চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের আলোচিত চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে পারবেন না। ইতিপূর্বে তার পক্ষে দেয়া হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে তিনি হাইকোর্টের ওই আদেশের ভিত্তিতে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে পারবেন না।
এ তথ্য জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মঈনুল হাসান। সেলিম খানের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। কাজী মঈনুল হাসান আদেশ সম্পর্কে বলেন, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগীয় বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টের রায় বাতিল করার ফলে মেঘনা নদী থেকে সেলিম খানের বালু উত্তোলনের আর কোনো সুযোগ থাকছে না।
এদিকে এ আদেশের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিনউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সেলিম খানের পক্ষে আদালতের কোনো আদেশই ছিলো না Ñমর্মে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট ইতিপূর্বে দেয়া হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে দিয়েছেন।
এর আগে, গত ৪ এপ্রিল চাঁদপুরে মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন চেম্বার জাস্টিস এম. ইনায়েতুর রহিম। উক্ত আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। মেঘনা নদীতে (চাঁদপুর সদর ও হাইমচরে অবস্থিত ২১টি মৌজা এলাকায়) জনস্বার্থে নিজ খরচে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করতে নির্দেশনা চেয়ে ২০১৫ সালে রিট করেছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান। ওই রিটে ২০১৮ সালের ৫ এপ্রির হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে চাঁদপুরের ২১টি মৌজায় অবস্থিত মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। চলতি বছর ১৫ মার্চ হাইকোর্টের দেয়া ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে সরকারপক্ষ লিভ টু আপিল করে।
প্রসঙ্গত, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণে সরকারের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টার ঘটনায় আলোচনায় উঠে আসেন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান। তিনি চাঁদপুরের একজন মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় থেকে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, বালু উত্তোলনসহ নানাবিধ অপকর্ম করে আসছিলেন।
জনস্বার্থে নৌপথ সচল করার কথা বলে সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু তুলতেন সেলিম খান। ছোট-বড় প্রতিটি ড্রেজার দিয়ে দিনে ২০ থেকে ৪০ হাজার ঘনফুট বালু ও মাটি তুলেছেন তিনি। প্রতিটি ড্রেজারে ২০ হাজার ঘনফুট হিসেবে ২শ’ ড্রেজারে দিনে বালু তুলতেন ৪০ লাখ ঘনফুট। মাসে তোলা হয় ১২ কোটি ঘনফুট। বছরে তুলতেন ১৪৪ কোটি ঘনফুট বালু। ড্রেজার ও বালুর ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে ওঠানো প্রতি ঘনফুট বালু বিক্রি হয়েছে আড়াই থেকে তিন টাকা। আড়াই টাকা হিসাবে দুই নদী থেকে দিনে ১ কোটি টাকার বালু বিক্রি হয়। এ হিসেবে সেলিম খান মাসে বালু বিক্রি করেছেন ৩০ কোটি টাকার। বছরে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৬০ কোটি টাকায়। ২০১৫ সাল থেকে উত্তোলনকৃত বালু থেকে সরকারি কোষাগারে কোনো অর্থই জমা হতো না। কারণ সেলিম খান যেখান থেকে বালু উত্তোলন করতেন সেটি সরকার স্বীকৃত কোনো বালু মহাল নয়। গত ৮ বছরে কমবেশী ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা সেলিম খান বালু বিক্রি বাবদ হাতিয়েছেন। চাঁদপুর সদরের ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খানের অবৈধ উপায়ে অর্জিত অন্তত হাজার কোটি টাকার সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধান পর্যায়ে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন