কুষ্টিয়ায় আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠা দখলবাজ চক্র ম্যানেজ ফর্মুলায় সর্বশেষ শত কোটি টাকা মূল্যের সরকারি ভূ-সম্পত্তি কুক্ষিগত করার অভিযোগ উঠেছে। আইনের ফাঁক গলিয়ে সরকারের ভূমি সংশ্লিষ্ট দফতরের কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজসে এসব হচ্ছে বলে দাবি করছেন দখলবাজ চক্রের সাথে জড়িতরা।
কুষ্টিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম মো. তৈমুর জানান, চক্রটি জালিয়াতি করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেছে। দখলবাজরা ৫০ বছর পূর্বে মৃত নিঃসন্তান এক নারীর ওয়ারিশ সেজে আদালতে জাল কাগজপত্র দাখিল করে স্ব-পক্ষে রায় নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবন এবং সদ্য সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয়ে নির্মিত পানি পরীক্ষাগারে সন্ত্রাসী পাহারা বসিয়ে কুক্ষিগত করে অবরুদ্ধ করেছে।
কুষ্টিয়ার দেওয়ানি আদালতের সরকারি কৌসুলি জিপি আ ম স আখতারুজ্জামান মাসুমের অভিযোগ, শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রকাশ্য দিবালোকে ওই জালিয়াত চক্র সন্ত্রাসী কায়দায় সরকারি অবকাঠামো ভেঙে টিনের বেড়া দিয়ে চারিদিকে বাউন্ডারি করে অবরুদ্ধ করেছে। এমন ঘটনায় হতবাক হয়েছে আশপাশের প্রতিবেশী ও সচেতন মহল। প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল, জনপ্রতিনিধি, আইনজীবী, কতিপয় পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন পেশার একদল অসৎ লোক জোটবদ্ধ হয়ে এই জালিয়াতি করে কুষ্টিয়া শহরের উচ্চমূল্যের ভূসম্পত্তি টার্গেট করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। এরা চাতুরতার সাথে কল্পিত মামলা সৃষ্টি করে ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে আদালতের মাধ্যমে এই কাজ করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এদের রুখতে শুধু আইন নয়, দরকার সামাজিক প্রতিরোধ। তাদের এই জালিয়াতির বিষয়টি আদালতের নজরে এনে তাদের পক্ষে দেয়া রায় বাতিলের আবেদন করেছি। বিজ্ঞ আদালত আবেদন আমলে নিয়ে ওই জালিয়াত চক্রের সাথে যুক্ত হয়ে সরকারি সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ভুয়া মামলার বাদীর বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না, কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার ৫নং মাছপাড়া ইউনিয়নের বরুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা নিঃসন্তান দম্পতি মৃত জনৈক সুধীর কুমার দাসের স্ত্রী সুপ্রতিবালা দাসের রেখে যাওয়া সম্পত্তির বৈধ ওয়ারিশ দাবির স্ব-পক্ষে ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত নথিজাত নয় এমন তথ্য সংযোজনসহ উক্ত এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য সনৎ কুমারের সহায়তায় সুপ্রতিবালা দাসের দেবর সুপ্রভাত দাসের দুই ছেলে সুকুমার দাস ও অপুর্ব কুমার দাস কাগজপত্র তৈরি করে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দেওয়ানি আদালতে মামলা করেন। মামলার এজাহারে নালিশি ভূ-সম্পত্তির উপর ৫০ বছর পূর্ব হতেই সরকারি ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব উল্লেখ না করে ওই সম্পত্তিটি ‘খ’ তফসিলভুক্ত (অর্পিত সম্পত্তি) হিসেবে দুই দাগে মোট ৬৬ শতাংশ জমিসহ উপরিস্থ সরকারি ভবন নিজেদের বাড়িঘর এবং দখলদারিত্ব বহাল আছে উল্লেখ করেন। যদিও এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিবেদক সুপ্রভাত দাসের গ্রাম পাংশা উপজেলার বরুড়িয়ার বাড়িতে গেলে সাংবাদিক পরিচয় জানার পর বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং অন্য একজনের মোবাইল ফোনে বলেন মুন্নার সাথে কথা বলতে।
কুষ্টিয়া শহরের জিরো পয়েন্টে অবস্থিত সদর উপজেলার মজমপুর মৌজাস্থ শতকোটি টাকা মূল্যমানের উক্ত নালিশি সম্পত্তির চৌহদ্দিতে এসএ দাগ নং ৬৫৩ থেকে ৬৬০নং পর্যন্ত এসএ রেকর্ডিয় ৮টি দাগে প্রায় সাড়ে ৩ একর জমি ১৯৬১-৬২ অর্থবছরে ৬৯নং এলএ কেসের মাধ্যমে সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা আদালতকে নিশ্চিত করেছেন। উল্লেখিত তফসিলভুক্ত জমির চৌহদ্দির মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন কোন ভূ-সম্পত্তি বা অবকাঠামো থাকার প্রশ্নই উঠে না বলে দাবি করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সিরাজুল ইসলাম।
প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর অবরুদ্ধ ও দখলের সত্যতা স্বীকার করে স্থানীয় ১নং পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাঈমুল ইসলাম জানান, ঘটনার দিন আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে কিছু লোকজন এসে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবনের দেয়াল ভাঙচুর করে টিনের বেড়া দিয়েছে। তাৎক্ষণাৎ আমি আমার লোকজন নিয়ে সেটা প্রতিরোধ করি। পরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করি।
ঘটনার সাথে যারা জড়িত রাজু মেম্বার এবং মুন্না জানান, এই কাজটি করতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাসদের এক নেতা ও আওয়ামী লীগের এক নেতা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন