ইউক্রেন ইস্যুতে ঘরে-বাইরে সমালোচিত হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এবার তার বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খুললেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ইউক্রেনে সাহায্য পাঠানোর বদলে স্কুলের নিরাপত্তার জন্য অর্থায়নকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী ও ধর্মবিদ্বেষী হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের পাঁচ মাসেই বন্দুক হামলা হয়েছে ২৭টি স্কুলে। শুধু আগ্নেয়াস্ত্রের কারণেই দেশটিতে বছরে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ নিহত হন। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন নিহত হন প্রায় ১০০ জন। গবেষণা বলছে, আমেরিকায় জনসংখ্যার চেয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা বেশি। বেসরকারি সংস্থা গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের (জিভিএ) বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, এ বছর এখন পর্যন্ত নির্বিচারে গুলিবর্ষণের অন্তত ২১২টি ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে আয়োজিত হওয়া এক সম্মেলনে ট্রাম্প মন্তব্য করেন যে, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনে বিলিয়ন ডলার সাহায্য হিসেবে পাঠাতে পারে, তাহলে দেশের মাটিতে আমাদের শিশুদের নিরাপদ রাখতে আমাদের যে কোন কিছু করতে পারা উচিৎ।’ হিউস্টনে আগ্নেয়াস্ত্রের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সংগঠন ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের চলমান সম্মেলনে এই মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
টেক্সাসের ইউভালডে শহরের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক কিশোরের গুলিতে ১৯টি শিশু মারা যাওয়ার তিনদিন পর এমন বক্তব্য দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট। ‘ইরাক ও আফগানিস্তানে আমরা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছি এবং তার বিনিময়ে কিছু পাইনি। পৃথিবীর বাকি দেশ গঠন করার আগে আমাদের নিজেদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ স্কুল গঠন করা উচিৎ’, বলেন ট্রাম্প।
এ মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ইউক্রেনে প্রায় চার হাজার কোটি ডলার (প্রায় ৩১০০ কোটি পাউন্ড) সেনা সহায়তা পাঠানোর পক্ষে ভোট দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরু করার পর যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৪০০ কোটি ডলার সহায়তা পাঠিয়েছে ইউক্রেনে।
তবে ট্রাম্প আগ্নেয়াস্ত্র আইন কঠোর করার বিরোধিতা করেছেন। তার মতে, ‘অশুভ’ শক্তির বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে সভ্য আমেরিকানদের আগ্নেয়াস্ত্রের অনুমতি দেয়া প্রয়োজন। স্কুলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতি স্কুলে অন্তত একজন সশস্ত্র পুলিশ অফিসার রাখা এবং মেটাল ডিটেক্টরসহ কেবলমাত্র একটি প্রবেশপথ রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।
ট্রাম্প তার বক্তব্যে বলেন, ‘অস্ত্র হাতে একজন মন্দ লোককে থামানোর একমাত্র পথ হচ্ছে, অস্ত্র হাতে একজন ভালো মানুষ।’ তিনি আরো বলেন যে, অস্ত্র ব্যবহারের ওপর কড়াকড়ি আরোপ না করে বন্দুকধারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর দেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
নিজের বক্তব্যে টেক্সাসের ইউভালডের স্কুলে হওয়া গুলির ঘটনায় নিহতদের নাম নেয়ার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘অশুভ শক্তির উপস্থিতির কারণে আইন মেনে চলা নাগরিকদের অস্ত্রধারণ যৌক্তিক, তাদের নিরস্ত্র করা নয়।’
পঞ্চাশ লাখ সদস্যের ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক এই সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে টেক্সাসের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে সাড়ে চারশো কিলোমিটার দুরে। এই সম্মেলনে অংশ নেয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে অনুষ্ঠানে অংশ নেননি বেশ কয়েকজন বক্তা ও সঙ্গীতশিল্পী - যার মধ্যে রয়েছেন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট, সেনেটর জন কর্নিন ও টেক্সাসে হওয়া হামলায় ব্যবহৃত রাইফেলের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের ভেন্যুর বাইরে শত শত বিক্ষোভকারী ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাদের হাতের ব্যানারে লেখা ছিল ‘এনআরএ শিশু হত্যা করে’, ‘শিশুদের রক্ষা কর, অস্ত্র নয়।’ বিক্ষোভকারীরা ক্রুশ এবং নিহত শিশুদের ছবিও প্রদর্শন করে। সূত্র : ইউকে স্ট্যান্ডার্ড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন