় জিও ব্যাগ ও ব্লক ডাম্পিং প্রায় শেষ পর্যায়ে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনে ২৫ লাখ ঘন মিটার পালি অপসারন কাজ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যেই। বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর নিয়ন্ত্রনাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড সহ একাধীক নির্মান প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্যাকেজে নদী ভাঙন রোধ প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শেষ করে এনেছে। এরফলে বরিশাল নদী বন্দর ও এর সন্নিহিত এলাকা সহ বন্দরের অপর পাড়ের চর কাউয়ার বিশাল এলাকা দীর্ঘ দিনের নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃপক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
‘কির্তনখোলা নদীর ভাঙন থেকে বরিশাল মহানগরী ও বন্দর রক্ষা প্রকল্প’টি একাধিক প্যাকেজে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এরমধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড ১৯৫ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকার ভাঙন রোধে পৌনে ৫ লাখ জিও ব্যাগ ডাম্পিং-এর ৯০ ভাগ কাজ শেষ করে ইতোমধ্যে ৯ লাখ ব্লক ভাঙন কবলিত নদীতীরে সন্নিবেশ সম্পন্ন করেছে। এখানে মোট ১২ লাখ সিসি ব্লক সন্নিবেশ করবে খুলনা শিপইয়ার্ড। একইসাথে কির্তনখোলার গতিপথ ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে নিরাপদ এলাকায় ঘুরিয়ে দিতে ২৫ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারন স¤পন্ন হয়েছে। ফলে কির্তনখোলার ভাঙন থেকে চরবাড়িয়া সহ মহানগরীর বেলতলা এলাকা এবং সিটি করপোরেশনের ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ও নিরাপদ হয়েছে। ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩শ মিটার ‘সীট পাইলিং’ও সম্পন্ন হয়েছে।
চড় বাড়িয়ার আরো ১.১৪৪ কিলোমিটার এলাকার ভাঙন রোধে ৬০.৫৩ কোটি টাকা ব্যায়ে দেড় লক্ষাধিক জিও ব্যাগের ওপর ৫ লাখ সিসি ব্লক সন্নিবেশ সম্পন্ন হওয়ায় ঐ বিশাল এলাকার ভাঙন রোধ সম্ভব হয়েছে।
অপরদিকে বরিশাল বন্দরের অপর পাড়ের চর কাউয়া এলাকায় ১.১১৭ কিলোমিটার এলাকায় ৯৭ কোটি টাকা ব্যায়ে ৪টি প্যাকেজে ভাঙন রোধ প্রকল্প বাস্তবায়নও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ভিন্ন ৪টি প্যাকেজে ২ লাখ ৯০ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে তার ওপর ৮লাখ বিভিন্ন সাইজের সিসি ব্লক সন্নিবেশ কাজের ৮০ ভাগেরও বেশী কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। এর ফলে চরকাউয়া এলাকায় দীর্ঘদিনে ভাঙন জনিত প্রকট সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল মহল। গত অর্ধ শতাব্দীরও বেশী সময় ধরে কির্তনখোলার ভাঙনে চরকাউয়ার মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ একাধীক জনপদ কির্তনখোলার গর্ভে চলে গেছে।
বাস্তবায়িত প্রকল্পটির পাশাপাশি প্রস্তাবিত আরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বরিশাল মহানগরী সহ কির্তনখোলার দু পাড়েই স্থায়ী ভাঙন রোধ সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন প্রকৌশলীগন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফ থেকে বরিশাল মহানগরীর চাঁদমারী, জাগুয়া, হিরন নগর ও অপার পাাড়ের চরকাউয়ার আরো ৫.৩১ কিলোমিটার এলাকার ভাঙন রোধে ৫৩৫ কোটি টাকা ব্যায়ে আরো একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনের বিবেচনাধীন বলে জানা গেছে। এ প্রকল্পের আওতায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে সিসি ব্লক সন্নিবেশ ছাড়াও ৩ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং-এর মাধ্যমে পলি অপসারন করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হবে। যা কির্তনখোলার ভাঙন রোধে কার্যকর ভ’মিকা রাখবে বলেও মনে করছেন নদী বিশেষজ্ঞগন।
এদিকে খুলনা শিপইয়ার্ড কতৃপক্ষ ১৯৫ কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ বরিশাল মহানগরীর বেলতলা থেকে শুরু করে চরবাড়িয়ার ভাঙন রোধ প্রকল্পটির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন আগামী জুনের মধ্যেই শেষ করতে সর্বত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে। ভাঙন রোধে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি জিও ব্যাগ এবং সিসি ব্লক ডাম্পিং ও প্লেসমেন্ট সহ ২৫ লাখ ঘন মিটার ড্রেজিং কাজও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে যথাযথ মান নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছে বলে দাবী করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন